কিছু সংস্থার জন্য রিফিউজি পালাটাই ব্যবসা

0
486
blank
blank

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: ঢাকা: কিছু সংস্থা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো কোনো সংস্থার জন্য রিফিউজি পালাটাই যেন একটা ব্যবসা।

সোমবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বলছি, সাড়া পাচ্ছি, তবে খুব বেশি কার্যকর দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় যেন রিফিউজি পালতে পারলে, এই পালাটাই হচ্ছে একটা ব্যবসা। মনে হয় যেন রিফিউজি পালাটাই একটা ব্যবসা কারো কারো জন্য, কোনো কোনো সংস্থার জন্য। এটা না থাকলে তাদের চাকরিই থাকবে না। সেটাই হচ্ছে তাদের আসল কথা। এটা আমার ধারণা। আমি খুব খোলাখুলি বললাম। এটা কেউ বলবে না, কিন্তু আমি বললাম। ’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখানে কতগুলো বিষয় আমার কাছে মনে হয়। রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের বোধ হয় একটু লাভই হয়। সেটার দিকে যতটা দেখে ততটা হয়তো প্রত্যাবাসনের দিকে দেখে না। অনেক প্রস্তাব আমরা পাই—যে রোহিঙ্গারা এখানে আছে তাদের জন্য এটা করা হোক, ওটা করা হোক। সাথে সাথে আমরা বলি ঠিক আছে, এই কাজগুলো আপনারা করেন, মিয়ানমারে করেন; করে এদের নিয়ে যান। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার এখানে তো করার দরকার নাই। আমার এখানে যেটুকু করার আমরা করি। যখন প্রথম রোহিঙ্গারা এলো তখন প্রথম কয়েক মাস তো আমরা নিজেদের অর্থ দিয়েই চালালাম। তারপর আস্তে আস্তে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এসেছে। তার আগে পর্যন্ত তাদের খাওয়ানো, পরানো চিকিৎসা দেওয়া। ৪০ হাজার গর্ভবতী নারী ছিল, তাদের ডেলিভারি করানো থেকে শুরু করে সব কাজ তো আমরা করেছি। একটা দুইটা দেশ আস্তে আস্তে এসেছে বা সংস্থা এসেছে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বলে বা দাবি করে, আমি সোজা বলে দেই যান মিয়ানমারে; ওখানে ঘর করেন, ওখানে স্কুল করেন, ওখানে হাসপাতাল করেন, ওখানে থাকার জায়গা করেন, আমার এখানে করা লাগবে না। আমার এখানে যেটা করার সেটা আমি করেই দিয়েছি। ’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আসলে যেটা আমার ধারণা, সবকিছুতেই যেন একটা ব্যবসা। আমি খালি এইটুকু বলবো। এর মধ্যে কিছু কিছু আছে আন্তরিক তাদের থেকে ভালো সাড়া পাই। আর কিছু আছে শুনে যান এই পর্যন্তই। সমস্যাটা এখানেই। ’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই চাপ দিতে বলেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের (মিয়ানমার সরকার) কোনো আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। তবে এখন যেহেতু একটা পরিবর্তন এসেছে, এই সময়টা ধরেই আমি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বলেছি—আপনারা এই সময় কেন চাপ দেন না? এদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন না?’

রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা তো আমাদের পুরো পরিবেশটাই নষ্ট করছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলি, এই উখিয়া—আমার ছোটবেলায় সেখানে গেছি, ছিল গভীর জঙ্গল, ঘন জঙ্গল। পাহাড়ি পথ দিয়ে যেতে হয়েছে। চারদিকে কোথাও বাঘের ছাপ, কোথাও হাতির ছাপ, আমি নিজেও দেখেছি। ছোটবেলা যখন আমরা যেতাম। সেই জায়গা এখন একেবারে ন্যাড়া মাথা হয়ে গেছে, জঙ্গলের চিহ্নই নাই। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি ধ্বস হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা এখানে নানা ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ কাজ চলছে। কিছু সস্ত্রাসী কাজ, নারীপাচার, শিশুপাচার থেকে শুরু করে। আর সব থেকে বড় ড্রাগ। এই ড্রাগ পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে এরা। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। আমরা তো প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, তারপরও তো থামানো যাচ্ছে না। এদের ভেতর অনেকে এই ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। সেটা আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি—এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে এবং আরও হবে। ’

রোহিঙ্গা সংকটের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে ’৯২ সাল থেকে তারা এখানে। এই যাকে হত্যা করা হলো, সে কিন্তু ’৯২ সালে এখানে এসেছে, ’৯২ সাল থেকেই বাংলাদেশে আছে। ’৯১ সালে একসঙ্গে রোহিঙ্গা আসলো, তখন আলোচনার মাধ্যমে কিছু ফেরত গেলো। প্রায় তিন লাখের মতো থেকে গেলো। তারা আর যায়নি কখনো। আর এবারে এলো প্রায় ৭/৮ লাখ, সব মিলিয়ে ১১ লাখের মতো হলো। ’

বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি রিফিউজিদের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি রিফিউজি তো সেই ’৪৮ সাল থেকেই আছে। তাদের তো ফেরতই নিল না। ওটা আবার সবাই ভুলেও গেছে। আমরা আরও এক বিশাল অংকের রিফিউজি পালন-পোষণ করছি তা হলো পাকিস্তানি রিফিউজি। পাকিস্তানও তাদের নেয় না, নেবেও না। ’

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় গণভবনে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন সাংবাদিকরা। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।