টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত দেশ

0
620
blank
blank

দুই দফা নিষেধাজ্ঞার পর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলাচল শুরু অকালবন্যায় পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে মাঠের ফসল তিলোত্তমা ঢাকায় জলাবদ্ধতা ও দুর্যোগ-দুর্ভোগের নরক যন্ত্রণা তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত আবহাওয়া কাল উন্নতি হতে পারে

 

গত কদিনের টানা ভারী বর্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকার জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ভোলার মনপুরা দেশের বেশকিছু নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরে অকালবন্যায় ফসলডুবি ও মাছের মড়কের দুর্দশা না কাটতেই বৈশাখের ভারী বর্ষণে সেখানকার অনেক গ্রামে পানি ঢুকে পড়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সিলেট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি পার্বত্য অঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পাহাড় ধসের শঙ্কা। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের বাঁধ ভেঙে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
এদিকে টানা তিনদিনের বৃষ্টির পানি জমে পথে পথে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা আর যানজটে অচল হয়ে পড়ছে তিলোত্তমা ঢাকা। পদে পদে দুর্বিষহ দুর্ভোগে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা নির্ধারিত সময়ের দু’তিন ঘণ্টা দেরিতে অফিসে ঢুকে দায়ঠেকা কাজকর্ম সেরে আগেভাগে ঘরে ফিরলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ। উদাসীন উন্নয়নের দীর্ঘ খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর অধিকাংশ সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে মরণফাঁদ হয়ে ওঠায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যেতে দেননি। এছাড়াও বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেখান চলছে অঘোষিত ছুটি। সবমিলিয়ে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, স্বাভাবিকের তুলনায় ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মাসের বাকি সময়টা আর বৃষ্টি না হলেও স্বাভাবিকের তুলনায় এ মাসে ৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি থাকবে। বাংলাদেশে এপ্রিলে এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল সর্বশেষ তিন দশক আগে ১৯৮৭ সালে। সেটি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫.২৮৬ মিলিমিটার।
একদিকে পশ্চিমা, অন্যদিকে পূবালী লঘুচাপের সংঘাতে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে আবহাওয়ার যে বিচিত্র আচরণ চলছে, বুধবার থেকে তার উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, “আশা করি পূবালী ও পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রন বুধবার থেকে কেটে যাবে, এতে বৃষ্টি কমবে।”
এদিকে পথের ভোগান্তির শঙ্কায় সাধারণ কেনাকাটার জন্য প্রায় কেউই ঘর থেকে বের না হওয়া রাজধানীর নামিদামি শপিংমল-বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও গত ক’দিন ধরেই চলছে ভয়াবহ মন্দাদশা। বেচাকেনা একরকম না থাকায় অনেকে দোকানও খোলেনি। ঢাকার বাইরে থেকে ক্রেতারা না আসায় অধিকাংশ পণ্যের পাইকারি বাণিজ্যেও ভাটার টান ধরেছে।
অসময়ের টানা বর্ষণের কারণে এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে দাবি করলেও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, গত কয়েকদিনে গড়ে রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫ মিলিমিটারেরও কম। যা মাঝে মধ্যে ২-৩ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে হয়েছে। নগরীতে পানি নিষ্কাষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে যা সহজেই রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার কথা। অথচ সরকারের খামখেয়ালিপনায় বছরের পর বছর ধরে একই দুরবস্থা রয়েছে। এর ওপর উন্নয়নের দীর্ঘসূত্রতার খড়গ ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বস্তির বৃষ্টিও এখন নগরবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সোমবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে মতিঝিল, মৌচাক, আরামবাগ, শান্তিনগর, নাটক সরণি (সাবেক বেইলি রোড), কাকরাইল, নয়াপল্টন, মগবাজার, আমবাগান, নয়াটোলা, মালিটোলা, বাড্ডা, রাজারবাগ, কাজীপাড়া, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পোস্ট অফিস, কুড়িল প্রাইমারি স্কুল রোড, শাহজাদপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরহাজীরবাগ, জুরাইন ও পোস্তগোলার বিপুলসংখ্যক সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সকাল থেকেই প্রধান সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতে দিনভর যানজট লেগেই থাকে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের সদস্যরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে নর্দমার নোংরা পানি উপচে পড়ে ফুটপাত তলিয়ে যাওয়ায় পায়ে হাঁটা পথও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যানজটের ভোগান্তি এড়াতে গণপরিবহন থেকে নেমে পায়ে হেঁটেও অধিকাংশ মানুষ নির্ধারিত সময় কর্মস্থলে পেঁৗছতে পারেনি। আর যারা যানে চড়েই গন্তব্যে পেঁৗছতে চেয়েছেন তাদের অনেকেরই দিনের প্রথম প্রহর পথেই কেটেছে।
