চ্যালেঞ্জের স্বপ্নবিলাসী বাজেট

0
685
blank
blank

মানিক মুনতাসির: আগামী বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’ স্লোগান সামনে রেখে প্রস্তাবিত নতুন এই বাজেটের মূল আকার ধরা হয়েছে ৪,০০,২৬৬ কোটি টাকা; যা চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। নতুন বাজেটে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর চ্যালেঞ্জের ঘোষণাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এজন্য বিভিন্ন পণ্য, সেবা, ব্যবসা-বাণিজ্যে কর রেয়াত দেওয়ার পাশাপাশি জনগণের ঘাড়ে প্রত্যক্ষ করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে করপোরেট কর। এদিকে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১১ হাজার কোটি টাকা কম ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ১৫০ কোটির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অবশ্য সরকারকে ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে হবে। আর ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও নতুন ভ্যাট আইন, ২০১২-এ ফ্ল্যাট রেট হিসেবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকরের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নতুন এই বাজেটের মূল আকার ধরা হয়েছে ৪,০০,২৬৬ কোটি টাকা; যা চলতি বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার। প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এনবিআরের টার্গেট ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৩ হজার ১৫২ কোটি টাকা। এ ছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে কর রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বাজেটে জিডিপির লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন ইতিমধ্যে আভাস দিয়েছে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে সরকারি খাতের বিনিয়োগ ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই বিনিয়োগকে জিডিপির ৩১ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সরকারি খাতের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ’ এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপকে ৫ দশিমক ৫ শতাংশে ধরে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন এই বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর অর্থায়নে আরও ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সে হিসেবে মোট এডিপির আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে; যা জিডিপির ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা জোগান দেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ উেসর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে নতুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের পাশাপাশি চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটের আয় : বিশাল আকারের বাজেটের অর্থায়নের প্রধান খাত বরাবরের মতো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ খাত থেকে মোট ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে শুধু এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের টার্গেট ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে এনবিআর। তবে নতুন ভ্যাট আইন, ২০১২ আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হলে বিশাল এ রাজস্ব আহরণে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। শুধু ভ্যাট খাত থেকে ৯১ হাজার কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এডিপি ও মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ : প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন দিয়েছেন। এতে মূল এডিপির আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আটটি মেগা প্রকল্পের জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে এডিপিতে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৫২৪ কোটি ৩৬ লাখ, মেট্রোরেলে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৮৩ লাখ, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পে ৭ হাজার ৬০৯ কোটি ৮১ লাখ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬ হাজার ৭৭৯ কোটি ৪ লাখ, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২ হাজার ২২০ কোটি এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল-গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। নতুন এডিপিতে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগে ৪১ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ খাতে ১৮ হাজার ৮৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্প ১ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৯০টি। বাকিগুলো চলমান।

বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী : বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ খাতের সুবিধাভোগীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ১০০ থেকে ২০০ টকা বাড়ানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ দরিদ্র লোকের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে আরও ৭ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বাড়ছে বাজেট ঘাটতি : প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির ২২,২৩,৬০০ কোটি টাকার ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল এই ঘাটতি পূরণে সরকার আগামী বছর ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বাজেটে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও তার প্রয়োজন পড়েনি। ঘাটতি মেটানোর একটা মোটা অঙ্ক আসবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে। এ খাত থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঘাটতির বাকি ৪৬ হাজার ৪২০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে আসবে।

পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি : চাল, ডাল, পিয়াজ, রসুন, ভোজ্যতেলসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যকে নতুন ভ্যাট আইনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, জনজীবনের ভোগান্তি কমানোর জন্য ১ হাজার ৫৭৯টি পণ্যকে ভ্যাট রেয়াত দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নতুন আইনে ভ্যাট বা মূসক অব্যাহতিপ্রাপ্ত মৌলিক খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে : চাল, ডাল, ডিম, ফল, তরল দুধ, ভোজ্যতেল, পিয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, মাংস, মুড়ি, চিঁড়া, আলুসহ সব ধরনের সবজি। তবে প্যাকেটজাত ও আড়াই কেজির বেশি হলে তরল দুধ, পিয়াজ, রসুন, গম, আটাসহ কিছু ভোগ্যপণ্যে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। রুটি, বিস্কুটসহ সব ধরনের ফাস্টফুড ও বেকারি পণ্যে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। নতুন আইনে সব অস্থায়ী হোটেল ও রেস্তোরাঁয়ও খাদ্যদ্রব্য সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ যেসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া করে তাদেরও ভ্যাট দিতে হবে না। ফলে এসব হোটেলে খেলে খরচ বাড়বে না। মন্ত্রী জানান, দেশে উৎপাদিত এলপিজি সিলিন্ডার, ফ্রিজ, টিভি, এসি ও মোটরসাইকেলে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে, তা বলবৎ থাকবে। ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে দেশি সফটওয়্যার উৎপাদন ও সরবরাহে।

