এসএসসি পাস ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেনি

0
514
blank
stu
blank

মোশতাক আহমেদ: মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেও এ বছর ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৮ জন শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। এই সংখ্যাটি মোট পাস করা শিক্ষার্থীর প্রায় ৯ শতাংশ।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনের নির্ধারিত সময় ছিল। তবে যারা টাকা জমা দিয়েও নির্ধারিত সময়ে আবেদনের সুযোগ পায়নি, শুধু তারা আজ শনিবারও আবেদন জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট মনজুরুল কবীর। তিনি বলেন, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ১৩ লাখ ৫ হাজার ২২৪ জন শিক্ষার্থী।

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছিল ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন।

মনজুরুল কবীর বলেন, আবেদনকারী ১৩ লাখ হলেও তারা মোট আবেদন করেছে ৬২ লাখ ১১ হাজার ৩৩৪টি। এই হিসাবে একেকজন শিক্ষার্থী গড়ে প্রায় পাঁচটি করে আবেদন করেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারও ভর্তি কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থীর আবেদন না করা প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আশফাকুস সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, এটা ঠিক যে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে যায়। কিছু আবার কারিগরির ডিপ্লোমা কোর্সেও ভর্তি হয়। তবে যারা প্রথম দফায় আবেদন করতে পারেনি, তারা ইচ্ছা করলে পরের দফায় আবেদন করতে পারবে। গত বছরও লাখখানেক এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী আবেদন করেনি।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, মাধ্যমিকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে যায়। এই স্তরে ৩৮ দশমিক ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসির দ্বার পার হতে পারে না। উচ্চমাধ্যমিকে এই ঝরে পড়ার হার অনেকটা কম, ওই স্তরে এ হার ২০ দশমিক ০৮। প্রাথমিকে এই হার সবচেয়ে কম, ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।

এসএসসি পাস করার পরও ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবেদন না করার কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষা অধিকার কর্মী এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, কেন শিক্ষার্থীরা আবেদন করছে না—‘এ সম্পর্কে আমাদের কাছে গবেষণালব্ধ তথ্য নেই। তবে এটিকে আমি একধরনের ঝরে পড়াই বলব।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এসব ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই মেয়ে। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষায় বিনিয়োগ অনেক। এখানে বেসরকারি খাতই প্রধান। এর পাশাপাশি আছে মেয়েদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি। তাই শিক্ষায় বিনিয়োগ বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অভিভাবকেরা হয়তো আর আগ্রহী হন না।’

এবারের নীতিমালা অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থী অনলাইন ও এসএমএসে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। এখন এই আবেদন থেকে শিক্ষার্থীর পছন্দক্রম ও যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির জন্য একটি কলেজ ঠিক করে দেবে শিক্ষা বোর্ড। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ৫ জুন। এরপর আরও দুই দফায় আবেদন গ্রহণ করা হবে।

গতবার একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল, তার সব কটির মেধাক্রম করে দিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। সেখান থেকে আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করেছিল কলেজগুলো। এতে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টির ফলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছিল। বিশেষ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।

নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম দফায় ১০টি কলেজেও যদি কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ না পায়, তাহলে আরও দুই দফায় সে আবেদনের সুযোগ পাবে। নির্ধারিত সময়ে ভর্তির কাজ শেষ করে আগামী ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে।