জামায়াতের নতুন আমির ডা: শফিকের শপথ গ্রহণ

0
560
blank
blank

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নবনির্বাচিত আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যদের উপস্থিতিতে তিন বছর কার্যকালের জন্য শপথ নিয়েছেন। তিনি বিদায়ী আমির মকবুল আহমাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন। গত ১৭ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দলের সদস্যদের ভোটে তিনি জামায়াতের শীর্ষ পদে নির্বাচিত হন যা, ১২ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়। শপথ নিয়ে ডা: শফিক বৃহত্তর কল্যাণে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান। এখন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার দেশপ্রেমিক জনগণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আজ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বলতে কিছু নেই। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। মিছিল-সমাবেশসহ সব রাজনৈতিক কর্মসূচি কার্যত নিষিদ্ধ। বর্তমান সরকার জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত নয়। দেশপ্রেমিক জনগণের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার।
জামায়াতের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নবনির্বাচিত আমিরকে শপথ বাক্য পাঠ করান জামায়াতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাওলানা এ টি এম মা’ছুম। রাজধানীর একটি অডিটোরিয়ামে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত এই শপথ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী আমির মকবুল আহমাদ, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদসহ নির্বাহী পরিষদের অন্য সদস্যরা। শপথ শেষে দেশবাসী ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ডা: শফিকুর রহমান বক্তব্য দেন।
তিনি দায়িত্ব পালনে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা, আন্তরিক দোয়া এবং মহান আল্লাহ তায়ালার একান্ত সাহায্য ও রহমত কামনা করেন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সব শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষভাবে স্মরণ করেন বাংলাদেশের স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে।
তিনি জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে স্মরণ করে বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। তিনি জামায়াতের অন্যান্য নেতার নাম উল্লেখ করে তারা নানাভাবে সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, গভীর মর্মবেদনা নিয়ে স্মরণ করছি জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সেই সমস্ত ভাই ও বোনদের যারা দ্বীন কায়েমের এই সংগ্রামে শাহাদাতবরণ করেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকায় দেশে এখন চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সরকারি ছাত্রসংগঠনের ছাত্র নামধারী ক্যাডাররা দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টর্চার সেল তৈরি করেছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিরোধী মত দমনে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে।
ডা: শফিক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুট হচ্ছে হরহামেশা। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ প্রতিনিয়ত বাইরে পাচার হচ্ছে। দুনিয়ায় মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল বিচারাঙ্গনের অবস্থা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সরকার একজন প্রধান বিচারপতিকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করার নজিরবিহীন ঘটনাই প্রমাণ করে বিচারাঙ্গনের চরম দুরবস্থার কথা।
তিনি বলেন, সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ সমস্যার আশু সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু ভারত অন্যায় ও অযৌক্তিভাবে সে দেশের লোকদের সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। ফলে বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন।
জামায়াতের আমির বলেন, প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ সম্পর্কে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা ভারতের জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা আশা করি, ভারত সরকার বাবরি মসজিদটি আগেরে স্থানে পুনরায় নির্মাণ করে সে দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় মৌলিক অধিকারের প্রতি সুবিচার করবেন। ফিলিস্তিন, কাশ্মির, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান, চীনের উইঘুর মুসলমান, আফগানিস্তান, মিসর, ইরাক ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর চরম জুলুম-নিপীড়ন চলছে। এসব সমাধানে ওআইসি, জাতিসঙ্ঘসহ সব শান্তিকামী রাষ্ট্র ও বিশ্ব-সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডা: শফিক বলেন, জামায়াত প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সংগঠন পরিচালনা ও গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে আসছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ। আমরা একটা আদর্শ লালন করি। ভিন্নমতের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। সন্ত্রাস ও চরমপন্থার ঘোরতর বিরোধী। যেনতেন উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পক্ষপাতী নই।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জামায়াত একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জামায়াত তার সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে জামায়াত নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনেও সবাইকে সাথে নিয়েই জামায়াতে ইসলামী দেশ গড়ার রাজনীতি অব্যাহত রাখবে।