নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন: বিএনপির রূপরেখা চূড়ান্ত

0
971
blank

ঢাকা: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব অথবা প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিবদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করার বিধান রেখে ইসি পুনর্গঠন রূপরেখার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এছাড়া নাগরিক সমাজ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি- এ চার স্তর থেকে একজন করে কমিশনার নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে খসড়ায়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৮ নভেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায় হোটেল ওয়েস্টিনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের রূপরেখা তুলে ধরবেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে স্থায়ী কমিটি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রূপরেখার ওপর প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেবেন চেয়ারপারসন। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
আরও জানা গেছে, রূপরেখায় নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলেও পদগুলোর বিপরীতে কোনো নামের তালিকা দেয়া হবে না। আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে কমিশনার করার প্রস্তাব খসড়ায় রাখা হলেও সে ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সম্মতি মেলেনি খালেদা জিয়ার।
তিনি (চেয়ারপারসন) বিচারপতিদের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়াতে চাচ্ছেন না। রূপরেখার খসড়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক বলেন, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ কমিটি উল্লিখিত ক্যাটাগরি বা স্তর থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ বাকি সদস্যদের নাম প্রস্তাব করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের বিপরীতে দুইজন এবং চার নির্বাচন কমিশনার পদের বিপরীতে আটজনের নাম প্রস্তাব করার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামের মধ্য থেকে সিইসি ও কমিশনার পদে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
শুধু আগামী নির্বাচন নয়, ভবিষ্যতে কীভাবে একটি বিতর্কমুক্ত কমিশন গঠন করা যায়, সেই ব্যাপারেও দলের অবস্থান তুলে ধরা হবে রূপরেখায়। স্বাধীনতার পর ৪৫ বছর চলে গেলেও ইসি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো আইন না হওয়ায় রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হবে। ইসি পুনর্গঠনে বিতর্ক এড়াতে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি আইন প্রণয়নের সুপারিশও থাকবে রূপরেখায়।
সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে দলের পক্ষ থেকে রূপরেখা তুলে ধরা হলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আপাতত কোনো রূপরেখা দেয়া হবে না। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখাও তৈরি করে রাখবে দলটি। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা সম্ভব হলেই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তুলে ধরা হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার টেলিফোনে বলেন, সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সেই ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসন বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
আরও জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত করা হচ্ছে আমন্ত্রণপত্র। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই আমন্ত্রণপত্র আজকালের মধ্যে বিতরণ শুরু করা হবে। আমন্ত্রিতদের তালিকায় থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং যুগ্ম মহাসচিব, ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা।
বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এ রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. মাহবুবউল্লাহ, সাবেক সচিব ড. জবিউল্লাহ প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে হয়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য স্বাধীন কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়েও একটি সমাধানে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে দলের চেয়ারপারসন শিগগিরই বিএনপির অবস্থান তুলে ধরবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রূপরেখায় কি থাকবে তা চেয়ারপারসন নিজেই জানাবেন।
রূপরেখা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন নেতা জানান, খসড়া প্রণয়ন করার আগে দলের বাইরে থাকা কয়েকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও দেশী-বিদেশী শুভাকাক্সক্ষীর পরামর্শ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভারতসহ বিশ্বের গণতান্ত্রিক কয়েকটি দেশের নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনের বিধিবিধান পর্যলোচনা করে তা রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রূপরেখার খসড়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এরই মধ্যে কয়েক দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। আগামী বুধ কিংবা বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ খসড়ার ওপর প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে পারেন তিনি।