জগন্নাথপুরে অবশেষে নলুয়ার হাওর তলিয়ে গেল, কৃষকদের আহাজারী

0
466
blank
blank

হিফজুর রহমান তালুকদার জিয়া,জগন্নাথপুর: অনেক চেষ্টার পর শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃৎ নলুয়ার হাওর তলিয়ে গেছে। চোখের সামনে নিজ জমির পাকা-আধা পাকা বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কৃষক-কৃষাণীরা আহাজারী করছেন। তাদের আহাজারী দেখে এলাকার লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ যেন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। কৃষকরা তাদের সোনার ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে শান্তনা দেয়ার ভাষা কারো জানা নেই।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জগন্নাথপুরে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে অকাল বন্যার সৃষ্টি হলে হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়ে। এ সময় পানির চাপে নলুয়ার হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের যৌথ উদ্যোগে দিন রাত বাঁধে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বারবার মাটি ভরাটের কাজ করা হয়। অবশেষে সকলের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে গত শনিবার রাত প্রায় ৩ টার দিকে নলুয়ার হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধের শালিকা নামক স্থান দিয়ে প্রথমে নদীর পানি বাঁধের উপর দিয়ে হাওরে প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে পানির চাপে বাঁধ ভেঙে যায়। দ্রুত গতিতে হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। এর আগে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে হাওরে প্রায় কোমড় পানি ছিল। এর মধ্যে বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢুকে পড়ায় সহজে হাওর তলিয়ে  যায়। এবার নলুয়ার হাওরে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।

রোববার সরজমিনে স্থানীয় কৃষক শেবুল মিয়া, রতন মিয়া, রিতি মিয়া, চান মিয়া, সমছু মিয়া, আয়াত উল্লাহ, সাদিক মিয়া, সাইফুল ইসলাম, রাহি মিয়া, রাজু মিয়া, জামিল আহমদ, আলমগীর হোসেন, আব্দুল হজি, সেকেল মিয়া, জমশেদ মিয়া, জুয়েল মিয়া, তোতা মিয়া, ওবায়দুর রহমান, হাজী আলফু মিয়া, কৃষাণী শাহিমা বেগমসহ অনেকে জানান, এবার নলুয়ার হাওর বেড়িবাঁধের কাজে অনেক অনিয়ম হয়েছে। বাঁধের কাছ থেকে মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কারণে ও বাঁধ তুলনামূলক নিচু হওয়ায় নদীতে পানি আসার পর বাঁধ পানির নিচে তলিয়ে অবশেষে ভেঙে যায়। হাওর তলিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের চোখের সামনে নিজ জমির সোনার ফসল তলিয়ে গেছে। তারা আরো বলেন, আমরা হাওর পাড়ের শ্রমজীবি মানুষ। বোরো ধানের উপর আমাদের পরিবারের লোকজন নির্ভরশীল। এখন হাওর তলিয়ে যাওয়ায় জমির ধান হারিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সারা বছর পরিবারের লোকজনকে নিয়ে কিভাবে চলবো তা বুঝতে পারছি না। চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.আরশ মিয়া জানান, বন্যার পানিতে বাঁধ ঝুঁকিতে পড়লে আমরা দিনরাত বাঁধে থেকে মাটি ভরাটের কাজ করেছি। অবশেষে আমাদের সকল কষ্ট ব্যর্থ করে দিয়ে বাঁধের উপর দিয়ে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এক পর্যায়ে পানির চাপে বাঁধ ভেঙে হাওরের অর্ধেক জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, এবার নলুয়ার হাওরে ৩৫ হাজার হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। হাওরে পানি ঢুকে বাকি ধান তলিয়ে গেলেও আরো দুই দিন পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটা যাবে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, বাঁধ ভেঙে হাওর তলিয়ে যায়নি। পানি উপচে উঠে বাঁধ তলিয়ে হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে।