জগন্নাথপুরে ৭ ইউনিয়নে জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ, দলীয় প্রতীক পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

0
503
blank
blank

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি: নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ মে জগন্নাপুর উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন থাকলেও হাইকোর্টে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এবার মিরপুর ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বত্র জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। এবার স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় দলীয় প্রতীক পেতে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। দলীয় প্রতীক বরাদ্দের শেষ মুহুর্তে এসে দলীয় প্রতীক পেতে তাদের দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে হার্ডলাইনে লবিং করছেন প্রার্থীরা। দলীয় প্রতীক পেলে সহজে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দলীয় প্রতীক পেতে দলের একাধিক প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। অবশেষে কে পাচ্ছেন দলীয় প্রতীক, তা দেখার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তারা। যদিও অনেক আগ থেকেই অধিকাংশ প্রার্থীরা যারযার এলাকায় গিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নের সম্ভাব্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী ও সাধারণ ওয়ার্ডের পুরুষ সদস্য প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ পর্যন্ত ৭ ইউনিয়নে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হচ্ছেন, উপজেলার ১নং কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ্ব আব্দুল হাসিম (আ.লীগ), তরুণ প্রতিভাবান আলাল হোসেন রানা (আ.লীগ), দ্বীপক কান্তি দে (আ.লীগ), আরেক তরুণ প্রতিভাবান জাবেদ আলম কোরেশী (বিএনপি), যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিক মিয়া (বিএনপি), আব্দুল হামিদ (বিএনপি) ও সিদ্দিকুর রহমান (বিএনপি)। যদিও এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাজ্জাদুর রহমান এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। ২ নং পাটলি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিরাজুল হক (আ.লীগ). সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আব্দুর রকিব (আ.লীগ). সাবেক চেয়ারম্যান আংগুর মিয়া (আ.লীগ), মোঃ দবির মিয়া (জাপা), যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম রফু (বিএনপি), যুক্তরাজ্য প্রবাসী আজিজুল ইসলাম আসিফ (বিএনপি), যুক্তরাজ্য প্রবাসী হারুন মিয়া (বিএনপি) ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছদরুল ইসলাম সুফি (স্বতন্ত্র)। ৩ নং মিরপুর ইউনিয়নে সীমানা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এবারসহ দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না। ৪ নং জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়ন ১৯৯৯ ইং সালে পৌরসভায় উন্নীত হয়। ৫ নং চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আরশ মিয়া (আ.লীগ), শাহিদুল ইসলাম বকুল (আ.লীগ), আব্দুল গফুর (আ.লীগ). যুক্তরাজ্য প্রবাসী জিল্লুর রশীদ লিল (আ.লীগ). সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খসরু (বিএনপি) ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুজিবুর রহমান (বিএনপি)। ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ্ব মজলুল হক (আ.লীগ), সাবেক চেয়ারম্যান আমেরিকা প্রবাসী আব্দুল হাফিজ (আ.লীগ), রেজাউল করিম রিজু (আ.লীগ). হাজী সুন্দর আলী (আ.লীগ), ডাঃ ছদরুল ইসলাম (আ.লীগ). শহিদুল ইসলাম রানা (আ.লীগ). সাহেদ আলী সরকার (আ.লীগ), আজমল হোসেন মিঠু (আ.লীগ), হুমায়ূন আহমদ তালুকদার (আ.লীগ), শামসুল ইসলাম (বিএনপি), আনহার মিয়া (বিএনপি), আমান উল্লাহ লেচু (বিএনপি) ও বর্তমান ইউপি সদস্য মুক্তার মিয়া (জাপা)। ৭ নং সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসান (আ.লীগ), যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ আব্দুল হাসিব (আ.লীগ), যুক্তরাজ্য প্রবাসী তৈয়ব কামালী (আ.লীগ), সালেহ আহমদ ছালিক (বিএনপি) ও সৈয়দ মোসাব্বির আহমদ (বিএনপি)। ৮ নং আশারকান্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ূব খান (আ.লীগ), সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল আহাদ মদরিছ (আ.লীগ), সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ আবু ইমানী (আ.লীগ), আজাদ কবেরী (আ.লীগ) ও রাজন মিয়া স্বতন্ত্র। ৯ নং পাইলগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আপ্তাব উদ্দিন (আ.লীগ), সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী মঞ্জুর আলী আফজল (আ.লীগ), সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুন্দর উদ্দিন (আ.লীগ) ইকবাল হোসেন (আ.লীগ), যুক্তরাজ্য প্রবাসী জালাল উদ্দিন (বিএনপি), যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামীম হোসেন (বিএনপি), মাওলানা দবিরুল ইসলাম (বিএনপি) ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ্ব মখলিছ আলী (স্বতন্ত্র))।

এ ব্যাপারে বুধবার দিন ব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরজমিনে স্থানীয় ভোটার সাথে আলাপ হয়। এ সময় একাধিক ভোটাররা জানান, ১ নং কলকলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আলাল হোসেন রানা ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাসিম এবং বিএনপির জাবেদ আলম কোরেশী প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ ও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন। এ ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করতে ভূল করলে উভয় দলের ভরাডুবি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ২ নং পাটলি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক, সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আব্দুর রকিব, আংগুর মিয়া ও জাপার দবির মিয়া জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন। ৫ নং চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আরশ মিয়া প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ ও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন। এ ইউনিয়নের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে তাকে আবারো প্রয়োজন বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া শাহিদুল ইসলাম বকুল ও বিএনপির মুজিবুর রহমান এগিয়ে আছেন। ৬ নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মজলুল হক জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া দলীয় তৃণমুল নেতাদের ভোটে ডাঃ ছদরুল ইসলাম ইসলাম এগিয়ে আছেন। তাছাড়া রাজনৈতিক ও স্থানীয় জনপ্রিয়তায় রেজাউল করিম রিজু এগিয়ে রয়েছেন বলে অনেকে জানিয়েছেন। ৭ নং সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসান জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। এ ইউনিয়নে তিনি অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান। ৮ নং আশারকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আইয়ূব খান প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ ও সর্বাধিক জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন। এ ইউনিয়নের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে তাকে আবারো চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান ভোটাররা। তবে এ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের আরেক প্রার্থী শাহ আবু ইমানী রাজাকার পুত্র হওয়ায় তার জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে এবং নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এছাড়া অপর প্রার্থী আব্দুল আহাদ মদরিছ দেশে এসেই আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে গেছেন। এ ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করতে ভূল হলে দলের ভরাডুবি হতে পারে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন। ৯ নং পাইলগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়াম্যান আপ্তাব উদ্দিনের সর্বাধিক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁর পিতা প্রয়াত হাজী ছাইম উদ্দিন ৩ বারের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনি ২ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বর্তমানে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে আপ্তাব উদ্দিন এগিয়ে আছেন। এ ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করতে ভূল করলে দলের ভরাডুবি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলীয় অনেক নেতাকর্মীসহ স্থানীয় জনগণ। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দে কোন ভূল না হলে আওয়ামীলীগের অধিকাংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।