জগন্নাথপুরে আ.লীগের দলীয় কোন্দলের প্রভাব নির্বাচনী মাঠে

0
531
blank
blank

 

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি: জগন্নাথপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নে আ.লীগের দলীয় কোন্দলের প্রভাব নির্বাচনী মাঠে পড়েছে। নির্বাচনী মাঠে ক্ষমতার লড়াইয়ে সিদ্দিক গ্রুপ এগিয়ে রয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানাগেছে, বিগত ২০০৫ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যু হলে জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-৩ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জোট সরকারের আমলে এ উপ-নির্বাচনে আ.লীগ অংশ গ্রহন না করায় দলের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে পিতার আসনে সামাদ পুত্র আজিজুস সামাদ ডন অংশ গ্রহন করেননি। তখন ডন নির্বাচনে অংশ নিলে অনায়াসে নির্বাচিত হতেন। দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করায় এখন পর্যন্ত খেশারত দিতে হচ্ছে সামাদ পুত্র ডনকে বলে সামাদ ভক্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে জানান।

অপরদিকে-এ উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক আমলা বর্তমান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান পান পাতা প্রতীক নিয়ে জোট প্রার্থী সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লী সরকার ক্ষমতায় আসে। এ সময় এমএ মান্নান আ.লীগে যোগদান করার মাধ্যমে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তখন সামাদ পুত্র ডন অনেক তদবির করেও দলীয় প্রতীক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এ সময় সামাদ ভক্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়। অবশেষে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে আবারো নির্বাচনে অংশ নেন এমএ মান্নান। এ নির্বাচনেও প্রাণপন তদবির করেও দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন সামাদ পুত্র ডন। তখন সামাদ ভক্ত নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনতার চাপের মুখে অনেকটা ক্ষোভে-দুঃখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ফুটবল প্রতীক নিয়ে এমএ মান্নানের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেন ডন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জগন্নাথপুরে আ.লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এ সময় এমএ মান্নানের পক্ষে কাজ করেন  সুনামগঞ্জ জেলা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমদ বলয়ের নেতাকর্মীরা। তখন একটি সিদ্দিক গ্রুপ ও আরেকটি ডন গ্রুপ নামে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে জগন্নাথপুরে যে কোন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান আলাদাভাবে পালন করে আসছে বিবদমান দুটি গ্রুপ।

এবারের স্থানীয় ইউপি নির্বাচনেও আ.লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপের প্রভাব পড়েছে নির্বাচনী মাঠে। এই প্রথম বারের মতো স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় বিবদমান দুটি গ্রুপের শীর্ষ নেতারা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক নৌকা পাইয়ে দিতে আ.লীগের কেন্দ্রীয় হাই কমা-ে জোর তদবির চালিয়ে যান। অবশেষে ৬ ইউনিয়নে সিদ্দিক গ্রুপ ২ টি ও ডন গ্রুপ ৪টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসেন। সিদ্দিক গ্রুপের দলীয় প্রতীক নৌকা প্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন, উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী দ্বীপক কান্তি দে দিপাল ও চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আরশ মিয়া। অপরদিকে ডন গ্রুপের দলীয় প্রতীক নৌকা প্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন, পাটলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আংগুর মিয়া, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাসান, আশারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আবু ইমানী ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আপ্তাব উদ্দিন বলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিপি গ্রুপ তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রাণপন চেষ্টা করলেও দলীয় প্রতীকের প্রতি অনেকটা উদাসীনতা দেখিয়েছেন বলে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে জানান। এর মধ্যে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে পাটলি ইউনিয়নের ডন গ্রুপের নৌকার মাঝি সরাসরি স্থানীয় আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় আ.লীগের সভাপতি/সম্পাদক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নে আ.লীগের দলীয় প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে মুল প্রতিদ্বন্ধিতা হয়। এর মধ্যে সিদ্দিক গ্রুপের ২ প্রার্থীর মধ্যে শুধু চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে আরশ মিয়া নির্বাচিত হন এবং ডন গ্রুপের ৪ প্রার্থীর মধ্যে শুধু আশারকান্দি ইউনিয়নে শাহ আবু ইমানী নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া পরোক্ষভাবে সিদ্দিক গ্রুপ সমর্থিত পাটলি ইউনিয়নে সিরাজুল হক ও সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নে তৈয়ব কামালী নির্বাচিত হন এবং পরোক্ষভাবে ডন গ্রুপ সমর্থিত কলকলিয়া ইউনিয়নে আব্দুল হাসিম নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনী ক্ষমতার লড়াইয়ে সিদ্দিক গ্রুপ এগিয়ে রয়েছেন। তাছাড়া বিগত জগন্নাথপুর পৌরসভা নির্বাচনেও স্থানীয়ভাবে দলের মনোনীত সিদ্দিক গ্রুপের মেয়র প্রার্থী মিজানুর রশীদ দলীয় প্রতীক নৌকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এ সময় সিদ্দিক বলয়ের শীর্ষ নেতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ডন গ্রুপের মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল মনাফ আ.লীগের কেন্দ্রীয় হাই কমা- থেকে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে এসে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন। তবে তৃণমুল পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জগন্নাথপুরে আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ। আর কোন রাজনৈতিক দল নয়। এখানে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে দলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তাই জগন্নাথপুর উপজেলার কাঙ্খিত উন্নয়নের স্বার্থে আ.লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপকে একত্রিত করে জগন্নাথপুরের রাজনৈতিক সংকট থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু পদক্ষেপ কামনা করছেন দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের উপজেলাবাসী।