নবীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান সাজুর বিরুদ্ধে  ভিজিডির চাল আত্বসাতের অভিযোগ

0
672
blank
blank
 নবীগঞ্জে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী ৮নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজুর বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের বরাদ্ধকৃত ভিজিডির চাল ও সঞ্চয়ের টাকা আত্বসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। চেয়ারম্যান সাজু চৌধুরী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আইনুল হক এবং এনজিও কর্মী দেলোয়ার হোসেনের বিরোদ্ধে আইনানোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রাণালয়ে লিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড.নাজমানার খানুম। তিনদফা তদন্তে ধরাশায়ি হন আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু। তদন্তে তিনটি অভিযোগ প্রমানের সত্যতা নিশ্চিত করেন স্থানীয় সরকার সিলেট বিভাগের পরিচালক মতিউর রহমান।

এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। এছাড়াও চেয়ারম্যান সাজুর বিরোদ্ধে নাজেহাল ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগে থানায় সাধারন ডায়রী (জিডি) করেন সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন। জিডি নং ১৫৬৭। সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান সাজুর বিরোদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগ বিষয়ে হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম ৪ জুন বিভাগীয় কমিশনারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। চেয়ারম্যান সাজু চৌধুরী জেলা প্রশাসকের তদন্ত স্থগিত করে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১৮ জুন বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আবেদন করেন। বিষয়টি পরিচালক, স্থানীয় সরকার সিলেট বিভাগকে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার। ১লা আগষ্ঠ স্থানীয় সরকার সিলেট বিভাগের পরিচালক মতিউর রহমান উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করেন। স্বাক্ষ্য ও তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে অভিযুক্ত হন আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু।

এরই প্রেক্ষিতে ২৬ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ড.নাজমানার খানুম আইনানোগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। সূত্র জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান সাজু ২০১৫-২০১৬সালের ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাদের সঞ্চয়ের ৭৫ হাজার টাকা এনজিও সংস্থা স্প্যায়ার এর কো-অর্ডিনেটর এর সহযোগীতায় আত্মসাৎ করেন। এনিয়ে উপকারভোগী মহিলারা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারের নিকট অভিযোগ দেন। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাজুকে মহিলাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ দিয়ে দেয়ার জন্য বললে তিনি মহিলা বিষয়ক অফিসারকে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত ভাবে অবহিত করেন।

এরই প্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল উপকারভোগী মহিলাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হন চেয়ারম্যান সাজু চৌধুরী। ঘটনার তদন্তকালে ভিজিডি প্রাপ্ত উপকারভোগী মহিলারা জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর হতে ৬ মাসের চাল তারা পাননি। ইউনিয়নের প্রায় ১১১ জন হতদরিদ্র ভিজিডি কার্ডধারীকে ৬ মাসের চাল দেয়া হয়নি। বরাদ্ধকৃত ১১১ জনের ৩০ কেজি করে ৬ মাসের মোট ১৯ হাজার ৯ শত ৮০ কেজি ভিজিডির চাল ইউপি চেয়ারম্যান দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আত্মসাত করেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা। ঘটনা তদন্তের জন্য তিনজন অফিসারের সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হয়। ঘটনার সত্যতা পেয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এরই প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান সাজুর দুর্নীতি বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজিনা সারোয়ার। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের নতুন ভিজিডি তালিকা প্রণয়নের জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যান সাজু আহমেদ চৌধুরী ও তার কয়েকজন অনুগত সদস্য ওয়ার্ড পর্যায় হতে প্রস্তুতকৃত তালিকা বাদ দিয়ে তার নির্দেশনায় তালিকা তৈরীর জন্য ইউ/পি সচিব ও এনজিও কর্মীকে নানা প্রলোভন দেন। ২৯ ডিসেম্বর ভিজিডি কমিটির সভা আহ্বান করেন। সভায় চেয়ারম্যান এবং তার অনুগত ইউপি সদস্য নীতিমালা বহির্ভূত উপকারভোগীর নামের তালিকায় স্বাক্ষর দেয়ার জন্য ইউপি সচিব,এনজিও কর্মী ও ৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যকে চাপ প্রয়োগ করেন।

এনিয়ে ভিজিডি তালিকা প্রনয়ন কমিটির সদস্য সচিব, এনজিও কর্মী ও ৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য কমিটি থেকে অব্যাহতির জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেন। ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের বিরোদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন চেয়ারম্যান সাজু চৌধুরী। চাল আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান সাজু কার্ডে চাল পাওয়ার টিপসহি দিয়ে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে উপকারভোগীদের বাড়িতে কার্ড পৌঁছে দেন। এদিকে, ভিজিডি কার্ডধারীদের নিকট থেকে চেয়ারম্যান সাজুর কারসাজী সংক্রান্ত অভিযোগ ১০/১২ জন অফিসারের সামনেই রেকর্ড করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজিনা সারোয়ার। অধিকতর তদন্তে চেয়ারম্যান সাজুর বিরোদ্ধে হতদরিদ্র (ভিজিডি তালিকাভুক্ত) ১১১ জনের ৬মাসের চাল আত্বসাত, নতুন তালিকায় কারসাজি এবং সঞ্চয়ের টাকা আত্বসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। চেয়ারম্যান সাজুর দৌড়ঝাপ কাজে আসেনি। তিনদফা তদন্তে ধরাশায়ি হন তিনি।