খায়রুল হক অনুশোচনার বদলে অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন: মির্জা ফখরুল

0
563
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের বক্তব্যে ‘ধিক্কার’ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি তার কৃতকর্মের জন্য কোনো অনুশোচনাতো করেনইনি বরং একটি অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বিকেলে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ক্ষমতাসীন দল ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য একই সুরে বাধা বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের সাথে আমরা লক্ষ্য করলাম যে, সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়ার পূর্বেই সাবেক প্রধান বিচারপতি বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। মনে হলো, এই রায়ের ফলে তার গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। আইন কমিশনের আসনে বসে সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে যেসব উক্তি করেছেন তা শুধু অশালীনই নয়, তা রীতিমত আদালত অবমাননার শামীল।
তিনি বলেন, পঞ্চম ও এয়োদশ সংশোধনী বাতিলের ফলে আজ দেশে যে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ভঙ্গুর করে ফেলেছে। বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে কোনো অমিল আছে বলে আমরা মনে করি না, একই সুরে বাধা। তার (এবিএম খায়রুল হক) বক্তব্যই আওয়ামী লীগের বক্তব্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, খায়রুল হক তার সময়েই যখন তিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন যেসব রায় দিয়েছেন তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কতখানি ক্ষতিগ্রস্থ করেছে তা দেশের মানুষ এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছে। বিচারপতি হকের রায়ের পরেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা ও হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে ‘ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৭৯৯ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক ও দার্শনিক দিক নির্দেশনামূলক এই রায়ের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এটা ম্যাগনাকার্টা বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে নির্বিগ্নভাবে। হতাশাগ্রস্থ জাতি এই রায়ের মাধ্যমে আশার আলো দেখতে পেয়েছে। আমরা সেজন্য এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছি এবং আপিল বিভাগকে অভিনন্দন জানিয়েছি।
তিনি বলেন, এই রায় সুশাসনের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকারের জন্য নিসন্দেহে আশার আলো। আমরা সংগ্রাম করছি, সুশাসন, ন্যায় বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য। আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্য়ন্ত এই সংগ্রাম আমাদের অব্যাহত থাকবে।
রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ার জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) যে দানব সৃষ্টি করেছেন, সেই দানবই আজকে তাদেরকে গ্রাস করতে চলেছে, এখনো তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না।
সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, একজন মন্ত্রী বলেছেন যে বিচার বিভাগের হাত এতো লম্বা হয়নি এবং একটা হুমকিও দেয়া হয়েছে যে, এর বেশি উঠবেন না। এগুলো থেকে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের বা ক্ষমতাসীন দলের মানসিকতাটা কী? রায় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা জ্বলে উঠেছেন। কারণ তারা যে অপকর্ম করেছেন, তারা যে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন, একনায়কের চাইতে খারাপভাবে দেশ পরিচালনা করছেন দানবীয়ভাবে-সেই কথাগুলো এখানে এসে গেছে।
তিনি বলেন, এ রায়ের কারণে তাদের (সরকার) স্বরূপ উন্মোচিত, তাদের চেহারা উন্মোচিত হয়েছে বলেই তারা (সরকারের মন্ত্রীরা) এভাবে কথা বলছে।
সংবাদ সম্মেলনে রায় নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব হলো যে বাংলাদেশে আদালতগুলো যে রায় দেয় সেই রায়গুলোকে বাস্তবায়ন করা। তিনি সেই দায়িত্ব থেকে সরে এসেছেন রাজনৈতিক কারণে।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সম্পর্কে মওদুদ বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রক্ষা করা হয়েছে। বিচার বিভাগের ওপরে তারা (সরকার) যে ষোড়শ সংশোধনী করেছেন, পুরো ধারণাটা ছিলো বিচার বিভাগকে করায়াত্ব করা, আতঙ্কের মধ্যে রাখা, ভয়ের মধ্যে রাখা যাতে বিচারকরা সুষ্ঠুভাবে বিচার করতে না পারেন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্নাঙ্গ রায়ে ‘কোনো অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখা হয়নি’ দাবি করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যা কিছু বলেছেন প্রত্যেকটি শব্দ প্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিক কোনো বক্তব্য আমরা দেখতে পারছি না।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের ফলে দেশকে সেনা শাসনের দিকে নিয়ে যাবে আবার- বিচারপতি খায়রুল হকের এরকম আশঙ্কার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মওদুদ বলেন, এটা উনার (খায়রুল হক) ইচ্ছা, আমাদের না। উনাকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি এই ইচ্ছা পোষণ করছেন কিনা?
এয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের দেয়া রায়ের প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ বলেন, ‘এ ভদ্রলোকের লজ্জাবোধ নাই। তার কারণ কী আমি বলি, এয়োদশ সংশোধনীতে উনি যে রায়টা দিলেন, যেদিন রায় ঘোষণা করা হলো তিনি (সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক) বললেন যে আগামী দুটি টার্মের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে। তিনি সেখানে গ্রিক ফিলোসফি নিয়ে আসলেন, বললেন যে জনগণের স্বার্থে এটা করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। ১৬ মাস পরে উনি পূর্ণাঙ্গ রায় দিলেন। সেই রায়ের মধ্যে এ কথাগুলো নাই। একজন প্রধান বিচারপতি তিনি যদি এরকম অনৈতিক কাজ করেন, আমি মনে করি তিনি বিরাট একটা অপরাধ করেছেন। ইট ইজ এ জুডিশিয়াল ক্রাইম হি হ্যাজ কমিটেড।’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে খায়রুল হকের সংবাদ সম্মেলন করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মওদুদ আহমদ বলেন, তার উচিত হয়নি আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদে থেকে সংবাদ সম্মেলন করা। তিনি সরকারের কোষাগার থেকে পাওয়া বেতনভুক্ত সরকারের একজন কর্মকর্তা। সরকারের কোনো কর্মকর্তার এ ধরণের সংবাদ সম্মেলন করা সম্পূর্ণভাবে সরকারি আচরণবিধির লঙ্ঘন করেছেন। তিনি যে উদ্দেশে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাতে তার দলীয় রাজনৈতিক আচরণের উন্মোচন হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশীদ, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টর কায়সার কামাল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।