তিন শতাধিক জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত, শপথের আগেই গ্রেফতার

0
1022
blank
blank

শামছুল ইসলাম: দেশের ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনের পর শপথ গ্রহণের আগেই গ্রেফতার হচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। গত বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন মামলায় বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত এসব জনপ্রতিনিধিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর আগেও চার্জশিটের পর তিন শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর রয়েছেন।
২০১৩ সালের নির্বাচিত পাঁচ সিটি করপোরেশনের মেয়রের মধ্যে চারজনই বরখাস্ত হয়েছেন। এভাবে গ্রেফতার অব্যহত থাকলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেভিওয়েট জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনে আগ্রহ হারাবে বলে মনে করেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, জনগণের রায়ে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। তারা যদি অপরাধী হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তারা যদি এভাবে গ্রেফতার বা সাময়িক বহিষ্কার হয় তাহলে জনরায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো হবে।
আজ বৃহস্পতিবার হত্যা ও নাশকতার মামলায় আত্মসমর্পণের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ও বিএনপি নেতা তারিক আহমেদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তার বিরুদ্ধে গত বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় পণ্যবাহী ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়। এর আগের দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামকেও কারাগারে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধেও হত্যা, নাশকতা, রাষ্ট্রীয় কাজে বাধাসহ সাতটি অভিযোগ আনা হয়।
২০১৩ সালে বহুল আলোচনার মধ্যে নির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত পাঁচ মেয়র চারজনকেই (রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর) বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, পৌর কাউন্সিলর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তিন শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এসব জনপ্রতিনিধিদের বহিষ্কারের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় নাশকতা ও সহিংসতা। ওই সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে জনপ্রতিনিধিদেরও নাম এসেছে। এ নামে চার্জশিট দাখিল শুরু হয়েছে। চার্জশিট গ্রহণের পরেই মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।
আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ছয় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে। কিন্তু নির্বাচিতদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারের কারণে নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে হেভিওয়েট প্রার্থীরা।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর একজন জনপ্রতিনিধি যদি অপরাধ করেন তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় কেউ চার্জশিটভুক্ত আসামি হলে বরখাস্ত হওয়া মানে ওই এলাকার মানুষকে শাস্তি দেয়া। এভাবে গণবরখাস্তের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অর্থহীন হয়ে পড়ছে। স্থানীয় সরকারের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা নষ্ট হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।