একদিকে গণগ্রেপ্তার, অন্যদিকে পৌর নির্বাচন

0
744
blank

নিউজ ডেস্ক: দুই বিদেশি হত্যা, রাজধানীর উত্তরায় বাসায় ঢুকে তাইওয়ান দম্পতির ওপর হামলা, পুলিশ, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যা, হোসনি দালানে বোমা হামলার বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে। প্রশাসন দফায় দফায় বৈঠক করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সারাদেশে শুরু হয়েছে পুলিশের সাড়াশি অভিযান। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে দেশব্যাপি গ্রেপ্তার হয়েছে ৭৮৯ জন। আর এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। একদিকে গণগ্রেপ্তার চলছে অন্যদিকে পৌর নির্বাচন নিয়ে দোটানায় পড়েছে বিএনপি জোট। তারা এখন দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সিন্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না- এই বক্তব্যে অনড় থেকেও এবারের পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের ফল যাই হোক, এর মাধ্যমে দলের প্রায় স্থবির হয়ে পড়া কার্যক্রম কিছুটা হলেও চাঙ্গা হবে বলে ধারণা কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের।

আর নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা সংসদ নির্বাচনে কোনো দল পর পর দুইবার অংশ না নিলে সে দলের নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নিতে পারে নির্বাচন কমিশন।

শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে সুযোগ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। খুব সম্ভব আমরা নির্বাচনে যাব। বেগম জিয়া দেশে ফেরার পর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে শনিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, যে সব পৌরসভায় বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে, সে সব এলাকায় প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ, আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার আর সময় পাওয়া যাবে না।

নাশকতার আশঙ্কায় সারা দেশে শুরু হয়েছে যৌথবাহিনীর অভিযান। শুক্রবার রাত থেকে শুরু করে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১০ জেলায় গ্রেপ্তার করা হয় ৭৯৮ জনকে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর সংখ্যা ১৬৬ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৪৮১, বগুড়ায় ৭৫, ফরিদপুরে ৭৩, যশোরে ৬১, সাতক্ষীরায় ৫৩, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৮, ফেনীতে ১৩, ঝিনাইদহে ৫, নোয়াখালীতে ৫, রাজশাহীতে ৩ ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফরিদপুর: ফরিদপুরে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে বিভিন্ন মামলার ১৬ জন আসামি, বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীসহ ৭৩ জনকে আটক করা হয়। গতকাল আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত এ অভিযান চলে বলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।

ঝিনাইদহ: সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াতের পাঁচ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। ৬ নভেম্বর রাতভর এ অভিযান চালানো হয়।

যশোর: জেলার আট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ কর্মীসহ ৬১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ নভেম্বর রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নোয়াখালী : চাটখিল উপজেলা জামায়াতের আমির সাইফুল্লাহকে গতকাল ভোরে চাটখিল বাজার এলাকার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। এছাড়া ৬ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে সেনবাগ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী।

চট্টগ্রাম: বিভিন্ন উপজেলায় ৬ নভেম্বর রাতভর বিশেষ অভিযানে জামায়াত-শিবিরের ২৪ কর্মীসহ ৪৮১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সাতক্ষীরা: নাশকতার আশঙ্কায় সাতক্ষীরার আট উপজেলায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৫৩ কর্মীকে আটক করে যৌথবাহিনী। ৭ নভেম্বর রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়।

বগুড়া: আগামী ১২ নভেম্বর বগুড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে  জেলা পুলিশ। অভিযানের প্রথম দিনেই শুক্রবার গভীর রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ২০ নেতাকর্মীসহ ৭৫ জনকে।

ফুলবাড়িয়া: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা জামায়াতের রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সদরের আল-হেরা একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মজিদকে শনিবার বিকালে পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসা থেকে থানাপুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় শুক্রবার রাতে  থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে জামায়াতের পৌর আমির ও শিবিরের সাবেক সভাপতিসহ জামায়াত-বিএনপির ২৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের তিন কর্মীকে  শুক্রবার রাতে বিনোদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নাশকতার মামলায় তাদের গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া বাঘায় উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল লতিফসহ দুজনকে শনিবার দুপুরে আটক করে পুলিশ।

ফেনী: নাশকতার আশংকায় জেলা জামায়াতের সহকারী সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ জনকে আটক করে পুলিশ। শনিবার রাতে জেলা জামায়াতের অফিসসহ বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।