নিজস্ব প্রতিবেদক: নেতাদের এবং তৃণমূল ‘ম্যানেজ’ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পর্বের দিন শেষ হয়ে গেল। আর যাই হোক এবার এই প্রক্রিয়ায় আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পাওয়া যাবে না। মনোনয়ন প্রদানের জন্য আওয়ামী লীগ তৈরি করছে সফটওয়্যার, যেখানে তৃণমূলের নেতা তাঁর পছন্দের প্রার্থীর নাম দেবেন গোপনে অনলাইনে। তাঁর নাম সরাসরি জমা হবে কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারে। সংসদীয় নির্বাচন মনোনয়ন কমিটির সদস্যরাও তাঁদের মতামত দেবেন বোর্ডে। এরপর জরিপের ফলাফল, তৃণমূলের ভোট এবং মনোনয়ন কমিটির ভোট একত্র করে সভাপতি ঠিক করবেন প্রার্থী। এর ফলে যেমন মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে, তেমনি সঠিক প্রার্থী বাছাইও সহজ হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হবে প্রথম রাজনৈতিক দল, যারা প্রার্থী বাছাইয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এটি আরেক ধাপ।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হয় সাধারণত তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপে, একটি সংসদীয় আসনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান , ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার (যদি থাকে) নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং ওই জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁদের পছন্দের তালিকা ক্রম তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠায়। তৃণমূলের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যেই শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে তৃণমূল থেকে প্রার্থী নির্বাচন পদ্বতি চালু করেন। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি করে মনোনয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃণমূলের সদস্যদের প্রভাবশালী এবং বিত্তবান প্রার্থীরা ম্যানেজ করে ফেলে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার এই ম্যানেজ প্রবণতা মহামারি আকার ধারণ করেছিল। বিএনপি, জামাত করা অনেক প্রার্থী স্থানীয় কমিটিকে ম্যানেজ করে মনোনয়ন পেয়েছে। এই প্রবণতার খবর আওয়ামী লীগ সভাপতির কানেও এসেছে। এব্যাপারে তিনি অসন্তোষ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তখনই শেখ হাসিনা তাঁর সন্তান (যিনি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা) সজীব ওয়াজেদ জয়কে বিষয়টি বলেছিলেন। জয়, তার আইটি দলের সঙ্গে কাজ করে একটি নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছেন।
এই সফটওয়্যার তৃণমূল মনোনয়ন কমিটির সদস্যদের ফোনে বা কম্পিউটারে প্রতিস্থাপন করা হবে। তারা একটি নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটে লগ-ইন করে তাঁর পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখবেন। তিনি কার নাম লিখলেন, তা শুধু তিনি এবং ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী ক্তৃপক্ষ জানবেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ চাইলে স্থানীয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও অনলাইনে মতামত নিতে পারবেন। মনোনয়ন কমিটির সদস্য এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ওয়েব সাইটে লগ ইন করতে পারবেন মাত্র একবার। নাম দিতে পারবেন একটি। প্রতিটি আসনের ভোট কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারে জমা হবে। প্রতিটি আসনে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে ডাটা সেন্টারে পাঁচটি নাম স্বয়ংক্রিয় ভাবে প্রস্তাবিত হবে। কেন্দ্রীয় মনোনয়ন কমিটির সদস্যরাও নির্ধারিত ওয়েবসাইটে লগ ইন করে, পাঁচটি নামের মধ্যে থেকে একটি নাম প্রস্তাব করবেন। চাইলে তিনি সম্পূর্ণ নতুন কোনো নামও প্রস্তাব করতে পারবেন। প্রতিটি প্রার্থীর ভালো দিক মন্দ দিক ডাটা সেন্টারে বায়োডাটা আকারে জমা হবে। একই সঙ্গে প্রধান প্রতিপক্ষ সাম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কিত তথ্য ও সংগ্রহ করা হবে। সফটওয়্যার ডাটা সেণ্টারের সব তথ্য বিশ্লেষণ করে সবথেকে যোগ্য প্রার্থীর দুই বা তিনজন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করবে। মনোনয়ন কমিটির সভায় এই দুই বা তিন প্রার্থীর ওপর আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
এর ফলে তৃণমূলের মূল্যায়ন যেমন ম্যানেজ করা যাবে না, তেমনি কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনাও কমে যাবে। এ কারণেই শেখ হাসিনা দলের মনোনয়ন কমিটির সদস্যদের আগাম বলে দিয়েছেন ‘কাউকে মনোনয়নের কমিটমেন্ট দিবেন না, বিপদে পড়তে পারেন।'
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.