নুসরাত হত্যায় প্রশাসনের অবহেলা ছিল: মানবাধিকার কমিশন

0
807
blank
blank

ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে আগুনের পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবেদন দিয়েছেন মানবাধিকার কমিশন, সেখানে কমিশন সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, এ ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অপরাধ করেছেন, জেলা প্রশাসনেরও অবহেলা ছিল। কমিশন নুসরাত হত্যার জন্য এসব কর্মকর্তাদের অপরাধ ও অবহেলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী রিয়াজুল হক গণমাধ্যমের কাছে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

গত ৬ এপ্রিলে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অনুগত কয়েকজন শিক্ষার্থী। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওইদিনই গুরুতর আহত অবস্থায় মাদ্রাসা ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। শরীরে ৮৫শতাংশের বেশি পোড়া নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত বুধবার হার মানেন নুসরাত। এর মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজউদ্দৌলা নিজ অফিস কক্ষে নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানি করেন। তার নির্দেশেই তাঁর ঘনিষ্ঠরা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ফলে তার মৃত্যু হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর থানায় দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নুসরাতকে নানানভাবে যৌন হয়রানি মূলক প্রশ্ন করেন। তারা বিষয়টিতে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাতের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থী।

মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর এবং উপ-পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এম রবিউল ইসলাম এ তদন্ত করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজ উদ দৌলা ১৯৯৫ সালে দৌলতপুর মাদ্রাসার সুপার ছিলেন। তখন ওই মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর সমকামিতার অভিযোগ ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে। প্রতারণার মামলায় তিনি এর আগে জেলও খেটেছেন। তিনি ২০০১ সাল থেকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি নিয়মিত তাঁর অফিসে মেয়েদের ডাকতেন। তাঁর কক্ষে একই সময় একজনের বেশি ছাত্রীর প্রবেশ নিষেধ ছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ছাত্রী ও অভিভাবকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মাদ্রাসার গভর্নিং বডি ও থানায় অভিযোগ করে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

প্রতিবেদন প্রকাশের সময় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তিনি একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কীভাবে নিয়োগ পান তা অবিশ্বাস্য। কারা তাঁকে নিয়োগ দিলেন, এর তদন্ত হওয়া উচিত।’

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘যদি অপরাধীদের যথাযথ বিচার হয় তবেই নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে।’

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে অভিযুক্ত পুলিশকে ক্লোজ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশের দোষী সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবেদনে সাত দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশসমূহ হল:

১। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা।

২। দ্রুত এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা।

৩। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

৪। পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

৫। মাদ্রাসায় সিরাজ উদ দৌলাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

৬। মাদ্রাসার গভর্নিং বডি পুনর্গঠনেরও সুপারিশ করা হয়।

৭। নিহত নুসরাতের পরিবারের সব সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও সুপারিশ করা হয়।