নিউজ ডেস্ক: শহুরে জীবনের বিলাসিতা, চাকচিক্য, সুবিধা থেকে অনেক দূরে তার বসবাস। বালাসোরের এক ঝুপড়ি ঘরেই তার স্থায়ী ঠিকানা। গাড়ি তো দূরের কথা, মোটরসাইকেলও নেই, একটা সাইকেল তার নিত্য চলার সঙ্গী।
বলছি ভারতের নতুন মন্ত্রীসভার সবচেয়ে দরিদ্র(!) সদস্য প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গির কথা। এবার লোকসভা নির্বাচনে উড়িষ্যার বালাসোর আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। বিজু জনতা দলের প্রার্থী রবীন্দ্র কুমার জেনাকে হারিয়েছেন ১২ হাজার ৯৫৬ ভোটে।
তবে নির্বাচনে জেতার বহু আগেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন প্রতাপ। রাজ্যের মানুষ তাকে আদর করে ডাকেন ‘উড়িষ্যার মোদী’ বলে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাকে নিয়ে উন্মাদনা কম নয়। বিরল এক নেতার সাধারণ জীবনযাপনের লক্ষ লক্ষ ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্তর্জালে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সন্ধ্যা সাতটায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তার পর থেকে টানা শপথ পাঠ দেখতে দেখতে দর্শকসারিতে বসা মানুষজন অনেকটাই ক্লান্ত। কিন্তু, রাত সাড়ে আটায় যেন বিদ্যুৎচমক খেলে গেলো রাইসিনার উঠানে।
রাষ্ট্রপতির সচিব ঘোষণা করলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এবার শপথ নেবেন প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি…। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো হাততালির ঢেউ। একেবারে সাধারণ গোছের সাদামাটা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা, উস্কোখুস্কো চুলের এক ব্যক্তি ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চের দিকে। আর তুমুল হর্ষধ্বনি চলছে দর্শকদের মধ্যে।
লোকসভার সদস্য হওয়ার আগে প্রতাপ সারেঙ্গি উড়িষ্যার নীলগিরি আসন থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জেতেন তিনি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান এ বিজেপি নেতা।
বাইরে যেমন, প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গির ভেতরটাও তেমনই সাদামাটা। বিয়ে করেননি, কুঁড়েঘরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। গত বছর মা মারা যাওয়ার পর এখন একা। পাড়ার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাই তার অবসরের সঙ্গী। সহজ-সরল উপকারী মানুষটি গ্রামের সবার কাছে একেবারে ঘরের লোক বলে পরিচিত।
উড়িষ্যার নীলগিরির গোপীনাথপুর গ্রামে এক গরীব ঘরে জন্ম প্রতাপ সারেঙ্গির। স্থানীয় ফকির কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেছেন। কিন্তু চাকরিতে মন বসে না। ছোটবেলা থেকেই টান আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে। সেসব নিয়ে লেখালেখিও করেছেন বিস্তর। একটু বড় হলে চলে যান হাওড়ার বেলুড় মঠে। ইচ্ছা ছিল, সাধু হয়ে দেশ আর মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু মঠের সন্ন্যাসীরা যখন জানলেন, তার বাবা মারা গেছেন, বাড়িতে মা একা, সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেন মায়ের সেবা করার জন্য।
মঠের সাধু না হতে পারলেও, তাদের মতো সাধারণ জীবনযাপনের অভ্যাস কখনো ছাড়েননি প্রতাপ। লোকে বলে, তিনি জীবের সেবা করেন, জেনেশুনে কখনো কারো ক্ষতি করেননি। ময়ুরভঞ্জ ও বালাসোরের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় দুস্থ শিশুদের জন্য স্কুল করে দিয়েছেন। এলাকার যেখানেই কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে, সেখানেই কোনো না কোনো ভাবে তার অবদান রয়েছে।
নির্বিবাদ এ মানুষটি নির্বাচনে জেতায় স্থানীয়রা যেমন খুশি, খুশি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তার সঙ্গে প্রতাপের বেশ খাতির। মোদী উড়িষ্যায় গেলে সারেঙ্গির সঙ্গে অবশ্যই দেখা করেন। শুধু বিজেপির রাজনীতিই নয়, তাদের মধ্যে মিল আছে আরেক জায়গাতেও। দু’জনেই রামকৃষ্ণ মিশনের সাধু হতে গিয়েছিলেন, দু’জনকেই সন্ন্যাসীরা ফিরিয়ে দিয়েছেন। পাকাপোক্ত ভাবে গেরুয়া ধারণ না করলেও দু’জনেই এখন গেরুয়া শিবিরের সদস্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.