আ.লীগে যোগ দিচ্ছেন সুলতান মনসুর?

0
912
blank

নিউজ ডেস্কঃ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

ভোট ডাকাতির অভিযোগে ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না। সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই শপথ নিয়েছেন সুলতান মনসুর। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদে স্পিকারের কার্যালয়ে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।
এদিকে, শপথ গ্রহণ করায় গণফোরাম থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বহিষ্কারের পর বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন রটেছে, সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন! যদিও তিনি এর আগেও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সুলতান মনসুর একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আজন্ম আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ কর্মী এবং বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। এই কথা বার বার বলে আসছি আমি। আমার রাজনৈতিক আদর্শ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী কঠিন সময়ে চার বছর ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে দিনরাত কাটিয়েছি আমি। খেয়ে না খেয়ে, ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছি।
সুলতান মনসুর আরো বলেন, ‘নির্বাচনের আগেও আমি বলেছি, নির্বাচন করব ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুর’। শুধু প্রতীকটা ছিল আমার ধানের শীষ। নির্বাচনী প্রচারণায় গায়ে মুজিব কোর্ট যেমন ছিল এখনো তেমন আছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় হাজার হাজার ভোটারের সামনে মাইকে বলেছি, আমি আওয়ামী লীগের কর্মী, আমার প্রতীক ধানের শীষ। অতএব আমার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।’
এছাড়া এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি আবারও আওয়ামী লীগে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে সুলতান মনসুর বলেছিলেন, আমি অন্য কোনো দলে জয়েন করি নাই। আমি কখনও আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসিনি, বহিষ্কৃতও হইনি।
বৃহস্পতিবার শপথ নেয়ার পর সংসদে যোগ দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি। এ সময় তিনি সংসদকে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হইনি।’ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
সংসদে সুলতান মনসুর বলেন,‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কোনো আপস হতে পারে না। বাংলাদেশ জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু এক নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর পথই হচ্ছে সঠিক পথ, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য। জনগণই ক্ষমতার উৎস্য, জনগণ ক্ষমতার উৎস হলে বাংলাদেশে জনগণই শেষ কথা।’
এদিকে স্পিকারের আসনের বাম পাশে বিরোধী দলের আসনের দ্বিতীয় সারিতে সুলতান মনসুরকে আসন দেওয়া হয়।
এছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাকি ৭ জনকে শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাব শপথ নিয়ে ন্যায্য দাবি ও সমস্যা নিয়ে তারাও সংসদের কথা বলুক। তাদের বক্তব্য সংসদের ভেতরে বাইরে আলোচনা হতে পারে। আওয়াজ উঠতে পারে।’
এদিকে শপথ নেয়ায় গণফোরাম থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
এর আগে গত ২ মার্চ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেন গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান। ৭ মার্চ শপথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা।
সে অনুযায়ী সংসদ সচিবালয় বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শপথ নিলেও শেষ মুহূর্তে পিছু হটেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের আরেক সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ভোট করে জয়ী হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৮টি আসন পায়।