নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সংশয়

0
549
blank
blank

মঈন উদ্দিন খান: পাঁচ মাসে গড়াল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বন্দিজীবন। একমাত্র বন্দী হিসেবে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত জীর্ণ কারাগারেই দিন কাটছে তার। গত মাসের শুরুর দিকে দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ ঘুরে মাটিতে পড়ে যাওয়া সত্তরোর্ধ্ব সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এতে পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। বন্দিত্ব ঘুচাতে বিএনপির আইনজীবীরা আদালতের বারান্দায় হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছেন; কিন্তু তারা শেষসীমা খুঁজে পাচ্ছেন না। একটি মামলায় জামিন হলে, অন্য মামলা মুক্তির পথে বাদ সাধছে। আর এভাবেই পেরিয়ে গেছে পাঁচ মাস। খালেদা জিয়া সহসা মুক্তি পাবেন কি না তা-ও অনিশ্চিত। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, যে মামলায় বেগম জিয়া কারা ভোগ করছেন, সেই মামলায় তিনি জামিন পাওয়া সত্ত্বেও কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। তাকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই সরকার এই পথ বেছে নিয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। ওই দিন থেকেই কারাগারে আছেন বেগম জিয়া। বিএনপির আইনীজীবীরা প্রথম দিকে দলীয় প্রধানের দ্রুত মুক্তি নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন; কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে তাদের সেই আশা তত উবে গেছে। কেউ কেউ বলছেন, কারাগারে যাওয়ার আগেই কুমিল্লা ও নড়াইলসহ নিম্ন আদালতের যেসব মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনপ্রক্রিয়া শেষ করা যেত, সেসব মামলা তখন ‘আমলে না নেয়ার কারণে’ আইনজীবীরা এখন ধুঁকছেন।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালিদা জিয়া সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এ মামলায় জামিন পাওয়ার অর্থই হচ্ছে বেগম জিয়া মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবেন; কিন্তু সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হতে পারছেন না। তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন যেসব মামলায় খালেদা জিয়াকে কূটকৌশলে আটকে রাখা হয়েছে, তার প্রত্যেকটিই জামিনযোগ্য। নড়াইল ও ঢাকার তিনটি মামলা মানহানিসংক্রান্ত, যা জামিনযোগ্য। অন্য দিকে ২০১৫ সালে যখন খালেদা জিয়াকে তার অফিসে বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল, তখন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তিনটি ঘটনায় মামলা করা হয়। এসব মামলার এফআইআরে খালেদা জিয়ার নাম ছিল না। রাজনৈতিক কারণে পরে মামলার চার্জশিটে তার নাম ঢুকানো হয়। এসব মামলার অন্য আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন, অথচ বেগম জিয়ার জামিন নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। কায়সার কামাল বলেন, নির্বাচন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দূরে রাখতেই সরকার এ ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।

স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ : এ দিকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি বলে পরিবার ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
গত মার্চের শেষের দিকে খালেদা জিয়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিএনপির উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে তার চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে সরকার। চার সদস্যের ওই বোর্ডের সদস্যরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা ‘গুরুতর নয়’। মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানা পরীক্ষা করা হয়। এক্স-রে করানোর জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে গত এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেও নেয়া হয়েছিল।

এরপর গত ৫ জুন হঠাৎ করেই কারাগারের ভেতরে খালেদা জিয়া দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এর দুই দিন পরে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে তার এক চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

তখন ওই চিকিৎসক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরীক্ষার জন্য প্রসথেসিস কম্পিটেবল এমআরআই মেশিন দরকার। উনার ক্যারোপিড ডটলাইট স্টাডি করে ব্রেনের সার্কুলেশন স্টাডি করা দরকার, উনার নার্ভ কনডাকশন স্টাডি করা দরকার, উনার সমস্ত মেটাবলিক প্রফাইল টাইম অ্যান্ড টাইম করা দরকার।’

অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকীসহ চার চিকিৎসকের একটি প্রতিনিধিদল বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা কারা কর্তৃপক্ষকে দিলেও পরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

বিএনপির দাবি ছিল- ইউনাইটেড হাসপাতালে বেগম জিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষার; কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি। দলটির অভিযোগ কারাগারে খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে নির্যাতন করতেই সরকার সুচিকিৎসার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

রাজপথেই সমাধান খুঁজছে বিএনপি : বিএনপির নেতারা বলেছেন, ‘আইনি মারপ্যাঁচে’ ফেলে সরকার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ আটকে রেখেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপি চরম ধৈর্যের সাথে চেয়ারপারসনের বন্দী পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু রাজপথেই এর সমাধান করতে হবে।’ একই সাথে দলের নেতাকর্মী ও জনমতকে নির্বাচনের পথে কিভাবে আরো সক্রিয়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই পরিকল্পনাও নতুন করে সাজিয়ে নেয়া হচ্ছে।
দলটির নীতিনির্ধারকেরা এ জন্য একটি মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে মাস দুই পরে দলটির চলমান কর্মসূচির ধরন পাল্টে যেতে পারে।

[নয়া দিগন্ত]