জগন্নাথপুরে ইউনিয়ন নির্বাচনে যে কারণে বিএনপির বিপর্যয়

0
531
blank

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি: গত ২৮ মে জগন্নাথপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত কোন প্রার্থী বিজয়ী না হওয়ায় অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিএনপি। বিএনপিতে দলীয় গ্রুপিং, প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি ও শরিক দলের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে এমন বিপর্যয় হয়েছে বলে দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা জানান।

দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে জানান, বিগত প্রায় ১৮ বছর ধরে জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন জগন্নাথপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তার হোসেন। দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে আক্তার হোসেনের একক নেতৃত্বে জগন্নাথপুরে ধারাবাহিকভাবে বিএনপি শক্তিশালী হয়ে উঠে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আ.লীগের ঘাটিতে বিএনপি শক্ত অবস্থান নেয়। রাজনৈতিক মাঠে সকল কর্মসূচি আ.লীগের সাথে পাল্লা দিয়ে পালন করে বিএনপি। এর মধ্যে বিগত প্রায় ২ বছর আগে জগন্নাথপুরে কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এ সময় লে. কর্ণেল অব. সৈয়দ আলী আহমদ জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নির্বাচিত হন। এরপর শুরু তাদের মধ্যে রাজনৈতিক কোন্দল। তখন বিএনপিতে একটি আক্তার গ্রুপ ও আরেকটি কর্ণেল গ্রুপ নামে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। কিছু দিন তারা রাজনৈতিক সকল কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও এক পর্যায়ে আক্তার গ্রুপ অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বর্তমানে কর্ণেল গ্রুপকেও খুব একটা মাঠে দেখা না গেলেও রাজনৈতিক গ্রুপিং চলছে। এবারের ইউনিয়ন নির্বাচনেও তাদের গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়েছে। সেই সাথে প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি ও শরিক দলের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের করুণ পরাজয় হয়েছে বলে দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

জানাগেছে, বিগত প্রায় ২ বছর ধরে নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছেন উপজেলা বিএনপি নেতা কলকলিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী জাবেদ আলম কোরেশী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে জাবেদ আলম কোরেশীর সরব প্রচারণা ও গণসংযোগে নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠে। এছাড়া বিগত নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্ধিতা করায় এলাকায় জাবেদ আলম কোরেশীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে জাবেদ আলম কোরেশী অংশ নিলে অনায়াসে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। এছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনতাকে সাথে নির্বাচনী মাঠে তৎপর ছিলেন। মুজিবুর রহমান নির্বাচনে অংশ নিলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাছাড়া উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নে বিএনপি নেতা মাওলানা দবিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে তৎপর রয়েছেন। বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় এলাকায় দবিরুল ইসলামের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপির মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু হয়। এ সময় বিএনপির সাথে পাল্লা দিয়ে এ বাণিজ্যে অংশ বসায় তাদের শরিক দল জমিয়ত। স্থানীয় বিএনপি ও জমিয়ত পৃথকভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক পাইয়ে দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাই কমা-ে জোর লবিং চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে বিএনপি ৫ টি ও জমিয়ত ২ টি পায়। অবশেষে জমিয়তের যোগ্য প্রার্থী না থাকায় তাদের ২ টিও বিএনপিকে দেয়া হয়। এবারের নির্বাচনে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নে জনপ্রিয় ব্যক্তি জাবেদ আলম কোরেশীকে বাদ দিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিক মিয়াকে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করায় বিএনপির ভরাডুবি হয়। পাটলি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুর রহমান রফু মুল প্রতিদ্বন্ধিতায় আসতেই পারেননি। চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে জনপ্রিয় ব্যক্তি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুজিবুর রহমানকে বাদ দিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুর রবকে দেয়ায় বিএনপির ভরাডুবি হয়। তবে সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ মোছাব্বির আহমদ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন। এ ইউনিয়নে বিএনপির গ্রুপিং ও শরিক দলের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি বলে অনেকে জানান। তা না হলে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আশারকান্দি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী দাঁড়াতেই পারেননি। তবে পাইলগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী জালাল উদ্দিন মুল প্রতিদ্বন্ধিতায় আসতে না পারলেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী দবিরুল ইসলাম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন।

এবারের নির্বাচনে কলকলিয়া ইউনিয়নে জাবেদ আলম কোরেশী, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে মুজিবুর রহমান ও পাইলগাঁও ইউনিয়নে দবিরুল ইসলামকে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থী করা হলে তাঁরা ৩ জনই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি হওয়ায় কোন ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হননি। বিএনপিতে দলীয় কোন্দল, প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি ও শরিকদলের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে নির্বাচনে বিএনপির এমন করুণ বিপর্যয় হয়েছে বলে তৃণমুল পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

অপরদিকে-আগামিকাল শনিবার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে আক্তার গ্রুপের বিএনপি প্রার্থী সামছুল ইসলাম অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান।