কে.এম.শহীদুল ইসলাম: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ীঢলে তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি হাওর। হাওর ডুবছে আর কপাল পুড়ছে এ উপজেলার কৃষকদের। শনিবার উজানের পানির শ্রোতে উপজেলার বোগুলা বাজারের নিকটবর্তী চিলাই নদীর নব নির্মিত রাবারড্যাম প্রকল্পের উজানে তিন স্থানে ও ভাটিতে তিন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকছে ফসলি জমিতে। এছাড়া বাংলাবাজার-বোগুলাবাজার সড়কের চিলাই নদীর ভোলাখালি ব্রিজের নিকটে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে দুই ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সরজমিন বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখাগেছে, হাওরে ঢলের পানিতে ডুবন্ত সোনালী ফসলহানির শঙ্কায় কৃষকরা এখন আহাজারি করছে। কিছু কিছু হাওরে ডুবন্ত আধাপাকা ২৮ বোরো ফসল কেটে নৌকা বোঝাই করতে দেখাগেছে। উপজেলায় ১১টি হাওরের মধ্যে ইতোমধ্যে নাইন্দার হাওর, কাংলার হাওর, দেখার হাওর, বড়জাই, গোজাউড়া বন্দ সহ বেশ কয়েকটি হাওর তলিয়ে গেছে। পাহাড়ী ঢল ঢুকে হুমকির মুখে রয়েছে পুরাধুওয়া, কনছখাই, চওলার হাওর, গুপ্ত মানিক, মাইল্লার হাওর, শান্তিপুরসহ বন্দেহরি, বাগাম, নৈনগাঁও ছোট ছোট সব ক’টি হাওর ও বিল। গত ১৫ মার্চ থেকে অব্যাহত ভারী বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে অকাল বন্যা ও কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারণে নিমাঞ্চলে পানি বন্দী হয়ে পড়ছেন বসতিরাও। জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে কৃষকদের চাষাবাদকৃত ফসলি জমি ও শাক সবজি। বৃষ্টিপাত না কমলে উপজেলায় ফসলহানি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬শ’ ৮০ হেক্টর। গত কয়েকদিনের পানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বোরো ফসলসহ শাক সবজি পানির নীচে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এনামুল হক জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বর্ষণ অব্যাহত থাকলে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানির নীচে তলিয়ে যেতে পারে।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার জানিয়েছেন, কাংলার হাওর, কনছখাই হাওরে ঢলের পানি ঢুকে ইতোমধ্যে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া খাসিয়া মারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে পানি ঢুকছে ফসলি জমিতে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কৃষকদের কপাল পুড়বে।
লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমীরুল হক বলেছেন, শনিবার ভোর থেকে পাহাড়ী ঢল নেমে হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। কাংলার হাওর, কণছখাই হাওর সহ বেতুরা, নোয়াগাঁও, হইলের গোঁফ বিল সমুহ ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক জানিয়েছেন, কনছখাই আংশিক ও দেখার হাওরের পান্ডারগাঁও অংশ ব্যতিত উপজেলার সব ক’টি হাওরে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় কৃষক সহ প্রশাসনিক তদারকিতে পানি আটকানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। বর্ষণ অ্যাহত থাকলে এবং ঢলের পানি না কমলে ভয়াবহ ক্ষতি হবে সোনালী বোরো ফসলের। তিনি আরো জানান, আমার জীবনে চৈত্র মাসে অকাল বন্যা ও এতা ভারি বর্ষণ কখনোই দেখিনি।সবই প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.