ধর্ষিত শিশু, লজ্জিত দেশ

0
893
blank
blank

ফুয়াদ খন্দকার: বাংলাদেশ। এদেশ কে তুলনা করা হয় মায়ের সাথে। যার জন্যে আমরা এ দেশকে মা বলে সম্বোধন করি। অথচ এই মায়ের দেশে আমার মা বোনেরা তো নিরাপদ থাকতে পারেন না এমনকি ছোট্ট অবুঝ শিশুরাও নিরাপদ না। অথচ এ দেশের সরকার নারীদের উন্নয়নের জন্য নিয়েছেন হাজারো উদ্যোগ। এদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, সংসদের স্পিকার নারী, শিক্ষা মন্ত্রী নারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নারী দেশের এত উচ্চ পর্যায়ে নারীদের অবস্থান থাকার পরেও প্রতিনিয়ত সংবাদের পাতায় নারী নির্যাতনের খবর দেখতে পাই। তাহলে আসলে সমস্যা ঠিক কোন জায়গায়? এক তরফা ভাবে শুধুই সরকারের উপরে দোষ চাপিয়ে দিয়ে আপনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারবেন ঠিক ই কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন এর বিপক্ষে আপনি কি করছেন?
অথচ আমাদের নিজেদের নোংরা মানষিকতার জন্যেই নারীদের আমরা ভোগ্যপণ্য মনে করি। সোসাল মিডিয়ায় কোন নির্যাতনের খবর আসলেই এসব নোংরা মানুষ গুলোর খোজ পাওয়া যায় মন্তব্যের ঘরে। মেয়েটি কেনো হিজাব পরেনি, এমনি এমনিই কি আর ধর্ষণ হয়? নিশ্চই মেয়েটির ঝামেলা আছে, বাবা মায়ের জন্যে মেয়েটির এই অবস্থা, পর্দা করলে কি এরকম হতো? এ ধরনের হাজারো মন্তব্যের দেখা নিলে সেখানে। এত বড় একটি অমানবিক কাজ হয়েছে তা নিয়ে অথবা ধর্ষকের শাস্তি নিয়ে যেনো মানুষের কোন মাথা ব্যথা নেই৷ তাদের সমস্ত আগ্রহ ঐ মেয়েটিকে নিয়েই । শুধু মাত্র যে ঘটনা গুলো ভাইরাল হয়ে আলোড়ন তুলে শুধু মাত্র সে ঘটনা নিয়েই কিছুদিন হৈচৈ হয় তারপর আবার যেই লাউ সেই কদু।
তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেই শুধু মাত্র নারীদের পোষাকের কারণেই তারা নির্যাতিত হয় তবে যে ছোট্ট শিশু গুলোও আপনাদের লালসা থেকে রেহাই পায়না সে ক্ষেত্রে আপনারা কি বলবেন? এই বাচ্চাদের তো ধর্ম বোঝার মতো বয়স ই হয়নি। তবে তাদের উপরেও কেনো এই অত্যাচার?
৬ মাসের একটা শিশুকে শুনলাম সেদিন তার আপন চাচা ধর্ষণ করেছে। ৬ মাস! মাত্র ৬ মাস। পৃথিবীর কিছুই তো বুঝতে শিখেনি। কিছুদিন আগে আরেক মাদ্রাসার শিক্ষক গ্রেফতার হলেন ছোট্ট বাচ্চাদের নির্যাতনের জন্যে।
এখানে আপনি ধর্মের কি ব্যাখ্যা দাড়া করাবেন? তাও একজন নয়, দু জন নয়, আট -আটজন শিশুকে ধর্ষনের দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন ধর্মীয় শিক্ষক যদি এ হীন কাজ করেন তাহলে মানুষ আর কাদের ভরসা করবে? এরা শুধুই ধর্মের লেবাসে ধর্মকে কলংকিত করে।
আজ শুনলাম সায়মা নামের ৭ বছরের একটা শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। খবর টা দেখার পর থেকে আর ঘুমাতে পারছিনা। ভিতরটা ছটফট করছে। কিভাবে পারে এ অমানুষগুলো?

আসলে যতদিন না আমরা আমাদের নিজেদের চেঞ্জ না করতে পারবো ততদিন যতই ধর্ম অথবা সরকারের দোহাই দেই না কেনো এ সমস্যার কোনদিন সমাধান হবে না। পাশাপাশি ধর্ষকদের যদি কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো তাহলে কেউ অপরাধ করার আগে দশবার ভাবতো। বেশীর ভাগ সময় দেখা যায় প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।

আর কতদিন আমরা মুখ বুজে সহ্য করবো? কবে আমাদের মা বোনেরা নিরাপদ ভাবে চলাফেরা করতে পারবে? কবে এ দেশ থেকে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে?
যখন এইসব নির্যাতিত ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর মুখটা দেখি তখন হৃদয়ের ভেতর থেকে হাহাকার বের হয়ে আসে “আহা বাংলাদেশ, লজ্জা! লজ্জা!”

[সূত্র: ইনকিলাব]