জমিয়তে মধ্যরাতের ঝড়: ওয়াক্কাছ নির্বাহী সভাপতি, কাসেমী মহাসচিব!

0
678
blank
blank

সালমান তারেক শাকিল: ভাঙতে ভাঙতে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলো ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। শুক্রবার বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলেছে নাটকীয়তা। এরই মধ্যে মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাছসহ তার অনুসারীদের মজলিসে আমেলার (নির্বাহী পরিষদ) বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনাও ঘটেছে। অবশেষে মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২৪ বছরের অভিজ্ঞ মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাছকে নির্বাহী সভাপতি ও মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করার। জমিয়তের শীর্ষ নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে, মুফতি ওয়াক্কাছ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছিল, মোটামুটি ব্রেক হয়েছে, এটুকু বলতে পারি।’

সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বারিধারা মাদ্রাসায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মজলিসে আমেলার বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সাতজন নেতাকে দিয়ে একটি নির্বাচন প্যানেল কমিটি করার। ওই কমিটিতে নিজেদের অনুসারী নেতাদের রাখা, না রাখা নিয়ে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে  রাত ১০টার দিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন বর্তমান মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাছ।

সূত্রের দাবি, নির্বাচক কমিটিতে মুফতি ওয়াক্কাছ মাওলানা আবুদর রহীম ইসলামাবাদী ও শেখ মুজিবুর রহমানকে রাখার প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবের মধ্যে একটি রেখে শেখ মুজিবকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব উঠলেই তিনি বৈঠককক্ষ ত্যাগ করেন। মূলত ওয়াক্কাছের অভিযোগ ছিল, তার প্রস্তাবের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি।

সূত্র জানায়, মুফতি ওয়াক্কাছের সঙ্গে বেরিয়ে আসার সময় যুগ্ম-মহাসচিব মহিউদ্দীন ইকরাম, সিলেট বিভাগীয় নেতা, বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব উবায়দুল হকের জামাতা মাওলানা মানসুরুল হক রায়পুরী, কেন্দ্রীয় নেতা অলিউল্লাহ আরমানসহ অনেক নেতাকর্মী ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুফতি ওয়াক্কাছ দাবি করেন, বেরিয়ে আসার সময় তার সঙ্গে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই ছিলেন।

জমিয়তের বারিধারা সূত্র জানায়, মুফতি ওয়াক্কাছ হল ত্যাগ করার পর বারিধারা মাদ্রাসার গেট থেকে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী ও নূর হোসাইন কাসেমী। এরপর প্রায় ১৫ মিনিট পর ফের বারিধারা মাদ্রাসা ত্যাগ করেন মুফতি ওয়াক্কাছ। তিনি ও তার অনুসারীরা রামপুরার নতুনবাগ মাদ্রাসায় অবস্থান নেন। শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মুফতি ওয়াক্কাছসহ তার অনুসারীরা এই মাদ্রাসাতেই বৈঠক করছেন। মাদ্রাসাটি জমিয়তের ঢাকা মহানগর অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি পরিচালনা করছেন মাওলানা মহিউদ্দীন ইকরাম।

জানা গেছে, বারিধারা মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে এলে জমিয়তের কয়েকজন নেতা মুফতি ওয়াক্কাছের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর মূলত এক ধরনের সমঝোতা হয়। আর এই সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচক কমিটি নতুন কমিটির খসড়াও চূড়ান্ত করে ফেলে।

এই নতুন কমিটিতে নির্বাহী সভাপতি হিসেবে মুফতি ওয়াক্কাছ, মহাসচিব হিসেবে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানতে চাইলে মুফতি ওয়াক্কাছ রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি শুনেছি। কাগজপত্রে সাইনও হয়েছে শুনেছি। বাকিটা শনিবার কাউন্সিলে দেখা যাবে।

জানা গেছে, জমিয়তের মধ্যে মুফতি ওয়াক্কাছের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। দলের নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন এমনকি সারাদেশে সব শাখাতেই তার প্রভাব রয়েছে।

যদিও বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর প্রশ্রয়ে একটি বিরোধী গ্রুপ তাকে মহাসচিব পদ থেকে সরাতে তৎপর ছিল। এই গ্রুপে মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মাওলানা জিয়াউদ্দীনসহ আরও অনেকে ছিলেন।

উল্লেখ্য, আবদুর রব ইউসূফী বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। গত বছর তিনি দলত্যাগ করে জমিয়তে যোগ দেন। এর আগে তিনি অবিভক্ত খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আহমদ আবদুল কাদেরের (বর্তমান খেলাফত মজলিসের মহাসচিব) সঙ্গে দ্বন্দ্বে দল ভেঙে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব হন। তবে মুফতি ওয়াক্কাছের অনুসারী এক নেতার দাবি, জমিয়তের সভাপতি হিসেবে শায়খ আবদুল মোমিন সাহেব থাকলেও মূলত নির্বাহী সভাপতির পদটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়াক্কাছের অনুসারী এক নেতার সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী সভাপতি বা আগের পদ মহাসচিব না পেলে মুফতি ওয়াক্কাছের নেতৃত্ব নতুন জমিয়ত দাঁড়িয়ে যেত। এমনকি শনিবারই অন্য অংশের কাউন্সিলের পাশাপাশি রাজধানীর কোনও অডিটোরিয়ামে তারা নতুন কমিটির ঘোষণা দিত। এই কমিটিতে হবিগঞ্জের মাওলানা তাফাজ্জুল হক, শায়খ নোমানের নাম সভাপতি হিসেবে প্রস্তুত ছিল। পাশাপাশি মানসুরুল হক রায়পুরী, মহিউদ্দীন ইকরাম, অলিউল্লাহ নোমানসহ অনেকে কেন্দ্রীয় বড় পদ পেতেন। তবে, বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে মুফতি ওয়াক্কাছ বলেন, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বারিধারা থেকে প্রস্তাব এসেছে। আমরা বসেছি।

এরপর, রাত ১ টার দিকে আরও এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুক্রবার রাতেই জমিয়তের সহ-সভাপতি আবদুর রহীম ইসলামাবাদীর মাধ্যমে মুফতি ওয়াক্কাছের কাছে খবর পাঠানো হয়, যে তাকেই নির্বাহী সভাপতি করা হয়েছে। মাওলানা কাসেমীকে মহাসচিব করা হয়েছে। পাশাপাশি সভাপতি শায়খ আবদুল মোমিনও এ প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বলে জমিয়তের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়।

তবে মুফতি ওয়াক্কাছের ঘনিষ্ট একনেতা জানান, সকালে ইতিবাচক খবর আসা সাপেক্ষেই মুফতি ওয়াক্কাছ কাউন্সিলে অংশ নেবেন।

জানতে চাইলে মুফতি ওয়াক্কাছ বলেন, আমিও শুনেছি। বাকিটা কাল দেখতে পাবেন। তিনি এও বলেন, দলের জন্য তো জীবন, পরিশ্রম সবই দিয়েছি। দীর্ঘ ২৫ টি বছর কাজ করেছি। আমার তো সংগঠনের জন্য দরদ আছে।

এছাড়া সূত্রমতে, বর্তমান নির্বাহী সভাপতি মাওলানা মোস্তফা আজাদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক নির্বাহী সভাপতি মাসিক ‘মদীনা’র সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে শুক্রবার রাতের মজলিসে আমেলার সিদ্ধান্তে।