সোমবার সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় মহানগরীর মর্নিংশিফটের স্কুলশিক্ষার্থী আর তাদের সঙ্গীয় অভিভাবকদের। রাতভর বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা ম্যানহোলের খোলা মুখের মৃত্যুঝুঁকি তুচ্ছ করে হাঁটু পানি ডিঙিয়েও নির্ধারিত সময়ে স্কুলে পেঁৗছতে পারেনি অনেকেই। তাই আবারও নানা ভোগান্তি পেরিয়ে তাদের ঘরে ফিরতে হয়েছে।
সরেজমিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক জায়গায় রাস্তার মাঝখানে বড় গর্ত কিংবা ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকায় স্থানীয়রা বাঁশের খোটা দিয়ে বিপদ সংকেত স্থাপন করেছে। কিছু কিছু জায়গায় সিটি করপোরেশন, তিতাস, ওয়াসা ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার রাস্তা সংস্কারকাজের অর্ধ সমাপ্তির কারণে ড্রেনেজ সিস্টেম অকার্যকর হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মৌচাক থেকে থেকে মালিবাগ, রাজারবাগ, কাকরাইল ও রামপুরাসহ আশপাশের কয়েকটি সড়ক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের খোঁড়াখুঁড়িতে অচল হয়ে আছে।
সোমবার সকালে মৌচাক মোড়ে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেদিন থেকে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই নগরীর অধিকাংশ সড়ক যানজটের খপ্পরে পড়েছে। কেননা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকার লিঙ্ক সড়ক এটা। তাই এখানকার যানজটের প্রভাব সহজেই অন্য সড়কে গিয়ে পড়ে। তার ওপর এ সড়কের বিস্তৃত অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরজীবন থমকে গেছে।’ এ ফ্লাইওভার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে চরম খেসারত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন ওই ট্রাফিক কর্মকর্তা।
রাজধানীর গুলবাগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের ধীরগতির নির্মাণকাজের জন্য প্রায় ৫০ লাখ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। অথচ সব জেনেশুনেও সরকার নির্বিকার রয়েছে।’
এদিকে, জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা পরস্পরকে দায়ী করলেও বাস্তবে কেউই এদিকে নজর দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের ভাষ্য, রাজধানীতে পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা এই তিন কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকা প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন সারা বছরই অপরিষ্কারভাবে ফেলে রাখছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
পুরানো ঢাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানকার অনেক ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তার পাশে জমা রাখা হলেও সিটি করপোরেশন তা সরানোর ব্যবস্থা না করায় বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে তা আবার ড্রেনে পড়ছে। ফলে জলাবদ্ধতা কমছে না।
রাজধানীর বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা আর যানজটের কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কল্যাণপুর, শ্যামলী, গুলশান, বনানী, ফার্মগেট, মহাখালী, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, নিউমার্কেট, মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, সাতমসজিদ রোড, প্রগতি সরণির বাড্ডা, নতুনবাজার, নর্দা, বসুন্ধরা মোড় প্রভৃতি এলাকার অধিকাংশ সড়কে গাড়ি দীর্ঘক্ষণ থেমে থেমে চলেছে। কোনো কোনো সড়কে ২০/২৫ মিনিটও একই জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ধীরগতি নেমে এসেছে।
জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, সকাল ৯টায় আসাদগেট থেকে রওনা হয়ে যাত্রাবাড়ী গিয়ে পৌঁছান দুপুর সাড়ে ১২টায়। পথে এমন কোনো মোড় নেই যেখানে যানজট হয়নি। কানিজ ফাতেমা নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, মনসুরাবাদ থেকে বাড্ডা যেতে তার প্রায় তিন ঘণ্টা লেগেছে।
বাড্ডা-গুলশান লিংক রোডে দক্ষিণ দিকের ফুটপাত খোঁড়াখুঁড়ি করে ড্রেনেজ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলায় সেখানে দিনভর যানজট লেগেই থাকে।
শাহজাদপুরের বাঁশতলা থেকে বাজার পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশায় সেখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মিরহাজীরবাগের রাস্তায় পানি জমে তা চলাচলের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছে।
