টিআইবির সুপারিশগুলো আমলে নিন

0
569
blank
blank

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দশম জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের ওপর তাদের প্রণীত ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

২০১৪ সালের জানুয়ারির প্রথম থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বরাবরের মতো শাসক দল টিআইবির প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে একে একপেশে ও অসৎ উদ্দেশ্যমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে। কোনো বিরোধী দল টিআইবির প্রতিবেদনের ওপর কোনো মন্তব্য করেছে বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

দশম জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের ওপর প্রণীত টিআইবির প্রতিবেদনের ফাইন্ডিংসের মধ্যে রয়েছে- এক. আইন প্রণয়নে অবিশ্বাস্য দ্রুততা : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদে ৭১ শতাংশ বিল পাস হয়েছে ১ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে।

২১ থেকে ৪০ মিনিট সময়ের মধ্যে পাস হয়েছে ৪৫ শতাংশ বিল। ৮ শতাংশ বিল পাস হতে সময় লেগেছে ৪০ থেকে ৬০ মিনিট। ৪৬ শতাংশ বিল পাস হতে সময় লেগেছে ১ থেকে ২০ মিনিট। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদের মোট ব্যয়িত সময়ের মধ্যে ১২ শতাংশ ব্যয় হয়েছে আইন প্রণয়নের কাজে।

এদিকে টিআইবি যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে এবং ভারতের লোকসভায় আইন প্রণয়নে সময় ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করে বলেছে, ২০১৭-১৮ সালে যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে আইন প্রণয়নে ব্যয় হয় ৪৮ শতাংশ সময়।

২০১৪-১৯ সময়ে ভারতের ১৬তম লোকসভায় আইন প্রণয়নে ব্যয় হয় ৩২ শতাংশ সময়। টিআইবি আরও বলেছে, দশম সংসদে সব মিলিয়ে ১৯৩টি বিল পাস হয়েছে। প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে সময় লেগেছে ৩১ মিনিট করে। অন্যদিকে, ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে ১৪১ মিনিট সময় লাগে।

দুই. আইন সম্পর্কিত আলোচনায় সংসদ সদস্যদের আগ্রহের ঘাটতি : আইন সম্পর্কিত আলোচনায় সংসদ সদস্যদের আগ্রহের ঘাটতি দেখেছে পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের অনেকের মধ্যে কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরার ক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি লক্ষণীয়। সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য (দশম সংসদে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি ছিল ৫৯ শতাংশ) এবং পেশাদার আইনজীবীর উপস্থিতি ভীষণভাবে হ্রাস পাওয়া (প্রথম সংসদে আইনজীবীর ৩১ শতাংশ উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে দশম সংসদে ১৩ শতাংশে দাঁড়ায়) এর মূল কারণ। উল্লেখ্য, সংবিধান ও জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের প্রধান কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন এবং আইনের বলবৎ পর্যালোচনা ও অনুরূপ বলবৎকরণের জন্য ব্যবস্থাদি গ্রহণে প্রস্তাব করা।

তিন. কোরাম সংকট : প্রতিবেদন মোতাবেক দশম সংসদের প্রথম থেকে শেষ অধিবেশন (২৩টি) পর্যন্ত কোরাম সংকটের কারণে ১৯৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট অপচয় হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা।

২৩টি অধিবেশনের মধ্যে কোরাম সংকটের কারণে ব্যয় হওয়া সময় মোট সময়ের ১২ শতাংশ। ২৩টি অধিবেশনে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ২৮ মিনিট অপচয় হয়েছে কোরাম সংকটের কারণে। অর্থাৎ দশম সংসদ চলাকালীন আইন প্রণয়নে যে পরিমাণ সময় ব্যয় হয়েছে, কোরাম সংকটে সমপরিমাণ সময় অপচয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, নিবন্ধিত ৩৮ রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট এবং জোটের বাইরে ৯টি সমমনা দল দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের ১৫৩টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী কয়েকটি দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্যপদ লাভ করেন।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। এমন একটি সংসদে কোরাম সংকট হওয়ার কথা নয়। তাই দশম সংসদে কোরাম সংকট স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের উদ্রেক করে।

