গুম-খুন ও গুপ্তহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার করা হবে: খালেদা জিয়া

0
571
blank
blank

ঢাকা: দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে এলে গুম, খুন ও গুপ্তহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইফতার মাহফিলে একথা বলেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে এলে আমরা অবশ্যই এদের খোঁজ করার চেষ্টা করব। না হলে এদের সাথে যারা খারাপি করেছে, আমরা জানি র‍্যাব, তখনকার র‍্যাবই ছিল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী, পাওয়ারফুল ছিল এবং পুলিশ। এই র‍্যাব ও পুলিশের যারা যারা এই অন্যায় কাজগুলো করেছে তাদের কোনোদিন ক্ষমা করা হবে না। তাদের বিচার একদিন না একদিন হবেই, ইনশাল্লাহ। হয়তো স্বজনকে ফিরে না পেতে পারেন কিন্তু বিচারটা পেলেও কিছুটা শান্তি হয়তো পাওয়া যায়, এই আশায় থাকব আমরা। খালেদা জিয়ার বলেন, ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপির যারা গত কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে, তারা কীভাবে আছেন, তা আমরা কিছুই জানি না।

তিনি বলেন, আপনারা যে আশা করছেন, স্বজনরা একদিন ফিরে আসবে, আমরাও সেই আশায় আছি। আবার আপনাদের মা, বাবা, ভাই-বোন-স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের আদর করবে ঠিক তেমনিভাবে আমাদের দলে ফিরে নেতা-কর্মীদের সাথে মিলে আমাদের আপন হয়ে থাকবে। এর পরপরই ভারী হয়ে আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ। অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অতিথিরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে খালেদা জিয়া বলেন, স্বজন হারানোর ব্যথা আমি বুঝি। আপনারা দেখেছেন আমার সন্তান হারিয়েছি। ক্রসফায়ারের ঘটনাকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, একটি নিরীহ ছেলেকে কথা নাই বার্তা নেই গুলি করে মেরে ফেলবে। এটা খুবই দুঃখজনক। বিচার ছাড়া কাউকে গুলি করে মেরে ফেলবে, এটা আগে কখনো হয়নি। এরা খুনি এরা গুপ্তহত্যাকারী এরা জালেম। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করব তিনি যে এর বিচার করেন। দুনিয়াতেই যেন এর বিচার আপনারা দেখে যেতে পারেন। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়। নিখোঁজ নেতা-কর্মীরা যেখানেই আছে আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন। তিনি আরো বলেন, আমরা বিরোধী দলে আছি। আমাদের প্রত্যেকের ওপর মিথ্যা মামলা, নানা নির্যাতন চলছে। নতুন করে অভিযানে ১৬ হাজার লোক ধরেছে এর মধ্যে চার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিএনপিকে ধ্বংস করা। গুম-খুনের সাথে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচার করা হবে এমন মন্তব্য করে বিএনপি প্রধান বলেন, ভবিষ্যতে দেশে গণতন্ত্র ফিরে এলে আমরা অবশ্যই তাদের (গুম হওয়া নেতাকর্মী) খোঁজ করব। র‌্যাব ও পুলিশের যারা এই অন্যায় কাজগুলো করেছে তাদের কোনো ক্ষমা করা হবে না। তাদের বিচার একদিন না একদিন হবে।

তিনি বলেন, স্বজনদের আমরা ফিরে না পেতে পারি। কিন্তু বিচারটা পেলেও অন্তত শান্তি পাওয়া যাবে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করব, যাতে তাদের আত্মাটা শান্তি পায়। অনুষ্ঠান শেষে আন্দোলনে গুম, খুনের শিকার ৩৮ পরিবারের সদস্যদের হাতে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহায়তা তুলে দেন খালেদা জিয়া। এ সময় গুম হওয়া বংশাল থানা বিএনপি কর্মীর ছোট্ট মেয়ে হৃদি বলে, পাপার ছবি গলায় ঝুলিয়ে হাঁটতে মন চায় না। মন চায় পাপার হাত ধরে হাঁটতে। হাসিনা আন্টি পাপাকে ফিরিয়ে দেন, চাচুকে ফিরিয়ে দেন। পাপাকে ছাড়া ঈদ করতে ভালো লাগে না। গুম হওয়া আরেক সদস্য চঞ্চলের ছোট ছেলে আহাদ বলে, হাসিনা আন্টি আমার পাপাকে ফিরিয়ে দিন, পাপার সাথে ঈদ কবর, পাপা জামা কিনে দেবে, পাপার সাথে স্কুলে যাব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।