ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে জাতির কাছে দেয়া সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য অতীতের মতো শুধু নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার নয়, নির্বাচনের দায়িত্বরতদের কর্মপন্থার কাঠামোয় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৌরাত্ম্য অনেকটা কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এমনটি চলতে থাকলে আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্বরত বাহিনীগুলো তাদের যার যার অবস্থান থেকে ভোটে প্রভাব খাটাতে পারে। তাই অংশীজনের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় সংলাপের পুরো অংশজুড়েই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আইনি সংস্কারের ওপরে অধিক জোর দেবে ইসি। সেই সঙ্গে কীভাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংজ্ঞায় ইসির ক্ষমতা প্রয়োগের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়, তা নির্ধারণেও মতামত গ্রহণ করা হবে। আগামী ৩১ জুলাই সংলাপ শুরুর মধ্য দিয়ে ব্যস্ততা বাড়ছে কেএম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের। এই নির্বাচনী সংলাপে ৭টি বিষয়কে এজেন্ডাভুক্ত করা হলেও গুরুত্ব পাবে চারটি স্পর্শকাতর বিষয়। এগুলো হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীন ক্ষমতা নিশ্চিত করতে নির্বাচনী আইন ও বিধির সংস্কার, তিনশ’ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং ভোটগ্রহণের দিনে বিভিন্ন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত ইস্যু। এ ছাড়া আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। এসবের মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি, নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা ইত্যাদি।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর হয়ে কাজ না করার বিষয়ে বর্তমান কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই সংলাপে কমিশন নিজ উদ্যোগেই নির্বাচনগুলোয় তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো এজেন্ডাভুক্ত করে তা অংশীজনদের কাছে তুলে ধরবে। ইসির প্রস্তাবিত মতামত এবং স্টেকহোল্ডারদের মতামত একত্র করে খসড়া আইনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠাবে। তবে চারটি মূল ইস্যুর মধ্যে সীমানা পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে নানা হিসাব-নিকাশ কষছে কমিশন। ২০০৮ সালে তিনশ’ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩৩টিতে আমূল পরিবর্তনে আসন-বিন্যাস এলোমেলো হয়ে যায়। এটাকে বিদায়ী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন যেমন ভালো চোখে দেখেনি; তেমনি নতুন কমিশনের সামনে ওই সময়ের সীমানা-বিন্যাস জটিল সমীকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসির ভাষ্য হচ্ছে, ব্যক্তিস্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক কোনো দলকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে তখন আসনগুলোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এবার সীমানা-বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন তারা না আনার পক্ষে। কারণ সংসদীয় আসনগুলো যেভাবে বিন্যাস হয়ে আছে- নতুনভাবে বিন্যস্ত করতে গেলে জগাখিচুড়ির পর্যায়ে চলে যেতে পারে। একইভাবে রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবি অনুযায়ী পুরনো সীমানায় ফিরে যাওয়ারও সুযোগ কম। ফলে সীমানা পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বর্তমান কমিশন।
এদিকে নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইসির নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন ও অনুসরণের বাধ্যবাধকতার মধ্য নিয়ে আসতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করার বিষয়টি সংলাপে রাখা হচ্ছে। ভোটগ্রহণের দিনসহ ভোটের আগে ও পরে নির্বাচনের দায়িত্বরত বিভিন্ন বাহিনী নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার নিজেদের হাতে রাখতে চায় কমিশন। প্রতিটি নির্বাচনেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনকারীদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠেছে। কিন্তু কমিশন সরাসরি কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। দুর্বল আইন থাকার কারণে বাহিনীর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরাসরি শাস্তির এখতিয়ার নেই কমিশনের। স্ব-স্ব বাহিনীর প্রধানদের চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাতে হয়। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে কমিশন যাতে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারে, সে জন্য আরপিওতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে কঠোর অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, এবারের সংলাপে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। এর মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা-বিন্যাস, মাঠ কর্মকর্তাদের লিখিত আইনি মতামত, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং কেন্দ্র পাহারায় থাকা বিভিন্ন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। তবে সীমানা-বিন্যাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ অতীতে সীমানা-বিন্যাস করা হয়েছিল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থে। সেসব বিষয় এড়িয়ে সব দলের জন্য সমান সুযোগ রেখে কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ইসি সচিব।
উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.