ঢাকার তাপমাত্রা গ্রামের চেয়ে সাড়ে তিন ডিগ্রি বেশি

0
586
blank
blank

ঢাকা : নগরায়ণ ও ক্রমবর্ধমান শিল্পকারখানার কারণে দেশের শহরগুলোর তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় গ্রামের চেয়ে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রায় সাড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে। শহরের অপরিকল্পিত এলাকার চেয়ে গুলশান বনানীর মতো পরিকল্পিত এলাকা বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। কারণ ওই এলাকাগুলোতে অপেক্ষাকৃত ধনী মানুষেরা বসতি ও অফিস স্থাপন করছেন। তাঁরা ঘরের মধ্যে বেশি পরিমাণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করছেন। ফলে ঘর ঠান্ডা হলেও বাইরের তাপমাত্রা বাড়ছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস), অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগের এক যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর বিস মিলনায়তনে রোববার ‘ঢাকা শহরের উত্তাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে অভিযোজন: টেকসই উন্নয়নের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণার মূল ফলাফল তুলে ধরেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফ দেওয়ান ও বিসের গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির।

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন শেষে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। রাজধানীর বহুতল ভবনের ছাদ ও বারান্দায় গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে রাজধানীর যেটুকু সবুজ এলাকা ও জলাশয় টিকে আছে, তা রক্ষা করার তাগিদও দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্পকারখানাগুলো যদি নিজেদের কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগায়, তাহলে তাদের কর রেয়াতের সুবিধা দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।

গবেষণায় বলা হয়, ঢাকায় মোট আয়তনের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ এখন সবুজ এলাকা হিসেবে টিকে আছে। আর বাকি ভূখণ্ড নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। শহরে মোট ২১৮টি মাঠ ও ১০৩টি ঘাস আচ্ছাদিত উন্মুক্ত এলাকা রয়েছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ঢাকায় রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো এত বড় সবুজ এলাকা আর তৈরি করা হয়নি। বরং একের পর এক জলাশয় ভরাট করে বসতি এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে।

সেমিনারে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ঢাকা শহরের প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ বাস করে। এই অল্প পরিমাণে জমিতে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা খুব কঠিন। ফলে এই শহরের সবুজ এলাকা ও জলাশয়গুলো ধ্বংস হয়ে গেলেও তা রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। তবে সরকার যে বদ্বীপ মহাপরিকল্পনা করছে, সেখানে সব নদী ও জলাশয় রক্ষায় পরিকল্পনা রাখা হয়েছে।

বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইকাড) পরিচালক সালিমুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ রাজধানীসহ বড় শহরে এসে বসতি গড়ছে। ফলে শহরগুলোকে যেমন বাড়তি মানুষের বসতির জন্য প্রস্তুত করতে হবে, আবার গ্রামেও যাতে মানুষ থাকতে পারে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, শহরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে পরিকল্পিত নগরায়ণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি শহরের সবুজ এলাকা ও জলাভূমি রক্ষায় আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা উচিত বলেও উল্লেখ করেন।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তৌহিদা রশিদ, বিসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম ও কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুহুল সেলিম।