জাতিসংঘে ভাষণ: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

0
478
blank

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তিনি বিশ্ববাসিকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটার দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকার প্রধান। বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সম্প্রতি গুলশানে যে হামলা হয়েছে তা ‘ভয়ঙ্কর’। এ ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে আমরা এই নতুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সন্ত্রাসী এবং উগ্রবাদীদের অর্থ ও অস্ত্র-শস্ত্রের জোগান বন্ধ এবং তাদের প্রতি নৈতিক এবং বৈষয়িক সমর্থন না দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি। জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসাবে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের শেখ হাসিনা। এবারের ভাষণে তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো এখন কোনো নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বের সব স্থানেই ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো দেশই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ নয়, কোনো ব্যক্তিই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুর বাইরে নয়। আমেরিকা থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে এশিয়ায় অগণিত নিরীহ মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎখাতের সংকল্পে বিশ্ববাসীর ঐক্যবদ্ধ থাকার উপর জোর দেন তিনি তার ভাষণে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। একইসঙ্গে এদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র বিষয়টি বিশ্বনেতাদের কাছে আবারও তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব সন্ত্রাসী গ্রুপের উদ্ভব হয়েছে, তাদের নিষ্ক্রিয় করা, তাদের নিয়মিত অর্থ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা এবং বাংলাদেশের ভূখ- থেকে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম নির্মূল করার ক্ষেত্রে আমাদের সরকার সফল হয়েছে। সংঘাত বন্ধ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব দেশকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ স্মরণ করে বলেন, এখনও আমাদের এই বিশ্ব উত্তেজনা এবং ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত নয়। বেশ কিছু স্থানে সহিংস-সংঘাতের উন্মত্ততা অব্যাহত রয়েছে। অকারণে অগণিত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এ প্রসঙ্গে গত বছর সিরিয়ার শিশু আইলান কুর্দির সাগরে ডুবে মারা যাওয়া এবং সম্প্রতি আরেক শিশু ওমরানের আহত হওয়ার কথা বলেন সমবেদনা জানান শেখ হাসিনা। দুদিন আগে জাতিসংঘে অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ক সম্মেলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি আশা করি, এই সম্মেলনের ফলাফল বর্তমান সময়ে অভিবাসনের ধারণা এবং বাস্তবতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করবে।

শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কেন্দ্র’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত সহিংসতার কবল থেকে বেরিয়ে আসা দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দিবে। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় চালু ও ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বৈরিতা নিরসনে সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাগুলোকে সঠিক দিকে পরিচালিত করার উপর জোর দেন তিনি। এ সময় তিনি প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়েও বাংলাদেশের এজেন্ডা তুলে ধরেন। বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তরণ সম্ভব।