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শুল্ক বাড়বে : এদিকে ১ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, বর্তমান সরকারের ‘ফাইন্যানশিয়াল ইনক্লুশন অ্যাট অল লেভেলস’ নীতি ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতির ফলে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনের আকার বাড়ছে। এ বিবেচনায় রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট, ১৯৯৪-এ সংশোধনীর মাধ্যমে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলো। এদিকে চলতি অর্থবছরের মতো ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিতই রাখা হয়েছে। এ অর্থবছরের জন্য ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর পরই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রস্তাবিত বাজেট

অনুমোদন করেন। সংসদে অর্থমন্ত্রী দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে বাজেট বক্তৃতার শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, ’৭৫-এর কালরাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার বঙ্গবন্ধুসহ অন্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সঙ্গে নিয়ে অধিবেশনকক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীর পরনে ছিল সোনালি রঙের পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিবকোট। বক্তব্যের শুরুতেই স্পিকারের অনুমতি নেওয়ার সময় তিনি আগামী অর্থবছরকে ২০১৭-১৮ না বলে ১৯১৭-১৮ বলে ফেলেন। পরে অবশ্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে সংশোধন করে দেন। স্পিকারের অনুমতিক্রমে এবার তিনি চেয়ারে বসেই বাজেট উপস্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রীকে উৎসাহ দিতে সরকারদলীয় এমপিরা সময় সময় টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতাকে সমর্থন জানান। এ সময় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি, সচিব, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও বিদেশি মেহমানরা উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতার শুরুতে বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারলে ১৯৯৫-৯৬ সালেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার কারণে তা হয়নি। ’

অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী : বাজেট বক্তৃতার উপসংহারে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সুশাসনের জন্য আমরা অনেক বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করেছি। কে ভেবেছিল এ দেশে রাজাকাররা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলবে? কে বিশ্বাস করেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। আমরা কি কখনো ভেবেছি, আমরা ভিক্ষার ঝুলিকে এত দ্রুত ছেঁটে ফেলতে পারব? নিজস্ব অর্থায়নে কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারব? পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারব? শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সমৃদ্ধির পথে হাঁটছি। সোনা ছড়ানো সমৃদ্ধি আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সময় এসেছে সাহসী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আলোর পথে অভিযাত্রার। ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের ৮-১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এসব কাজ পরিকল্পিত উপায়ে সম্পাদনের জন্য আমরা রূপকল্প, ২০৪১-এর আওতায় প্রণয়ন করতে যাচ্ছি দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা। এর স্বপ্নমূলে থাকবে একটি শান্তিপ্রিয়, উন্নত এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুস্থ-সবল আলোকময় বাংলাদেশ। ’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের উচ্চাভিলাষ ব্যক্ত করেন সোনার বাংলার স্লোগান দিয়ে। তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দেন যে, মুক্তিযুদ্ধে নির্মমভাবে বিধ্বস্ত বাংলাদেশে সম্পদের অভাব নেই, শুধু তার সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা ছিল পশ্চাত্পদ। আমরা এখন জানি যে তার উচ্চাভিলাষ শুধুই স্বপ্ন ছিল না, ছিল আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের অভিব্যক্তি। দিন এসেছে দলমত, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই মিলে সে পথ ধরে সামনে এগিয়ে চলার। আসুন আমরা এখন প্রস্তুতি নিই ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ, উন্নত, সুখী ও শান্তিময় বাংলাদেশের জন্য। ’ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের চতুর্থ বাজেট। অন্যদিকে এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ৪৬তম বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ১৮তম। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের একাদশতম বাজেট। আবুল মাল আবদুল মুহিতই প্রথম অর্থমন্ত্রী যিনি ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত একনাগাড়ে ৯টি বাজেট পেশ করছেন। এর আগে তিনি ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে আরও দুটি বাজেট পেশ করেছিলেন। আজ বিকাল ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থমন্ত্রী বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন।

