ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ

0
484
blank
blank

মনিরুল ইসলাম রোহান: ছাত্রলীগের একের পর এক নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ। আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সংঘর্ষ হচ্ছে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হচ্ছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার খবর এখন মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত এক ছাত্রীকে হলের রুমে ডেকে নিয়ে রগ কাটার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বইছে নিন্দার ঝড়। এভাবে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ায় অনেকটা বিরক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ফলে এখনই ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা দরকার বলে মনে করছেন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

দলটির নেতারা মনে করেন, ছাত্রলীগের একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু সেই ইতিহাস ঐতিহ্যে এখন ভাটা পড়েছে। তাদের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনে দাগ পড়ছে। আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, বিরোধী দলে থাকাবস্থায় রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগ আর বর্তমান ছাত্রলীগে অনেক পার্থক্য আছে। এখন যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা শুধু ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। শুধু খাই খাই মনোভাব ছাড়া আর কিছু দেখি না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়েই ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ নেতাদের সতর্কও করেছেন বহুবার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ যখন পত্রিকায় অপকর্মের শিরোনাম হয় তখন সরকারের সব অর্জন ম্লান হয়ে যায়। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হলের সিট ও রুম ভাগাভাগি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়েও তিনি ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন একাধিক বার। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়ায় মঙ্গলবার মধ্য রাতে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগ চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মোর্শেদা আক্তারকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে যান কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা। পরে তাকে মারধর ও একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পায়ের রগ কেটে দেন এশা। অপর এক ছাত্রীর মাথায়ও আঘাত করা হয়। এ ঘটনায় ওই নেত্রীকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাকে বহিষ্কার করেছে। গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের ড. জাহেদ খানের কার্যালয়ে ঢুকে তাকে লাঞ্ছিত করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও তার অনুসারীরা। কোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়া সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।

চাঁদা দিতে না পারায় গত ৪ এপ্রিল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর কার্যালয়ে হামলা চালায় পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রনি মাতুব্বর ও তার লোকজন। ওই সময় চেয়ারটেবিল ভাঙচুর করা হয়। গত ১ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টেন্ডার নিয়ে আলিয়া মাদরাসা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগ কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। একই দিনে ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সরকারি হারিচ রোকেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিউলী রানীকে ছাত্রলীগ নেতা এনাম হাওলাদার দরজা বন্ধ করে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করে। উপজেলা ছাত্রলীগের এই সহসভাপতি ওই স্কুলের ছাদ দখল করে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। এর আগের দিন গত ২ এপ্রিল শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় এক কিন্ডারগার্টেনের কিশোরী আয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক। তিনি নলমুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।