খালেদা জিয়া জেলে গেলে নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

0
449
blank

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠালে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, কেউ যদি মনে করেন- দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যদি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর নির্বাচন হবে তবে সে নির্বাচন হবে না। খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, সে নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষ সে নির্বাচন মেনে নেবে না। দেশপ্রেমিক কোন রাজনৈতিক দলও সে নির্বাচনে অংশ নেবে না। গতকাল বিকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এনপিপি আয়োজিত ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সহায়ক সরকারের দাবি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে হতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণমূলক ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হতে হবে। এই জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ ওয়ান-ইলেভেন সরকারের নীতি অনুসরণ করছে- অভিযোগ করে তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে শুরু হয়েছিলো বিরাজনীতিকরণের ধারা। রাজনৈতিক নেতাদেরকে ও রাজনীতিকে ধ্বংস করার এই ধারা আওয়ামী লীগ বহন করে চলেছে। তারা আজকে একটা সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ও বড় রাজনৈতিক জোটগুলো ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। আমরা মাথায় আসে না তারা কিভাবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলেন এবং সেই ভয়াবহ জাতিবিধ্বংসী নীতির মধ্য দিয়ে তারা চলছেন। নতুন নির্বাচন কমিশনের শপথ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের একটা আশা ও আস্থা ছিল। প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগের জায়গা থেকে উঠে এসে দেশ ও মানুষের জন্য একটি ভূমিকা রাখবেন। দুর্ভাগ্য আমাদের তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ও ভূমিকা রাখতে পারেননি। তিনি যে সার্চ কমিটি গঠন করছেন এটা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে বলেছি তা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তারা যে নির্বাচন কমিশন আমাদের সামনে দিয়েছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে আমরা আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাকে দলীয় ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে মির্জা আলমগীর অভিযোগ করেন, এটা পরিষ্কার করে বলেছি। এতে কোনো রাগঢাকের কিছু নেই। নুরুল হুদা ছাত্ররাজনীতি করেছেন। পরে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে সরকারি চাকরি হারিয়েছেন। চিহ্নিত একজন আওয়ামী লীগার হিসেবে তার নিজের পরিচয় আছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে তাঁকে আওয়ামী লীগের প্রচারের দা?য়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ সবের সব প্রমাণ আছে। এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আওয়ামী লীগের দলীয় সদস্য। সেই মানুষটিই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আজকে শপথ নিয়েছেন। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া প্রসঙ্গে মির্জা আলমগীর বলেন, কোনো কোনো পত্রিকায় ও কোনো কোনো সাংবাদিক ভাই আমাকেও জিজ্ঞাসা করেছেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আপনারা নির্বাচনে যাচ্ছেন কেন? আমরা স্থানীয় সরকারে নির্বাচন বরাবরই অংশ নিয়েছি। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো করছি এবং প্রত্যেকটিই আওয়ামী লীগ কমিশনকে ব্যবহার করে ফলাফল নিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, দলীয় সরকার যদি থাকে এবং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে কখনোই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এবারো এই একটা কারণেই আমরা গেছি, আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাচ্ছি, আমরা যাবো। মির্জা আলমগীর বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাব কী যাব না, সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে সেই সময় কোন ধরনের সরকার থাকছে, নির্বাচন কমিশনের কী ভূমিকা থাকে, তার উপর। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন সরকারের সময় নিরপেক্ষ সরকার চাই। যে সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে, নির্বাচন কমিশন সহায়তা করবে। আওয়ামী লীগ জেনেশুনে জনগণের অধিকারকে হরণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের অধিকারকে তারা পুরোপুরি লুট করে নিয়ে গেছে। কারণ তারা জনগণ যে মতামত দেবে সেই মতামত কোনোদিনই তাদের পক্ষে যাবে না। তারা অতীতে যা করেছিল এখনো তাই করছে; জনগণের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। আমরা গণতন্ত্র ও নির্বাচন চাই। নির্বাচনের মধ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই। আওয়ামী লীগ যে ফাঁদ পেতেছে ও নীল-নকশা তৈরি করেছে সেই নীল-নকশার মধ্য দিয়ে কি নির্বাচন হবে? সেই নির্বাচন কখনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। সেই নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ?ইউনূস আমাদের গর্ব। সারা পৃথিবী তাঁকে সম্মান দিচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তাকে বিশেষভাবে সম্মাননা জানিয়েছে। জনগণের মৌলিক কিছু বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করছেন। এই জন্য সবাই তাকে বাহবা দিচ্ছেন। আপনি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে শত্রু চিহ্নিত করেছেন। কারণ, লোকে বলে, নোবেল পুরস্কার নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত শান্তিচুক্তির কারণে আপনার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু ড. ইউনূস বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন।
এনপিপি’র চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ও এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বক্তব্য দেন।