চার. কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সংসদীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত না হওয়া : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিধি অনুযায়ী ৫০টি সংসদীয় কমিটির প্রতিমাসে একটি করে মোট ৩ হাজার বৈঠক করার কথা থাকলেও বৈঠক হয়েছে ১ হাজার ৫৬৬টি। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ও বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত কমিটির কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। আটটি কমিটিতে সভাপতিসহ সদস্যদের সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ছিল। ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে ৩৯টি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত এবং ১১টি অন্যান্য বিষয়ে। সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদের দফা (২)-এ সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা ও কার‌্যাবলির বর্ণনা রয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে গত সাড়ে চার দশকে সংসদীয় কমিটিগুলো, বিশেষ করে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলো তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি।

কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক. ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় সংসদীয় সরকারব্যবস্থার স্থলে একদলীয় রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তী ১৫ বছর দু’জন সামরিক শাসকের আমলে তা বহাল থাকে। রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভা তথা সরকার সংসদের কাছে দায়ী না থাকায় সংসদীয় কমিটিগুলো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।

খ. ১৯৯৬ সালের ১২ জুন এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে গঠিত যথাক্রমে ৭ম ও ৮ম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর যথাক্রমে দুই ও তিন বছর পর গঠিত হয় সংসদীয় কমিটিগুলো।

ফলে এসব সংসদীয় কমিটি সুপারিশ প্রণয়নে ও সেগুলোর বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে খুব কম সময় পায়। গ. আওয়ামী লীগের শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) সপ্তম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে সংশোধনী এনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে মন্ত্রীর স্থলে সদস্যকে সভাপতি করার বিধান করা হয়। মন্ত্রীকে কমিটির একজন সদস্য করা হয়। এটা ছিল নিঃসন্দেহে একটি ভালো পদক্ষেপ।

তবে এর ফলে শুরু হয় মন্ত্রী ও সভাপতির মধ্যে মনকষাকষি। মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিরা চান কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে মন্ত্রীরা সংসদীয় কমিটিগুলোকে সুপারিশকারী সত্তার অতিরিক্ত কিছু হিসেবে দেখতে চান না। মন্ত্রী ও কমিটির সভাপতির মনকষাকষিতে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোর কার্যকারিতা আগেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখনও হচ্ছে।

ঘ. মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে বিরত থাকে। নতুন সরকার গঠিত হলে এসব সুপারিশ হারিয়ে যায়।

পাঁচ. স্পিকারের কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের নিয়ম সম্পর্কে সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও সংসদে অসংসদীয় ভাষা, কটূক্তি, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার বন্ধে স্পিকারের নীরবতা লক্ষ করা গেছে, যা সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির লঙ্ঘন। বিধি অনুযায়ী, অধিবেশন চলাকালীন গ্যালারিতে শৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে স্পিকারের কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি দেখা গেছে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এ পর্যন্ত কোনো স্পিকার নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে সংসদ পরিচালনা করতে সক্ষম হননি। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে।

এগুলো হল- এক. ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড কর্তৃক মনোনীত এবং সংসদের অধিকাংশ সদস্য, বিশেষ করে শাসক দলের সংসদ সদস্যদের ভোটে স্পিকার নির্বাচিত হন। তাই শাসক দলের প্রতি তার দুর্বলতা থাকে।

দুই. স্পিকার পদে অবস্থান সুদৃঢ় নয়। সংবিধানের ৭৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মোট সংসদ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে স্পিকার অপসারিত হতে পারেন। তাই বিরোধী দলগুলো পক্ষে থাকা সত্ত্বেও কেবল শাসক দলের সংসদ সদস্যদের ভোটে একজন স্পিকার অপসারিত হতে পারেন। সুতরাং স্পিকার পদে বহাল থাকা অনেকটা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি তার আনুগত্যের ওপর নির্ভরশীল।

তিন. একজন স্পিকারের নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ডের কাছে পছন্দনীয় না হলে তিনি পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন না। এতে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে।

