জগন্নাথপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার আকুতি; মরে গেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চাই না

0
500
blank
blank

মো.শাহজাহান মিয়া: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন রোগাক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সেই বীর সেনানির বেঁচে থাকার আকুতি যেন কারো কর্ণপাত হচ্ছে না। ক্ষোভে-দুঃখে তিরি মানসিক ও শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন।

জানাগেছে, ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিকামী জনতা পাক হানাদার বাহিনীর সাথে দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে লিপ্ত হন। তখন জগন্নাথপুর পৌর শহরের ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সিলেট এমসি কলেজের ছাত্র সাজ্জাদ হোসাইন বি/এ পরীক্ষা দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের মেঘালয় প্রদেশে ইকো-ওয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দীর্ঘ এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। তখন ৩০০ জনের ৬ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার ‘ঈগল’ কোম্পানী কমা-ার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন। এ সময় সাজ্জাদ হোসাইনের নেতৃত্বে ৬ প্লাটুনের ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ সদর, সুনামগঞ্জের ষোলঘর ও জগন্নাথপুরে এসে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং অনেক স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ করেন।

দেশ স্বাধীনের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ারের দায়িত্ব পালন করনে। বর্তমানে সেই বীর সেনানি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন রোগাক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

শনিবার বিকেলে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ এলাকায় কথা হয় সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইনের সাথে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ এক বছর ধরে ব্রেইন হেমারেজ রোগে ভূগছেন। দীর্ঘ দুই মাস তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাতেও তিনি সুস্থ্য হননি। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অপারেশনের মাধ্যমে ব্রেইনে থাকা রক্ত বের করতে হবে। এতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা খরচ হবে। এতো টাকা জোগাড় করতে না পারায় তিনি চিকিৎসা করাতে পারছে না। যে কারণে দীর্ঘ এক বছর ধরে তিনি রোগে ভূগছেন।

এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার চিকিৎসার জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতি ৩ মাস পরপর মাত্র ৩০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা পাই। তা দিয়ে খরচ চলে না। তবে কিভাবে চিকিৎসা করাবো। এছাড়া তিনি বিয়ে না করায়, তাঁর ব্যক্তি জীবনে খুবই কষ্টে আছেন। তাঁর ভাতিজা তাঁকে ভরণ-পোষন করেন। বর্তমানে ভাতিজা অসুস্থ্য থাকায় পারিবারিক ভাবে কেউ তাঁর দেখভাল করছেন না। তিনি অসহায় হয়ে মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কি অপরাধ করেছি। আমি কোন রাজনৈতিক নেতা না হওয়ায় আজ চিকিৎসা অভাবে মরতে বসেছি। তিনি বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে বলেন, চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে চাই। আমি মরে গেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চাই না।