জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচনে মর্যাদার লড়াই, জামায়াত ও ডন গ্রুপ ফ্যাক্টর

0
731
blank

জগন্নাথপুর থেকে আলী আছগর ইমন: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামিকাল ৬ মার্চ সোমবার দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের লক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, আনসারসহ বিপুল সংখ্যাক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ৮ টি ইউনিয়নের মোট ৮৭ টি কেন্দ্রে একটানা ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মোট ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪৯৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার দল আ.লীগের জন্য অস্তিত্ব ধরে রাখার লড়াই। বিএনপির জন্য জনমত যাচাই ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। আর আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য মর্যাদার লড়াই। মর্যাদার এ লড়াইয়ে কে বিজয়ী হচ্ছেন, এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে দেশে-বিদেশে থাকা ভোটারদের মধ্যে। তবে এবারের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ ডন অনুসারীরা বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের সমর্থন কার দিকে যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত রহস্যজনক। জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রার্থী না থাকায় ভোট কোন দিকে যাবে এখনো তা জানা যায়নি, ধারনা করা হচ্ছে তাদের ভোট যে দিকে যাবে তার পাল্লা বারি হবে। তবে ডন অনুসারীদের ভোট বিদ্রোহী প্রার্থীদের দিকে যেতে পারে বলে ডন গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন।
এবারের নির্বাচন নিয়ে আ.লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জগন্নাথপুরে আ.লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে একটি মান্নান গ্রুপ ও আরেকটি ডন গ্রুপ নামে এলাকায় পরিচিতি পায়। তারপর থেকে তারা দলীয় সকল কর্মকান্ড পৃথকভাবে পালন করে আসছেন। বিগত পৌরসভা ও ইউনিয়ন নির্বাচনেও তাদের দলীয় গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়ে মাঠে। প্রতিটি গ্রুপ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে দলীয়ভাবে মনোনীত করা ও নির্বাচনে বিজয়ী করা নিয়ে সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করেছেন। তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রকাশ্যে ডন গ্রুপের কোন প্রার্থী নেই। যে কারণে তাদের ভূমিকা রহস্যজনক। যদিও নির্বাচনের পর ভোটের ফলাফলে তাদের অবস্থান পরিস্কার হবে বলে অনেকে জানান।
এছাড়া নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আকমল হোসেনের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন আ.লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদির আহমদ মুক্তার পক্ষের পরোক্ষভাবে দলীয় কিছু নেতাকর্মী ও প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ কাজ করছেন। দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজন কুমার দেব অনেকটা নিজের সমর্থকদের শক্তি নিয়ে কাজ করছেন। বিদ্রোহী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল উদ্দিন জগন্নাথপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হওয়ায় যুবলীগ নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। দলীয় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজেরা বারী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
এদিকে- বিএনপির মধ্যেও গ্রুপিং রয়েছে। বিএনপির জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়। তবে নির্বাচন নিয়ে বিবদমান দুই গ্রুপের সাথে বিএনপির দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমানের কোন সমন্বয় নেই। প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে কাজ করছেন। দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুহেল আহমদ খান টুনুর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মী ও জনতা কাজ করছেন। এছাড়া বিএনপির মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও স্বতন্ত্র ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাদের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, বিগত ইউনিয়ন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ২০দলীয় জোটের প্রার্থী চুড়ান্ত করায় সারা উপজেলার একটি ইউনিয়নেও ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারে নি। ফলে এবারের উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের ভোটকে ফ্যাক্টর হিসেবে মনে করেন অনেকেই। ধারনা করা হয়, জগন্নাথপুর উপজেলায় জামায়াতের নিরব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তা প্রমান করেছিল কলকলি ইউনিয়নে তাদের চেয়ারম্যান প্রর্থীর বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ে। তখন উপজেলার সব ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত সকল প্রার্থী হেরে যায়। জামায়াত ১টি ইউনিয়নে প্রার্থী দিয়ে বিজয় চিনিয়ে নেয়। তবে বিগত ইউনিয়ন নির্বাচনে ২টি ইউনিয়নে পরাজয়ের পিছনে অনেকেই জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা শাহিনুর পাশাকে দায়ী করেন। হঠকারী সিদ্ধান্তের কারনে তিনি এখন জগন্নাথপুরে ইমেজ সংকটে রয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা হলেন, আ.লীগের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আকমল হোসেন (নৌকা), ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজন কুমার দেব (নৌকা), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাজেরা বারী (নৌকা), বিএনপির দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব আতাউর রহমান (ধানের শীষ), ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুহেল আহমদ খান টুনু (ধানের শীষ), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা আক্তার (ধানের শীষ), আ.লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদির আহমদ মুক্তা (আনারস), আ.লীগের আরেক বিদ্রোহী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল উদ্দিন (তালা), জমিয়তের মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ ছলিম আহমদ কাসেমী (খেজুর গাছ), স্বতন্ত্র ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়জুল হক (টিউবওয়েল) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুফিয়া খানম সাথী (ফুটবল)।