ছাত্রলীগ নেতাদের টাকা দিয়েও এইচএসসি পরীক্ষায় বসা হলো না শিক্ষার্থীদের

0
693
blank
blank

মাগুরা: টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করায় ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা দিয়েছিল মাগুরা আদর্শ কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তবে ফরম পূরণ না করে দিয়ে টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন কলেজ ছাত্রলীগের দুই নেতা। এতে কলেজটির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছে। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আদর্শ কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় মাগুরা আদর্শ কলেজের বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের মোট ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তবে টেস্ট পরীক্ষায় পাস না করায় আরও শতাধিক নিয়মিত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারেনি। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ওই কলেজের ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে ফরম পূরণের টাকা দিয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাগুরা আদর্শ কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়া হয় গতকাল রোববার। অন্যদের সঙ্গে প্রবেশপত্র নিতে এসেছিলেন মানবিক বিভাগের ছাত্র রিয়াজ হোসেন। অন্য বন্ধুদের প্রবেশপত্র এলেও তারটা আসেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘তার ফরমই পূরণ হয়নি, প্রবেশপত্র আসবে কীভাবে?’ রিয়াজ অবশ্য কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে ফরম পূরণ বাবদ টাকা দিয়েছিলেন। সে জন্যই প্রবেশপত্র নিতে এসেছিলেন।

রিয়াজ হোসেন প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘আমাদের দুই বন্ধুর কাছ থেকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ১৬ হাজার ৬০০ টাকা নিয়েছে। কথা ছিল ফরম পূরণ করে দেবে তারা। তবে আমাদের প্রবেশপত্র আসেনি। দুদিন হলো টেলিফোনও ধরছে না ওই নেতা।’ তার মতো ৩০ জনের টাকা ওই নেতা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করে রিয়াজ।

একই ধরনের অভিযোগ মানবিক বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ইমন হোসেন শান্তরও। সে বলে, ‘পরীক্ষার ফরম পূরণের কথা বলে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হুদা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিন হোসেন আমার কাছ থেকে দুই দফায় ৮ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছেন।’

কলেজের নির্ধারিত ফি যেখানে ২ হাজার ৫০০ টাকা, আর ছাত্রলীগ নেতার কাছেই–বা ফরম পূরণের টাকা দিলেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইমন হোসেন বলে, এবার টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছর কিছু টাকা বেশি নিয়ে এমন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করিয়ে দেন নেতারা। ছাত্রলীগ নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, এবারও তাদের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করিয়ে দেবেন। তাই তাদের কাছে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এভাবে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইমন হোসেন।

অধ্যক্ষ সূর্যকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি রোববারই আমাদের নজরে আসে। ঠিক কতজন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে টাকা দিয়েছে, তা আমরা নিশ্চিত নই। তবে টেস্ট পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থীর কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। পরে জরুরি ভিত্তিতে রোববার বোর্ডে লোক পাঠানো হয়। আজ (সোমবার) প্রবেশপত্র পেয়ে তারা পরীক্ষায় বসেছে।’ তিনি আরও বলেন, বারবার বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয়েছে, অফিস বাদে যেন কারও সঙ্গে কোনো লেনদেন না করা হয়। এরপরও কেউ যদি ছাত্রলীগ বা অন্য কারও কাছে টাকা দেয়, সে বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।

এই ঘটনার খবর জানাজানি হওয়ার পর গতকাল রাতেই আদর্শ কলেজের ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মীর মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মাগুরা আদর্শ কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

অভিযুক্ত এই দুই ছাত্রলীগ নেতার মোবাইলে ফোন দিয়েও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।