জলবদ্ধতা প্রসঙ্গে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এবার একটু আগেই বৃষ্টি চলে এসেছে। এতে ড্রেনেজ লাইনের উন্নয়ন কাজে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের কারণে মালিবাগ ও শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকার ড্রেনেজ লাইন বস্নক হয়ে গিয়েছিল। এগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী দেড়-দুই মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান ইমাম জানান, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সব কটিতেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। মোজাফরপুর ইউনিয়নের প্রায় ৮০ শতাংশ ফসল তলিয়ে গেছে। হাওরে পানি বাড়ায় বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। অপরদিকে দুই দিন ধরে চলছে টানা বর্ষণ। এ কারণে জলাবদ্ধতা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ জানান, ধলাই নদীর গোপালনগর ও করিমপুর গ্রামে আগেই ভাঙন দেখা দেয়। এর ওপর ভারী বর্ষণে কোনাগাঁও এলাকা দিয়ে নতুন করে আরেকটি ভাঙন দেখা দিয়েছে। ‘তিনটি ভাঙন দিয়ে আসা পানি কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের গোপালনগর ও বাসুদেবপুর এলাকার সড়ক উপচে গ্রামাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। শমশেরনগর, মুন্সীবাজার, পতনঊষার ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াত ও গো-খাদ্য সংকটসহ চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।’
কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, পানিতে রাস্তাঘাট ও বিদ্যালয়ের আঙিনা নিমজ্জিত হওয়ায় করিমপুর ও বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ পৌরসভা, কমলগঞ্জ ইউনিয়ন, মুন্সীবাজার ইউনিয়ন, পতনউষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ধলাই নদীর ভাঙন দিয়ে তৃতীয় দফা পানি আসায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।
তিন দিনের ভারী বর্ষণে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলারও বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সবুজবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক আশীষ চক্রবর্তী জানান, তার ঘরের ভেতরে প্রায় ৩ ফুট পানি উঠেছে। হঠাৎ আসা পানিতে ফ্রিজ, টেবিল ফ্যান, কম্পিউটার, আইপিএস, গ্যাসের চুলা, সোফাসহ সব বিছানা ও আসবাবপত্র পানিতে ডুবে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল শহরতলির সবুজবাগ, লালবাগ, রূপসপুর, সন্ধানী, শাহীবাগ, সুরভী পাড়া, মুসলিমবাগ, বিরামপুর, শাপলাবাগ, শান্তিবাগ, জেটিরোড, উত্তর ভাড়াউড়া, পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে একই রকম ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
দুই দফা নিষেধাজ্ঞার পর লঞ্চ চলাচল: বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ সব পথে লঞ্চ চলাচল বেলা দুইটার পরে আবার চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিস্নউটিএ)। সোমবার বেলা তিনটার দিকে অধিকাংশ পথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এর আগে সকালে দুই দফা লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তবে বরগুনার আমতলী থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে আমতলীর পথে আজ লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। আমতলী থেকে সোমবার বিকেল চারটায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল ‘এমভি হাসান হোসেন’ নামে লঞ্চটির। যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চঘাটে উপস্থিত হলেও লঞ্চটি বৈরী আবহাওয়ার কারণে ছেড়ে যায়নি। লঞ্চটির মাস্টার মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় নদী খুব উত্তাল, তাই এ অবস্থায় আমরা লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
একইভাবে ঢাকা থেকে বিকেল পাঁচটায় আমতলীর উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা এমভি সুন্দরবন-৫ নামে লঞ্চটির। ওই লঞ্চের পরিদর্শক মো. অপু জানান, তাঁরাও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে লঞ্চ ছাড়ছেন না আজ।
বিআইডবিস্নউটিএর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার থেকে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণ উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া ও থেমে থেমে ভারী বর্ষণ চলছে। সোমবারও তা অব্যাহত থাকে। এ জন্য এদিন ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সব ধরনের লঞ্চ চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ জন্য সব পথে এক ঘণ্টা লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বেলা ১১টার দিকে আবার আবহাওয়া পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে বেলা দুইটার দিকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরপর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব পথে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঢাক-বরিশাল পথও এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল।
বিআইডবিস্নউটিএর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা আজ বিকাল চারটার দিকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে বৈশাখী ঝোড়ো আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই আবহাওয়া এই ভালো হয়, তো এই খারাপ হয়। তাই পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রেখে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’
এদিকে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে চতুর্থ দিনের মতো সোমবারও বেরী আবহাওয়া বিরাজ করে। একটানা ঝড়ো হাওয়া ও থেমে থেমে বর্ষণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।