গোলাপগঞ্জের ধর্মান্তরিত মুসলিম আব্দুর রব হত্যাকান্ড : হত্যার মোটিভ ধর্মীয় নাকি রাজনৈতিক?

0
294
blank
blank

নিজস্ব প্রতিনিধি : সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানার উত্তর নগর গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আব্দুর রবকে বিগত ১৩ই ডিসেম্বর তার বসত গৃহে প্রবেশ করে গলাকেটে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে কতিপয় সন্ত্রাসী। তার নিষ্পাপ সন্তান সায়মা বেগমকেও পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। পুলিশ তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। হত্যা কান্ডের রহস্য অনুসন্ধানে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। আব্দুর রবের স্ত্রী পলি বেগম তার স্বামী হত্যাকান্ডের জন্য ১৪ জনকে আসামী করে গোলাপগঞ্জ থানায় এজাহার দিয়েছেন।

ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ কিন্তুু রিমান্ড না চেয়েই তাদের আদালতের মাধ্যমে হাজতে প্রেরণ করা হয়। হত্যা কান্ডের প্রকৃত মোটিভ সম্পর্কে পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। মৃত আব্দুর রবের স্ত্রী পলি বেগমের ভাষ্য মতে ধর্মীয় কারনে তার স্বামীকে হত্যা করে উগ্রপন্থি সন্ত্রাসীরা, অন্যদিকে এলাকাবাসীর ধারনা রাজনৈতিক কারনে ঘটেছে এমন লোমহর্ষক ঘটনা।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানার উত্তর নগর গ্রামের মৃত সমীরন চন্দ্র নাথের একমাত্র ছেলে অমল চন্দ্র নাথ। তিনি তার মাতাসহ উত্তর নগর গ্রামেই বসবাস করতেন। জন্মগত ভাবেই তিনি হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলেন। এস, এস, সি ও এইচ, এস, সি পাশ করার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করার পর তার মাতা পরলোক গমন করেন। উক্ত বিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রী পলি বেগমের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে অমল চন্দ্র নাথের।

বিষয়টি জানাজানি হলে পলি বেগমের পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হন। তারা সংখ্যালঘু অমল চন্দ্র নাথকে নানা রকম হুমকি দেন। এক পর্য্যায়ে গত-২৭/১২/২০০৭ইংরেজী তারিখে সিলেট নোটারী পাবলিকের মাধ্যামে এফিডেবিট করে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে আব্দুর রব নাম ধারন করেন। অতপর কোর্ট ম্যারেজ করেন পলি বেগমকে। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করার কারনে কিছুটা ক্রোধ প্রশমিত হয় পলি বেগমের আত্মীয়- স্বজনের। তাদের দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত হয় একই গ্রামের অন্য বাড়ীতে। ভালবাসার নির্মল ফসল হিসাবে জন্ম নেয় কন্যা সন্তান সায়মা বেগম ও পুত্র সন্তান সায়েম আহমেদ। সন্তানদের জন্মের পূর্বেই আওয়ামীলীগের রাজনীতি ছেড়ে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে যোগদেন আব্দুর রব। এই কারনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা তার প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল।

এরই মাঝে গুঞ্জন শুরু হয় তার ধর্মীয় আচরন ও রীতি নিয়ে। তিনি গোপনে পুজা অর্চনা করেন বলে জানতে পারে শশুর বাড়ীর লোকজন। গ্রাম্য রাজনীতির কারনে তার কর্মকান্ড অনুসন্ধান করতে থাকে উগ্রবাদী কিছু লোক। গত ১৩ই ডিসেম্বর/২০১৯ইংরেজী তারিখে পলি বেগম তার ছেলেকে নিয়ে বিশেষ কাজে বাহিরে যান। তখন সন্ত্রাসীরা বসত গৃহে প্রবেশ করে আব্দুর রবকে গলাকেটে হত্যা করে । তার মেয়ে সায়মা বাধা দিলে সায়মা বেগমের পেঠে মারাত্মক ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। পলি বেগম এসে এমন দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলেও কিং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকেন তিনি।

সায়মার জবানবন্দী শুনে জানতে পারেন কামরান আহমেদ নামে পলি বেগমের চাচাতো ভাই ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা তার দলবল নিয়ে হত্যা করে তার স্বামীকে। তিনি বাদী হয়ে ১৪জনের নামে গোলাপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা কান্ডের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে। আসামী গ্রেফতার করলেও রিমান্ড না চেয়ে তদন্তে নামা অস্বাভাবিক বলে মনে করে স্থানীয় কয়েকজন আইনজীবি।

এসময় ঘটনাস্থল হতে একটি মা-কালীর মূর্তিও উদ্ধার করা হয়। উপরন্তুু মৃত আব্দুর রব সদ্য আওয়ামীলীগ ত্যাগ করেন। হত্যা কান্ডের মুল কারন ধর্মীয় না রাজনৈতিক এই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। হত্যা কান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হোক। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক এমনটি আশা করেন গোলাপগঞ্জ থানার সুশীল মহল।