জগন্নাথপুরে নিরপরাধ যুবক জনিকে আসামী করে মামলা দায়েরে এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও নিন্দা

0
532
blank
blank

মোঃ মুন্না মিয়া: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ভাটির জনপদ চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের বাউধরন গ্রামের মৃত দিলু মিয়ার মেয়ে সোনিয়া বেগম ও একই ইউনিয়নের খাগাউড়া গ্রামের মনাই উল্ল্যা উরফে মনাই সাধুর ছেলে রুবেল মিয়ার দীর্ঘ দিনের গভীর প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে অবশেষে প্রেমিকার চাচা কর্তৃক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলায় কারাভোগ করছেন প্রেমিক রুবেল। বাউধরন গ্রামের ওয়ারিছ উল্ল্যার পুত্র সোহেল মিয়া বাদী হয়ে ৭জুলাই জগন্নাথপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলায় রুবেল মিয়া ছাড়াও খাগাউড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহিদের পুত্র হাজি শরিফুল হক জনি মিয়াকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে গ্রামের লোকজনদের সাথে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এলাকার যুব সমাজের অহংকার খাগাউড়া গ্রামের সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ন¤্র, ভদ্র নিরপরাধ যুবক হাজি শরিফুল হক জনিকে হয়রানীসহ সামাজিকভাবে মান ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
মামলার ঘটনায় খাগাউড়া গ্রামসহ আশ-পাশ এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। হঠাৎ করে এধরনের একটি ঘটনায় হাজি শরিফুল হক জনির নাম উল্লেখ করায় মামলাটির সুষ্টু তদন্তের দাবী জানিয়েছেন এলাকার নারী-পুরুষরা।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) মামলায় উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে খাগাউড়া ও বাউধরন গ্রামের লোকজনদের সাথে কথা বলে জানাযায় রুবেল-সোনিয়ার মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্কের কাহিনী। লোকজন জানান, প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সোনিয়ার পরিবার রুবেলকে মেনে না নেয়ায় ক্ষোভে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে রুবেল-সোনিয়ার গভীর প্রেমের সম্পর্কের ঘটনা থেকে লোকজন আরো জানান, বাউধরন গ্রামের মৃত দিলু মিয়ার মেয়ে সোনিয়া বেগম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি হয়। ২০১৭ সালের এস এস সি পরীক্ষায় সোনিয়া বেগম উত্তীর্ন হলে পারিবারিক সমস্যার কারনে সে আর কলেজে ভর্তি হয়নি। পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়ে প্রায় ৩বছর ধরে উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী খাগাউড়া গ্রামের রুবেল মিয়ার সাথে সোনিয়া বেগমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এভাবে গভীর থেকে গভীরে চলে যায় রুবেল-সোনিয়ার প্রেমের সম্পর্কটি। একজন আরেক জনকে কাছে পেতে উম্মাদ হয়ে উঠে।
বিধি বাম: প্রেমিক যুগলের ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায় উভয়ের পরিবারের মধ্যে। বাধ সাধেন উভয়ের পরিবার। এনিয়ে ২০১৬সালের শেষের দিকে রুবেল ও সোনিয়ার পরিবারের মধ্যে গ্রামে বেশ কয়েকটি শালিষ বৈঠক হয়। বৈঠকে শালিষ ব্যক্তিগন প্রেমিক যুগলকে তাদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন পুরনে উভয়ের পরিবারকে সামাজিক অনুষ্টানের মাধ্যমে নিস্পত্তি করার জন্য আহবান জানালে উভয়ের পরিবার এতে সম্মতি প্রকাশ করেন। হঠাৎ করে আবারো বেঁকে বসেন সোনিয়ার পরিবার। একটি বেকার যুবকের কাছে শিক্ষিত মেয়েকে তুলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং রুবেল মিয়ার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে সোনিয়াকে শ্বাসানো হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের শুরু থেকেই রুবেল-সোনিয়ার আর দেখা হয়নি। এসব ঘটনা বর্ননা করেন নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে খাগাউড়া ও বাউধরন গ্রামের শতাধিক লোকজন।
এদিকে মামলার বাদী সোহেল মিয়াকে বাড়িতে খোজ করা হলে পরিবারের লোকজন জানান, কোথায় আছেন জানা নেই।
মোবাইল ফোনে বাদি সোহেল মিয়ার সাথে মামলার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে সোহেল মিয়া জানান, ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে আপোষ মিমাংসার প্রস্তুতি চলছে। আমি জরুরী প্রয়োজনে ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলায় আছি।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল মিয়া এখন আর কথা বলতে পারবনা বলে ফোনটি কেঁটে দেন।
বাউধরন গ্রামে সোনিয়া বেগমের বাড়িতে গিয়ে সোনিয়া বেগমসহ পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। সোনিয়াসহ তার পরিবারের লোকজন কোথায় রয়েছেন জানতে চাইলে স্থানীয় লোকজন এ ব্যপারে কিছুই জানেন না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী রুবেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি নিবিরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।