বাজেটে এলপি গ্যাস ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে : তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে। সরকার দাম কম রেখে বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা অব্যাহত রাখতে চায়। সে অনুযায়ী গতকাল নতুন অর্থ বছরের বাজেটে এলপি গ্যাসের দাম কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি বছরে পাইপলাইনে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাসে দাম দুই দফায় বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার মধ্যে এই প্রস্তাব এলো।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী এলপিজির সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামালের ওপর থেকে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশের প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, রূপান্তরিত তরল গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে এই খাতকেও কর ছাড় সুবিধার মধ্যে রাখা হচ্ছে। আর প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকটের কারণে বাসা-বাড়ির জন্য এলপিজি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে হবে। এরই মধ্যে সরকার ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে এলপিজি গ্যাস সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে। যারা উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসির জন্য বরাদ্দ ১০৭০ কোটি টাকা : নতুন অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০৭০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ৩০৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ৭৬১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখেই এ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ছয় সিটি করপোরেশনের সাধারণ নির্বাচন এবং সংসদ ও স্থানীয় সরকারের নানা উপনির্বাচন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক এ সংস্থার জন্য বরাদ্দ ১০৭০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২২০ কোটি টাকা কম। নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন খাতের বরাদ্দের অর্থ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ, জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন, বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের সাধারণ ও উপনির্বাচন, উন্নত মানের (স্মার্ট) জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই অব্যাহত রাখা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কার্যক্রম করতে হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নতুন অর্থবছরে আপাতত বরাদ্দ রাখা হয়নি। গত অর্থবছরে ডাটাবেজ সংরক্ষণে সার্ভার স্টেশন ভবন নির্মাণ, ইসি ভবন ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের ব্যয় থাকায় বরাদ্দও বেশি ছিল। এ অর্থবছরে নতুন নির্বাচন ভবন ও ইটিআই ভবনের কাজ শেষ হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাধারণ নির্বাচন এবং উপজেলা-ইউপি-পৌরসভায় উপনির্বাচন করার কথা রয়েছে ইসির। এ ছাড়া সংসদ ও স্থানীয় সরকারের কিছু উপনির্বাচনও হতে পারে এ অর্থবছরে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ ছিল এক হাজার ২৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ইসির জন্য বরাদ্দ ছিল ১,৪৯৯ কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এই অর্থবছরেই তৃণমূলের সব থেকে বড় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার ভোট আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ইসির বরাদ্দ ছিল ৮৪৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। তার আগে দশম সংসদ নির্বাচনের বছরে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ১ হাজার ৫৪৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৪৫ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায় ইসি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সময়ে বাজেট বরাদ্দ থাকবে বিগত সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।

উৎসবমুখর সংসদ ছিল : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এগারোবারের মতো জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট প্রস্তাব পেশ করার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। গতকাল তিনি বাংলাদেশের ৪৬তম বাজেট উপস্থাপন করেন। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে তিনি রেকর্ড গড়েন। এর আগে সিলেটের আরেক সন্তান প্রয়াত সাইফুর রহমান ১২টি বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গতকালের এই বাজেটটি ছিল আবুল মহিতের জীবনের টানা নবম বাজেট উপস্থাপন। এর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সরকারের আমলে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে তিনি দুটি বাজেট পেশ করেছিলেন। গতকাল সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল হালকা টিয়া রঙের ওপর বুটিক দানার জামদানি শাড়ি। থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ। অর্থমন্ত্রীর পরনে ছিল হালকা টিয়া রঙের সিল্কের পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট। অর্থমন্ত্রীর মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। হাতে ছিল একটি কালো ব্রিফ কেস। সংসদ কক্ষ ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। অর্থমন্ত্রীর বাজেট উপস্থাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ প্রায় সবাই সংসদ কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, পদস্থ সামরিক ও অসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দেশ-বিদেশের উচ্চপর্যায়ের সব ভিভিআইপির সমাগম ঘটেছিল সংসদ ভবনে। এ জন্য নেওয়া হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অতিথিদের আগমন উপলক্ষে লাল কার্পেট ও ফুলের টব দিয়ে সাজানো হয় সংসদ ভবন। সবাই ছিলেন বেশ হাসিখুশি মুডেই। সর্বত্র ছিল একটি উৎসব মুখর আমেজ। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিসহ উপস্থিত ছিলেন ভিভিআইপিরা : বাজেট অধিবেশন প্রত্যক্ষ করতে গতকাল সংসদ ভবনে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন। ভিভিআইপি গ্যালারিতে নিজ নিজ কামরায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও দাতা দেশসমূহের প্রতিনিধিরা অধিবেশন কক্ষের নির্ধারিত চেয়ারে বসে বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন। তাদের মাঝে অর্থমন্ত্রীর ইংরেজিতে প্রিন্ট করা বাজেট বক্তৃতা সরবরাহ করা হয়। ঘড়ির কাঁটায় ১টা ৩৫ মিনিটে বাজেট বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপিত বাজেট বক্তৃতার পুরোটাই বড় বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি সবার নজর কাড়ে। শারীরিক কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্পিকারের অনুমোদন নিয়ে বসেই বাজেট বক্তৃতা করেন। তবে অধিবেশনের শুরুতে অর্থমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বাজেট উত্থাপন শুরু করেন।

খসড়া বাজেট অনুমোদন : বাজেট বক্তৃতার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি বছর বাজেট উত্থাপনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী এই বৈঠকটি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।