জ্ঞানের জন্য আজীবন মানুষ শিশু

0
1017
blank
blank

রুদ্র মুহাম্মদ বশির: বাস্তবে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞার সমন্বয়ে জ্ঞান। আর জ্ঞানের জন্য মানুষ আজীবন শিশু। আমার জানা মতে, প্রতিদিন আমরা কতকিছু শিখছি! শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে অনেক সময় কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হই। মানুষের জীবন খুব সংক্ষিপ্ত, এ সময়ের মধ্যে অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়না। এই কারণে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের জ্ঞান পিপাষা থেকে যায়। একজন জ্ঞান তাপসের কথা বলি, তার নাম আল বেরুনী।

উনি নাতি নাতনি দাদা মৃত্যুর পর তার সম্পদে কি পরিমান অংশ পায়, তা তিনি ভালো ভাবে জানতেন না। এই বিষয়টা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন।পরে একজন আইনজ্ঞের কাছে বিষয়টা জানতে উনাকে নিমন্ত্রণ করলেন। উনি আসার পর তার কাছ থেকে বিষয়টা জানলেন। ঐ মেহমান বিদায় নিয়ে যখন চলে গেলেন, তখন বিশ/ ত্রিশ গজ দূরে যাইতে না যাইতেই বাড়ির ভিতর কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে, পরে উনি আবার ভিতরে গিয়ে দেখলেন, আল বেরুনী মারা গেছেন! এই কারণে বলা হয় শিক্ষার কোনো বয়স নাই। আমার সহকর্মী একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, স্যার মংলা সমুদ্র বন্দর কোন নদীর তীরে অবস্থিত? আমি সবেমাত্র ক্লাস থেকে বের হয়ে আসছি। দেখি আমার কেন যেন মনে হচ্ছেনা। আমি বললাম একটু পরে বলি , উনি বললেন জ্বী স্যার। পরে আমি ভুলে গেছি, উনিও ভুলে গেছেন। রাত আবার ফোন করলেন। তখন আবার মনে হলো, তখন আমি বই দেখে আবার উনাকে ফোন করে জানালাম। বেশ কিছু আগে একজন ছাত্র আমাকে একটি বানান জিজ্ঞেস করলো। বানানটি হলো অনূদিত। আমার একটা অভ্যাস ছাত্র জীবন থেকেই। প্রশ্ন করলে আমি খুশি হই। সে আমার কাছে জানতে চাইলো, “ন” এর নিচে ঈ – কার হলো কেন? আবার তাও বললো, আরও দুইজনকে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু তাদের ব্যাখ্যা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত হয়নি। তাই আপনার শরনাপন্ন হয়েছি। পরে আমি মনে মনে ভাবলাম, হয়তো সে বানানটা জানে, আমাকে যাচাই করার জন্যও হতে পারে! আমি তাকে বললাম, দেখ এটা সন্ধি গঠিত শব্দ। উ- কার + উ- কার মিলে ঊ -কার হয়েছে। যেমন অনু+ উদিত -অনূদিত হয়েছে। এর পর সে দুইজন ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলাম কেউ এভাবে বুঝিয়ে বলেনি।এখন আমি বুঝেছি স্যার। আমি তাকে বললাম দেখ, সব জিনিস সবার জানা থাকে না। লালন শাহের একটা গান শুনলাম, চাঁদের গায়ে চাঁদ লাগেছে আমরা ভেবে করবো কি।। ছয় মাসের এক কন্যা ছির নয় মাসে তার গর্ভ হলো।। আঠারো মাসে তার তিনটি সন্তান, তোমরা তাকে বলবে কি।। এই গানটার অর্থ আমি আজও পাইনি। অনেক সময় কঠিন কঠিন কিছু শব্দ পাই, যার অর্থ আমি পারিনা। পরে ডিকশনারি/ অভিধান দেখে নিতে হয়। কিছু সময় মানুষ অনেক কঠিন প্রশ্ন করে, কারও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি, কারও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনা। যাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনা, তাদের কাছ থেকে সময় নেই, আমি জেনে বলবো বলে। একটা মানুষের পক্ষে সবকিছু জানা সম্ভব নয়, এই কারণে মানুষকে আজীবন জানার পিছনে মেহনত করতে হয়। দুই শ্রেণির মানুষের পক্ষে অধিকতর জানা সম্ভব হয়। এক. যারা বেশি বেশি বই পড়ে। দুই যারা বেশি বেশি ভ্রমণ করে। জ্ঞান পিপাসু মানুষের জানাটাই সাধনা। তারপরও শেষ নেই, যত জানে ততো জানার ইচ্ছে বাড়ে। ততই জানতে চায়। এই কারণে বলা হয়ে তাকে,দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার সময়।অতএব,জানার জন্য মানুষ আজীবন শিশু।

গীতিকার