sromপ্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান করে আছে। দেশের ক্রান্তিকালেও প্রবাসীরা অর্থনীতির গতি প্রবাহ অব্যাহত রেখে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম বহাল রাখতে অবদান রেখেছেন। সরকারের উচ্চমহল থেকে বারবার প্রবাসীদের এই অবদানের বিষয়টি গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যারা মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়ে বিদেশের মাটিতে শ্রম বিক্রি করে দেশের জন্য এত বড় অবদান রাখেন তাদের অধিকাংশের বিদেশ যাত্রা সহজ হয় না, বিশেষ করে পুরুষদের। কারণ আমাদের জনশক্তি রফতানির পুরো বিষয়টিই দালালনির্ভর এবং এরা শুধু বেপরোয়াই নয়, ভয়ঙ্করও বটে। কোনো একটি ভিসা পেতে বিদেশগামীদের যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় এর অধিকাংশই যায় এসব দালালের পকেটে। যদিও এসব দেখভাল করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নামে একটি শক্তিশালী মন্ত্রণালয় রয়েছে। তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)র সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এই মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ১০ মার্চ ২০১৭ তারিখ বিভিন্ন দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদে যে তথ্যবহুল চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে যাওয়া বিদেশগামী পুরুষদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হচ্ছেন এবং ভিসা বা চাহিদাপত্র কিনতে শুধু ২০১৬ সালেই ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পাচার হয়েছে- এমন তথ্য রয়েছে টিআইবি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে।
২০১৬ সালের মে থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার, শ্রম অভিবাসনসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা, সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও দলিল পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় এবং ৯ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখ ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন: সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে ক্রমশই এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এর নেপথ্য কাহিনী জানতে আগ্রহ প্রকাশও করছেন। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ মুছে বাংলাদেশ এখন উদীয়মান সফল রাষ্ট্র। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে অধিক জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ এবং কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা তিন কোটির ওপরে। এত বিপুলসংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার সক্ষমতা বাংলাদেশ এখনো অর্জন করেনি। ফলে অনেকেই পরিবারের সচ্ছলতা এবং নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিদেশ গমন করেন। প্রবাসে অমানবিক পরিশ্রম করে আয় করা অর্থ দেশে পাঠিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো ছাড়াও দেশীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখেন। তবে যারা বিদেশ যেতে চান তাদের সবার পক্ষে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশ যাওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ধার-দেনা কিংবা জমিজমা বন্ধক বা অলঙ্কার বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে ঋণ পরিশোধ করা, বন্ধকী সম্পত্তি মুক্ত করা, পরিবার পরিচালনাসহ নানা দায় মাথায় নিয়েই তাদের প্রবাসের দিনগুলো অতিবাহিত করতে হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার বিদেশ গমনের জন্য টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করে দিলেও সংশ্লিষ্টরা তা মানেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। যাদের এসব অনিয়ম দূর করার কথা উল্টো তারাই অন্যায়কারীদের সহায়তা করেন। এসব অভিযোগের সত্যতা যে নেই তাও নয়। এদের কারণেই জনশক্তি রফতানিতে রেকর্ড অতিক্রম করলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছে না সরকার তথা দেশবাসী। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে বিদেশ গমনকারীদের পথ সুগম করা জরুরি বলে মনে করি।