শেষবার যখন বাবা বাড়ীতে আসবেন বলে ফোন করলেন তখন আনন্দে নেচেছে নীলা।সব বন্ধুদেরকে বলে বেড়িয়েছে এই তোমরা সবাই শুনছো বাবা দেশে আসবেন।নীলা ওর মা-বাবার একমাত্র সন্তান।খুব আদর আর যত্ন নিয়ে বড় হয়েছে নীলা।সবে ১৩ বছরে পদার্পণ করেছে ও।
যখন নীলার বাবা বিদেশে যান তখন ও ছিলো খুব ছোট।সে সময়ের কোন কথা ই মনে নেই নীলার।সংসারের টানাপোড়ন ছিলো সব সময় ই নীলাদের।চাচাদের কাছ থেকে আলাদা হওয়ার পর কোন এক সুযোগে লন্ডনে চলে যান নীলার বাবা।এরপর ধীরে ধীরে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে তাদের সংসারে।
লন্ডনের আবহাওয়া আর মেয়েদের মন নাকি একরকম।কখন ঠান্ডা কখন গরম বলা মুশকিল।তখন লন্ডনে প্রচুর ঠান্ডা পড়েছে। বরফও পড়েছে খুব।সূর্য্যের মুখ দেখা যাচ্ছেনা কয়েকদিন ধরে।চারদিক কেমন যেনো নীরব।মানুষের চলাফেরাও সীমীত।
হঠাৎ নীলার মা ডাকলেন নীলা তোমার বাবার সাথে কথা বলো এসে।ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে নীলার বাবার ঠান্ডা কন্ঠস্বর কেমন আছো মা?
ভয়ার্ত কন্ঠে নীলা বললো কি হয়েছে বাবা আপনার?এভাবে আস্তে কথা বলছেন কেনো?
না মা এসব কিছুনা,ঠান্ডায় হালকা সর্দিজ্বর।
ডাক্তার দেখান বাবা।
আচ্ছা মা,তুমি চিন্তা করোনা।তোমার জন্য কি কিনবো বলো?
আমার কিছু লাগবেনা বাবা।
কি বলো মা? তোমার কিছু লাগবেনা?আমার সব ই তো তোমার জন্য।
হ্যালো?হ্যালো বাবা?হ্যালো।আর কিছু শুনতে পায়না নীলা।ফোনে চার্য নেই।জুরে বললো মা আজ ফোনে চার্য দাওনি?
কেনোরে মা?
চার্য শেষ।
সেদিনকার মতো মন খারাপ করে বসে তাকে নীলা।বাবার সাথে কথাই বলা হলোনা।
নীলার শখের দুটি গাছ আছে,এগুলো তার বাবার লাগানো।এজন্য এগুলো তার বেশি প্রিয়।প্রায় পাশাপাশি বসে আছে দুটি গাছ,যেনো দুই বন্ধু গল্পে স্বল্পে ব্যস্ত। মন খারাপ হলে প্রতিদিনকার মতো চেয়ার নিয়ে গাছের ছাঁয়ায় বসে থাকে নীলা,আজও বসেছে গাছের ছাঁয়ায়।হঠাৎ নীল আকাশের দিকে মুখ ফেরাতেই চোখে পড়লো টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া আর থুকা থুকা জারুল ফুলের দিকে।নীল আকাশের শুন্যতায় টকটকে লাল আর জারুল ফুল যেনো আকাশের রূপ বহুগুণ বাড়িয়ে দিলো।অলক্ষেই মন ভালো হয়ে গেলো তার।
একদিন স্কুলের বেঞ্চে বসে বাদাম খাচ্ছে নীলা।বাদামের খোসা ছড়াতে ছড়াতে হঠাৎ চোখ গেলো জানালার দিকে।দেখে ছোট মামা আসছেন।কিছু সময় পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসে বললেন তোমার মামা তোমাকে নিতে এসেছেন, যাওতো মা।
মামার সাথে নীলা আসতে আসতে জিঙ্গাসা করলো আমাকে নিয়ে এলেন কেনো মামা?
এমনিতেই।ভাবলাম অনেকদিন তোমাদের বাড়ীতে যাইনা তাই আজকে তোমাকে নিয়ে একেবারে গেলাম।
নীলাদের বাড়ীতে এখন মানুষের আনাগোনা।সবাই নীলার অপেক্ষায়।কখন আসবে নীলা।নীলার মা বারবার মূর্চা যাচ্ছেন।প্রতিবেশি মহিলারা বসে আছেন উনাকে ঘিরে।নীলা বাড়ীর হাল্লাটে এসে দেখতে পেলো বাড়ীতে মানুষের আনাগোনা। আরেকটু কাছে আসতেই কান্নার রুল শুনে দৌড়ে ঘরে চলে এসে মায়ের এ অবস্তা দেখে বললো কি হয়েছে মা?মায়ের কি হয়েছে?নীলার মাথায় হাত রাখলেন নীলার নানু।শোকে স্তব্ধ সবাই।সব শুনে নীলা কথা বলছেনা।মূর্তির মতো বসে আছে।নীলাকে নিয়ে এখন ব্যস্ত সবাই।
আজ শনিবার।লন্ডন থেকে নীলার বাবার কফিন আসছে।নীলা আর তার মাকে নিয়ে বসে আছেন সবাই।এম্বুলেন্স বাড়ীতে উঠছে।দাফন হলো নীলার বাবার।
।।পরেরদিন।।
চকচকে বসন্তের সকাল।বাবার লাগানো গাছদুটির নীচে চেয়ারে বসে আছি আমি।পরম মমতায় গাছদুটি ছাঁয়া দিচ্ছে মাথার উপর।এখান থেকে একটু সামনে তাকালেই দেখা যায় বাবার কবর।কবরের দিকে চেয়ে আছি আমি।টুপ টুপ করে গড়িয়ে পড়ছে চোখের জল।কয়েক ফুটা হাতে পড়তেই উপরের দিকে চোখ তুললাম।"মাথার উপরের আকাশ ঢেকে আছে লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়া আর নীল জারুলে,আমার অশ্রুভরা চোখে লাল-নীল সব রঙ ঝাপসা লাগছে।আচ্ছা,চোখের জলের কি নিজস্ব কোন রঙ থাকতে নেই?"
পুন্শচ: লন্ডনে নীলার বাবা একা থাকতেন।হঠাৎ একদিন পুলিশ এসে নীলার বাবার লাশ উদ্ধার করে।পরে পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে জানানো হয় নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডের কারনে উনার মৃত্যু হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.