খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দুদক প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে বাস্তবায়ন করছে: রিজভী

0
486
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দুদক প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে বাস্তবায়ন করছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুদক প্রধানমন্ত্রীর মানস সন্তান। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আবারো ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার নীল নকশা কোনোদিনই বাস্তবায়িত হতে দেবে না জনগণ। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী রেখে এখন এক গভীর মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে নির্বাচনী ঢেউ তোলার অপচেষ্টা চলছে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট নির্বাচনী ঢেউয়ে গা ভাসাবে না বিএনপি ও জনগণ। অবশ্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিশ্চিত করে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। আর সেই নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। আর তা না হলে আন্তর্জাতিক স্বৈরাচারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই অবৈধ সরকারের পতন হবে ভয়াবহ। বারবার ঘুঘু ধান খেয়ে যেতে পারবে না। জালভোট, রাতের গভীরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার কলঙ্কিত নির্বাচন আর এদেশে অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। জনরোষ এবার চরম প্রতিশোধের শক্তিতে সরকারের যেকোন নীল নকশাকে প্রতিহত করবে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন- বিদেশেীদের কাছে দেন-দরবার করে লাভ হবে না। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে নির্বাচন করা বিশ্বের কোথাও নজীর নেই। নিজেদের জনসমর্থনহীন ক্ষমতা ধরে রাখতে গোপন আঁতাতের জন্য আপনারাই সুইজারল্যান্ড থেকে সিঙ্গাপুর দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে নির্বাচনের নজীর আপনারাই সৃষ্টি করেছেন, এটি কী ভুলে গেছেন? ঐ সময়ে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার নজীর আপনারাই স্থাপন করেছিলেন। গান পাওডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরে কী অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে জানতে চাই- পৃথিবীর কোন দেশে সংসদ ভেঙ্গে না দিয়ে নির্বাচন হয়? এই নজীর কী আছে পৃথিবীর কোথাও? আপনারা এবং আপনাদের দোসর এরশাদই জাতীয় সংসদ বহাল রাখার কথা বলছেন। এরশাদ বলবেন এজন্য যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে হাত খরচা পান। আর আপনি বলছেন চাকরি রক্ষার্থে।’

রিজভী বলেন, ‘পুলিশী প্রহরায় গণতন্ত্রকে জিম্মি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের তাল-বেতালের কথাবার্তায় মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। বরং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার তকমা পেয়ে এখন আপনাদের মুখে গণতন্ত্র ও জনমতের কথায় অবলা প্রাণীও হেসে ওঠে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, জালভোট ও কলঙ্কিত নির্বাচনের স্বীকৃতি হলো বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই শুধু নয় তাদের সমর্থকরাও স্বৈরাচারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে লজ্জায় ডুবে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না দিলে চলমান আন্দোলনের স্রোতের তীব্র বেগে ধাবিত হবে এবং স্বৈরাচারী সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নসাধ ধুলোয় লুটিয়ে যাবে। ক্ষমতার জোরে মিথ্যা মামলায় কাউকে জড়ানো যায়, এটা জনগণ জানে। এবং ক্ষমতার হুমকিতে ক্ষমতাসীনদের নামে মামলাও অদৃশ্য হয়ে যায় এটাও জনগণের অজানা নয়। বেগম জিয়াকে বন্দী করে রেখে পথের কাঁটা সরানোর দুরভিসন্ধির কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। মানুষ বলছে-বেগম জিয়াকে বন্দী করার অর্থ গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রাখা। বেগম খালেদা জিয়াকে অসত্য ও বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রীর উল্লাসে মনে হয়েছে তিনিই বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে আদালতকে বাধ্য করেছেন। কিন্তু তাতে বেগম জিয়া মানুষের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছেন, তার ওপর সরকারের দুর্বিষহ নির্যাতনে মানুষ ক্ষোভে-ক্রোধে অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে। ’

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুঃশাসনের প্রকোপ এখন বিপজ্জনক রুপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিএনপিসহ বিরোধী শক্তি এবং বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ শেখ হাসিনার চরম রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার। অন্তহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে জনগণের বদলে বন্দুককেই নিরাপদ মনে করছে এই সরকার। তাই বিরোধী আন্দোলনকে দমাতে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাজানো হয়েছে। এরাই এই আওয়ামী নব্য নাৎসীবাদের প্রহরী। এরাই জান্তব হিংস্রতায় বিএনপি’র যেকোন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এরাই বিএনপি পাকড়াও অভিযান করে যাচ্ছে দেশবাপী। যেমন ছাত্রদল নেতা রাজকে টেনে হিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে ছুঁড়ে মেরেছে পুলিশ ভ্যানের ভেতর। যেমন পুলিশ কাস্টডিতে পৈশাচিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত জাকির হোসেন মিলনকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৮ মার্চ ঢাকা মহানগর সবুজবাগ থানা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সোহরাব হোসেন সেন্টুকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাবার পর এখনও পর্যন্তু তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আমি দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে সোহরাব হোসেন সেন্টুকে জনসম্মুখে হাজির করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।’