একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে: প্রধানমন্ত্রী

0
991
blank

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, এ বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে।
জনগণের মন জয় করার জন্য সরকারের উন্নয়ন-সফলতা এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসসহ সব অপকর্ম তুলে ধরতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। বৈঠকে দলীয় এমপিদের উদ্দেশে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কেউ নির্বাচনী এলাকায় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। কে কী করছেন, কার কী অবস্থা তার সব রিপোর্টই আমার কাছে আছে। জনগণ থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হলে পার পাবেন না। তাই জনগণের কাছে যান, ভালো কাজের মাধ্যমে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন।
বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সম্পাদক করা হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, আগে দলের সাধারণ সম্পাদকই সংসদীয় দলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তার একার পক্ষে এতো দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। এ কারণেই নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে এবার সংসদীয় দলের সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। এরা মানুষ মারে, পুলিশ মারে, নাশকতা করে। বিএনপি সন্ত্রাসী দল তা কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে। তারা অতীতে যে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়েছে তা আদালতের রায়ে প্রমাণ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই আগুনসন্ত্রাস, পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞসহ সকল অপকর্মের বিষয়টি জনগণের সামনে বেশি করে তুলে ধরে এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক করতে হবে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে। নির্বাচনে একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা করতে হতে পারে। সবাইকে সেরকম প্রস্তুতি রাখতে হবে। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দলকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন-সফলতাগুলো জনগণের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
নির্বাচনী এলাকায় দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব-বিভেদ দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নৈতিক দায়িত্ব। এলাকায় গিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি যেখানে যেখানে সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত নিরসণ করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সময় এখনো অনেক আছে। এই সময়ের মধ্যে সব ধরনের কোন্দল-বিভেদ মিটিয়ে ফেলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতের রায়েই প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আর দুর্নীতি হওয়ার কোনো সুযোগও ছিল না। আমরা বিশ্ব ও জাতির সামনে প্রমাণ করতে পেরেছি, এতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পদ্মা সেতু আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ হয়তো কিছুটা পিছিয়েছে। এতোদিন হয়তো সেতুটি নির্মাণ হয়ে তার ওপর দিয়ে গাড়ি যেত। তবে বিলম্ব হলেও এ ঘটনায় জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সংসদ সদস্যদের বেশকিছু নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। সব এমপিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কী কী উন্নয়ন করেছেন, উন্নয়নমূলক কাজের কী কী বাকি রয়েছে, আর কী করলে জনগণের মন জয় করা যাবে- তা একটি রিপোর্ট আকারে তৈরি করে সংসদীয় দলের সম্পাদকের কাছে জমা দেবেন। আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা, নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়গুলোও বুকলেট আকারে তৈরি করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তা পৌঁছে দিয়ে এদের ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন- তোফায়েল আহমেদ, শাজাহান খান, জাহিদ মালেক স্বপন, হাছান মাহমুদ, মুন্নুজান সুফিয়ান, মনিরুল ইসলাম, এ কে এম শামীম ওসমান, শামসুল হক চৌধুরী, গোলাম খন্দকার প্রিন্স প্রমুখ।