ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন

0
954
blank
blank

শিব্বির আহমদ ওসমানী: বাংলাদেশে এবার প্রথম দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার মোট ছয় ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭৩৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। পরে আরও পাঁচ ধাপে সারা দেশের অবশিষ্ট সাড়ে তিন হাজার ইউপি’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ৬৮৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৩১ মার্চ।
নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দল ও সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরকার মনোনীত প্রার্থীদের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিশেষ করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, সরকার মনোনীত প্রার্থীদের বাধার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে এবং কমিশনের স্থানীয় পর্যায়ে অনেক অভিযোগ, পড়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মকে গায়ে মাখছে না নির্বাচন কমিশন। প্রায় অর্ধশতাধিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে মতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকাকেও ‘ব্যতিক্রম’ বা ‘নজিরবিহীন’ মনে করছে না কমিশন। প্রার্থীরাও সরাসরি নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা একে আদৌ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে করছেন না ভুক্তভোগীরা।
বিএনপির অভিযোগ সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি ও নতুন করে মামলায় জড়ানোর আশঙ্কায় অনেকে প্রার্থী হতে রাজি হননি। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারি দলের সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও পুলিশি হয়রানির কারণে বিএনপির পার্থী ও সমর্থকেরা নির্বাচনে ভোট দেয়া দূরের কথা বাড়িতেই থাকতে পারছেনা। জামায়াতের পক্ষ থেকেও এক বিবৃতির মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়েছে প্রথম ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রায় শতাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেনি, যা অতীতে দেখা যায়নি। যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়িঘরে হামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন সরকারের এ অন্যায় কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফলে উৎসব মুখর নির্বাচন তো দূরের কথা, নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অনেকেই মহাবিপদে পড়েছেন। সরকার যেভাবে চাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সেভাবেই নির্বাচন পরিচালনা করছে। মেরুদণ্ডহীন এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন যে সম্ভব নয়, তা বলার অপো রাখে না।
আরো অভিযোগ রয়েছে, মনোনয়ন পত্র দাখিলে বাধা ও ছিনতাই করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। অপর প্রার্থীদের পুলিশ ও সরকারি দলের নেতারা চাপ দিচ্ছেন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য। ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এ রকম একটা বিশৃঙ্খল ও সন্ত্রাস জোরজবরদস্তিমূলক অবস্থা চলছে। বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলা হয়েছে, ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্যাডার ও পুলিশের তাণ্ডব চলছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনকে নির্বিকার বলে মনে হচ্ছে।
দেশের তৃণমুল পর্যায়ের উন্নয়নের শেষ স্তর হচ্ছে গ্রাম ও ইউনিয়নগুলো। ইউপি হচ্ছে স্থানীয় সরকারের তৃণমূল স্তর। এ তৃণমূলে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও তদারকি করে থাকে ইউপি তথা ইউপির চেয়ারম্যান ও তার পরিষদ সদস্যরা। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদেরকে এ কাজের যেমন দায়িত্ব পালন করতে হয় তেমনি জনগণ ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। নির্বাচনে ভোট চাওয়ার মাধ্যমে প্রার্থীদের মধ্যে একটা জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া গড়ে উঠে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের যদি ভোট না চেয়ে বা ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ছাড়াই নির্বাচিত হওয়ার একটি অবৈধ ও সন্ত্রাসী কায়দা তৈরি হয় তাহলে দেশের সর্বশেষ এ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাটাও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমাদের পরামর্শ, নির্বাচন কমিশনকে সব দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।