ঢাকা: পৌর নির্বাচনে জোট সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ‘জোটবদ্ধভাবে’ প্রচারণায় নামবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। শনিবার সকালে জোটের মহাসচিব পর্যায়ের এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেলা সোয়া ১১টায় বৈঠক শুরু হয়ে চলে দুপুর ১২ পর্যন্ত। এরপর সংবাদ সম্মেলনে আসেন জোটের সমন্বয়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জোটের প্রার্থীদের পক্ষে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। শুক্রবার দিনাজপুর ও রংপুর-এই দুটি জেলায় কাজ শুরু হয়েছে। এতে ২০ দলের নেতাকর্মী প্রচারণা চালিয়েছেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ২০ দলের যে সমন্বিত প্রচারণা, তা আগামী দু’একদিনের মধ্যে শুরু হবে। আমরা আশা করি, ২০ দলের নেতৃবৃন্দ তাতে অংশগ্রহণ করবে।
বিএনপি জোট পৌর নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি ধাপ হিসেবে নিয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচন কমিশন সমস্ত নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
পৌর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইসির নিরপেক্ষতার প্রমানের পরীক্ষা দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
‘এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমানিত হবে নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ থাকতে পারে। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে কী না। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। কারণ, বরাবরই সরকারদলীয় প্রভাবের কাছে তারা নতি স্বীকার করেছে।’
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘মন্ত্রীরা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন এবং পরিস্কারভাবে তা গণমাধ্যমে আসছে। আজকের পত্রিকায় আছে নাটোরে কোনো একজন মন্ত্রী সেখানে সরকার দলীয় প্রার্থীর বাসায় প্রায় ঘণ্টাখানেক সভা করেছেন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেছেন। এতে প্রমানিত হয়, নির্বাচন কমিশন তাদের বিরত রাখতে পারছে না। এর মানেই হচ্ছে কমিশন ব্যর্থ হচ্ছে এবং নিজেদের অযোগ্যতার প্রমান দিচ্ছে।’
তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর নতুন করে নির্যাতন শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘বিগত কয়েকমাস ধরে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগার ভরে ফেলা হয়েছে। এমনও প্রার্থী আছেন, যিনি গ্রেফতার আতঙ্কে নিজেও নির্বাচনী কর্মকা- পরিচালনা করতে পারছেন না, প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি না করার জন্য আমারা দাবি জানচ্ছি।’ তিনি গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র এখন সবচেয়ে বড় বিপদের সম্মুখীন। দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। এই অবস্থায় গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার ও ভোটের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আশা করি, এই নির্বাচনে অবাধভাবে ভোট দিতে পারলে জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে তাদের রায় দেবে।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের মহাসবি ড. আহমেদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, বিজেপির মহাসচিব আব্দুল মতিন সৈয়দ, মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জমিয়তে উলামার মহাসচিব মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, পিপলস লীগের মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ডিএল এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, এনডিপির মহাসচিব মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
তবে বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।