ছয়. প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান একটি দলের অংশগ্রহণ না থাকায় সংসদ অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বি^তাপূর্ণ হয়নি। একই কারণে সংসদে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা বৃদ্ধি পায়।

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সহযোগী দলগুলো দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে থাকলেও একই সঙ্গে বিরোধী দল ও সরকারে থাকার কারণে দলটি সংসদে কার্যকর ভূমিকা পালনে সমর্থ হয়নি।

জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে টিআইবি বেশকিছু সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিজ দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট এবং বাজেট ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে সদস্যদের নিজ বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেয়ার সুযোগ রেখে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদ সদস্য আচরণ আইন প্রণয়ন, সরকারি দলের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে কার্যকর বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, সংসদে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে বিধি অনুযায়ী রুলিং প্রদান ও অসংসদীয় ভাষা এক্সপাঞ্জ করার ক্ষেত্রে তার আরও জোরালো ভূমিকা পালন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকাশযোগ্য নয় এমন বিষয় ছাড়া আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে উপস্থাপন, আইনের খসড়ায় জনমত গ্রহণের জন্য অধিবেশনে উত্থাপিত বিলগুলো সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ, সংসদীয় কমিটির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কোনো কমিটিতে সদস্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলে ওই কমিটি থেকে তাদের সদস্যপদ বাতিল, বিধি অনুযায়ী কমিটির প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটিসহ জাতীয় বাজেটে তুলনামূলকভাবে বেশি আর্থিক বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ দশটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিগুলোর মধ্যে অর্ধেক কমিটির সভাপতি হিসেবে বিরোধীদলীয় সদস্যদের মনোনয়ন প্রদান, এবং কমিটি সভার প্রদত্ত সুপারিশের আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা এবং ব্যবস্থা গৃহীত না হলে তার বিস্তারিত মন্তব্য/ব্যাখ্যা লিখিতভাবে কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন।

সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার জন্য যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তার অনেকগুলো টিআইবির ইতঃপূর্বের ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক প্রতিবেদনগুলোয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ করে দিতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের যে প্রস্তাব টিআইবি করেছে, সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে এর বাস্তবায়ন একান্তই প্রয়োজন। সংসদে স্পিকারের ভূমিকা নিরপেক্ষ ও জোরালো করার সুপারিশ বাস্তবায়নে যা প্রয়োজন তা হল নির্বাচিত হওয়ার পর একজন স্পিকারের তার মনোনয়নদানকারী দল থেকে পদত্যাগ এবং দ্বিতীয় মেয়াদে তার স্পিকার পদে বহাল থাকা নিশ্চিতকরণ। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বা হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত স্পিকার তার মনোনয়নদানকারী রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ করেন।

আমাদের বিধান করা দরকার- একজন স্পিকার পদত্যাগ না করলে, মারা না গেলে বা সংসদ কর্তৃক অপসারিত না হলে সাধারণ নির্বাচনে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে স্পিকার পদে বহাল থাকবেন। এসব পদক্ষেপ নেয়া হলে একজন স্পিকার নিরপেক্ষ ও জোরালোভাবে সংসদ পরিচালনায় দ্বিধা করবেন না। আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে উপস্থাপনে টিআইবির সুপারিশ সংবিধানসম্মত।

আইনের খসড়ায় জনমত গ্রহণের জন্য অধিবেশনে উত্থাপিত বিলগুলো সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং সংসদীয় কমিটির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কোনো কমিটিতে সদস্যের স্বার্থসংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলে ওই কমিটি থেকে তাদের সদস্যপদ বাতিলের সুপারিশ অত্যন্ত যৌক্তিক। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের আলোকে মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জানানোর বিধান চালুকরণের প্রস্তাব অত্যন্ত সময়োপযোগী। অন্য সুপারিশগুলোও বিবেচনার দাবি রাখে।

সবশেষে বলতে চাই, সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং জাতীয় সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে সরকার ও সংসদের উচিত হবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে টিআইবির সুপারিশগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং যতদূর সম্ভব এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রসর হওয়া।

আবদুল লতিফ মন্ডল: সাবেক সচিব, কলাম লেখক

latifm43@gmail.com