নির্বাচনের প্রস্তুতি গোপনে সবই চলছে জামায়াতের

0
449
blank
blank

নিউজ ডেস্ক: প্রকাশ্যে নড়চড় নেই জামায়াতে ইসলামীর। নেতাদেরও জনসমক্ষে দেখা যায় না। তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, উচ্চ আদালতের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা হলেও গোপনে জামায়াতের সাংগঠনিক কাজ পুরোপুরি চালু আছে। এর মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে ভেতরে-ভেতরে।
দলের উচ্চপর্যায়ের দুজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী দলের দায়িত্বশীল নেতারাও জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর করছেন। সাংগঠনিক বৈঠক চলাকালে গত মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আটজন, এর আগে দলীয় সাতজন চিকিৎসক নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর আপাতত কর্মসূচি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে দলের ভেতর কিছুটা মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে। এই পক্ষের নেতাদের মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, মিয়া গোলাম পরোয়ার, শামসুল ইসলাম, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আছেন।

অন্য দিকে নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত আবদুর রাজ্জাক, তাসনীম আলম এবং দলের চিন্তাশীল ব্যক্তি শাহ আবদুল হান্নানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক নেতারা আপাতত নির্বাচন থেকে বিরত থাকার পক্ষে। এ ছাড়া দলের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বেশির ভাগ বৈদেশিক শাখার নেতারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না নেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। তাঁরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতা কমিয়ে দাওয়াতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে কেন্দ্রকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষের নেতাদের যুক্তি হচ্ছে, সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের প্রায় সব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলা মাথায় নিয়ে নির্বাচনে নামলে নেতা-কর্মীরা আবারও গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে সংঘাত হবে। এককভাবে নির্বাচনে গেলে বিএনপির সঙ্গেও সংঘাত হবে। এতে দলের দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি হবে। এ অংশের নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রংপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকেরাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ২০-দলীয় জোটের মনোনয়ন পেতে জামায়াত বিএনপির কাছে ৫০টির মতো আসন চাইবে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ৩০টি আসন পর্যন্ত মেনে নেবে তারা। এর কম হলে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একটি বড় অংশ এককভাবে নির্বাচন করার পক্ষে। এমন পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে সারা দেশে ৭৩টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ২০-দলীয় জোটের মনোনয়ন পেতে জামায়াত বিএনপির কাছে ৫০টির মতো আসন চাইবে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ৩০টি আসন পর্যন্ত মেনে নেবে তারা। এর কম হলে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একটি বড় অংশ এককভাবে নির্বাচন করার পক্ষে। এমন পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে সারা দেশে ৭৩টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

এর পাশাপাশি জোটগত বা একক—যে কায়দায়ই নির্বাচনে যাক, কারও নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকায় তাঁদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। জামায়াত মনে করে, প্রার্থিতার ব্যাপারে তাদের অবস্থান ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে ভালো।

অবশ্য ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে ৩৫টি আসন ছেড়েছিল বিএনপি। চারটি আসনে দুই দলই প্রার্থী দিয়েছিল। সব মিলিয়ে জামায়াতের প্রার্থীরা মাত্র দুটি আসনে জিততে পেরেছিলেন। ওই নির্বাচনে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ইতিমধ্যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামী, মুজাহিদসহ দলের পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতার ফাঁসি হয়েছে। একই অপরাধে দণ্ডিত অবস্থায় কারাগারে মারা গেছেন সাবেক আমির গোলাম আযম ও নায়েবে আমির আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ। আরও তিন নেতা দণ্ডিত হয়ে কারাগারে আছেন। তাঁরা হলেন সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবদুস সুবহান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে জামায়াত ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া ও দণ্ডিত নেতাদের ছেলে বা পরিবারের কাউকে কাউকে প্রার্থী করতে চাইছে। দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, সারা দেশে তাঁদের নেতা-কর্মীরা সরকারি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বেশি। এ যুক্তিতে তাঁরা এবার বেশি আসনে জোটের প্রার্থিতা চাইবেন।

জামায়াত ও বিএনপির সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে জোটের প্রার্থিতা নিয়ে বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কক্সবাজারসহ বেশ কিছু জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এ নিয়ে বিরোধ বেধেছিল। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে বগুড়ায় বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। বেশ কিছু উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থীরা জয়ীও হন। এতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান খুব অসন্তুষ্ট হন। তখন বিএনপির অভিযোগ ছিল, জামায়াত স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচন করেছে। সে সময় ২০-দলীয় জোটের এক সভায় জামায়াতের প্রতিনিধি আবদুল হালিমের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন বেগম খালেদা জিয়া।

যোগাযোগ করা হলে জামায়াতের কোনো পর্যায়ের নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ দলীয় বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের মধ্যম সারির একজন নেতা বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় আগামী নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীদের খুব সমস্যায় পড়তে হবে। এতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বেড়ে যেতে পারে। পাল্টাপাল্টি প্রার্থিতা বাড়বে। এতে জোটের ঐক্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জামায়াতের এই রাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে ২০-দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, তা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। তাই এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেত চান না।

উৎসঃ   প্রথমআলো