এরশাদের জোট গঠনের হাঁকডাকে সাড়া নেই !

0
989
blank
blank

ছলিম উল্লাহ মেজবাহ: জোট গঠনের হাঁকডাক দিলেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আহ্বানে সাড়া দেয় না কোনো রাজনৈতিক দল। বিগত নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী জোট গঠন করা হবে তখন জানানো হলেও বাস্তবে এর ফলাফল দেখা গেছে শূন্য। ঠিক একইভাবে এবারো আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলটির চেয়ারম্যান জোট গঠনের হাঁকডাক দিচ্ছেন প্রতিটি জনসভায়, মিটিং ও দলের ঘরোয়া সভায়।
এদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জোট গঠনের বিষয়ে দল ও দলের বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা চললেও শেষ পর্যন্ত তিনি কতটুকু সফল হবেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না পার্টির শীর্ষ নেতারা। তবে ২০ দলীয় জোটকে টেক্কা দিতে একটি জোট গঠনের জন্য অনেক আগ থেকে তোড়জোড় শুরু করেন জাপা চেয়ারম্যান। সেটি তিনি এখনো বলবৎ রেখেছেন। এ বিষয়ে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশ ও জনগণের কল্যাণে আগামী নির্বাচনে পল্লীবন্ধু এরশাদ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তার নেতৃত্বে আগামীতে দেশের মাটিতে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সে জন্য আমরা চাচ্ছি একটি জোট গঠনের মাধ্যমে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের নেতৃত্বে শক্তিশালী সরকার নির্বাচিত হলে জনগণ সুফল ভোগ করবে। কবে নাগাদ জোট গঠন হবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই তা আত্মপ্রকাশ করবে। এর বাইরে আর কিছুই বলতে চাননি তিনি।
জাপা চেয়ারম্যান ১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৯৯৮ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের আহ্বান করলে দুয়েকটি ইসলামী দল সাড়া দেন এরশাদকে। পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর এরশাদকে ত্যাগ করে চলে যান চরমোনাই পীরের তৎকালীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। তার পর থেকে এরশাদের জোট ভেঙে যায়। এখন পর্যন্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি জোট গঠনের আলোর মুখ দেখেননি। তিনি শুধু মুখে মুখে আওয়াজ দিয়ে গেছেন ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের আগে। বাস্তবে তাকে কোনো জোট গঠনের প্রক্রিয়াতে এগোতে দেখা যায়নি। বর্তমানেও এ জোট গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন এরশাদ।
সম্প্রতি কয়েকটি অনিবন্ধিত ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ। বৈঠকে দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে দেশের সার্বিক বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করছেন। এ বৈঠকটির পর থেকে জোট গঠনের আলোচনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নিবন্ধিত দল ও দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এবং জাপা চেয়ারম্যানের সঙ্গে সরাসরি বেঠকের খবর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ইতিমধ্যে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটের আগামীতে সরকার গঠন করা। সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ১০ থেকে ১২টি দল নিয়ে আমাদের জোট হতে পারে। এখনই দলগুলোর নাম প্রকাশ করা ঠিক হবে না। তবে এরই মধ্যে কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে কথা হয়েছে। আরো কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা হবে।
অন্যদিকে এরশাদের নেতৃত্বে আগামীতে কোনো জোটের যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়েছেন কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল। দলগুলোর কয়েক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে আন্দোলন করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এ ছাড়া তারা আরো বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছুই নেই। কিন্তু এরশাদের নেতৃত্বে কোনো রাজনেতিক দল জোট গঠনে সহযোগিতা করবে না। কারণ কী জানতে চাওয়া হলে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, তিনি সকালে যে কথা বলেন, বিকেলে সেই কথা ঠিক থাকে না। এ জন্য তার সঙ্গে জোট গঠন করলে সমমনা দলগুলোর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
এদিকে বিগত কয়েকটি দলীয় সভায় প্রকাশ্যে জোট গঠনের ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর জাপার দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। তিনি মানবকণ্ঠকে বলেন, এরশাদের নেতৃত্বে একটি নতুন নির্বাচনী জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, উদার গণতান্ত্রিক, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী, সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থাকবে। শোনা যাচ্ছে কিছু ভুঁইফোড় সংগঠন নিয়ে জোট হচ্ছে- এমন কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো প্যাডসর্বস্ব, অস্তিত্বহীন রাজনৈতিক দল এই জোটে থাকবে না।