পাল্টে গেছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দৃশ্যপট

0
2059
blank
blank

আজিজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এ দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে বেচে থাকবে। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধ্বংশ করার লক্ষে জাতীর জনকসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করে। তৎকালিন সময়ে দেশের বাহিরে থাকার দরুন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা বেচে যান। পরে তিনি বাংলার জনগনের ভোটে জনসাধারনের মধ্যমনি হয়ে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।নিবাচিত হয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার পুরন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বেন। আর এদেশ উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাড়াবে।শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় প্রতিটি অঙ্গনে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে,যা আজ বিশ্ব স্বীকৃত। তেমনি উন্নয়নের একটি বিরাট অংশ দেশের স্বাস্থ্যখ্যাত।বর্তমান এদেশের স্বাস্থ্যসেবার সাফল্য অনেক দেশের জন্য উদাহরণ। সরকার জনগণের জন্য মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এজন্য প্রয়োজন দেশের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন। সে দিক থেকে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণে কাজ করে যাচ্ছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। বর্তমানে পাল্টে গেছে হাসপাতালের সেবার মান ও দৃশ্যপট। আগের মত যত্রতত্র পার্কিং,যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা দেখতে পাওয়া যায় না। পুলিশের পাশাপাশি হাসপাতালের শৃৎখলা বজায় রাখতে সবর্দা আনসার বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমান সময়ের আগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার,নার্সগুলো রোগীদের সাথে অশোভন আচরন করত। অনেক রোগী আবার দালালের খপ্পরে পরে সর্বশান্ত হত।
রোগীদের সাথে আলাপকালে জানান যায়,ইনডোরে ভর্তি রোগীদের সব সময় ডাক্তার,নার্স পাওয়া যায়। রোগীদের প্রয়োজনে যে কোন সময় তারা প্রয়োনীয় সেবাগুলো পেয়ে থাকেন।
হাসপতালের ৪ নাম্বার ওর্য়াডের ভর্তি মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান জানান, আমি কয়েক বছর আগে একবার ওসমানীতে ভর্তি ছিলাম। কিন্তু আগের তুলনায় বর্তমানে হাসপাতালের সেবার মান অনেক উন্নত। আগে রোগীরা ডাক্তারের দারস্থ হত আর এখন ডাক্তাররা রোগীদের কাছে এসে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
২ তলার ১৭নং ওয়ার্ডের জজ বানু জানান, আমি গাড়ি দূঘটনায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হই। প্রথমে ডাক্তার বলছিল,আমার পা কেটে ফেলে দিতে। আমরা রাজি না হলে,পরে অপারেশনের জন্য তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন।কিন্তু সম পরিমান টাকা দিতে আমরা অক্ষম ছিলাম। পরে একজনের পরমর্শে আমি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের তত্বাবধানে এক মাস চিকিৎসা নিয়ে আমি পুরোপুরি সুস্থ হই।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার হাতে হাসপাতালের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকলেও এখন যেন পাল্টে গেছে গোটা হাসপাতালের চেহারা। হাসপাতালটির সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি বেড়েছে চিকিৎসা সেবার মান। আর এ সকল অবদানে যিনি কাজ করছেন তিনি হলেন হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একে এম মাহবুবুল হক। তাঁর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের উন্নয়ন কর্মকান্ড।
আবাসিক চিকিৎসক আবু নাঈম মোহাম্মদ জনান,বর্তমান হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের তত্বাবধানে আগের তুলনায় এখন আরোও বেশি রোগী আউটডোর থেকে সেবা এবং ঔষধ দুটি পেয়ে থাকে। আউটডোরের বড় করে সিটিজেন চার্টার লাগানো হয়েছে। একজন রোগী হিসাবে কি কি সেবা পাবেন,তা সব কিছু উল্লেখ আছে র্চাটারে। তিনি আরও বলেন, সরকারের ডিজিলাইজেশনের সবচেয়ে বড় অবদান টেলিমেডিসিন। বর্তমান পরিচালক মহোদয়ের তথ্যবধানে প্রতিদিন বাংলাদেশের প্রত্যঞ্চলের অর্ধশতাধিক রোগীকে টেলিফোনের মাধ্যমে প্রেসক্রিশন প্রধান করে থাকি।
ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য আছে ২৪ ঘন্টা সক্রিয় সিসি টিভি ক্যামেরা আর স্টাফদের প্রত্যেকের সঠিক ইউনিফরম। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একে মাহবুবুল হক যোগদান করেন চলতি ২০১৭ সালের ৫ মার্চ রোববার। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বাঞ্চারামপুর থানায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে সরারসরি ক্যাপ্টেন পদে যোগদান করেন। চাকুরীকালীন সময়ে তিনি এমপিএইচ এবং এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। বিগত চাকুরী জীবনে তিনি সেনাবাহিনীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন, যার মধ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের অধিনায়ক, ফিল্ড মেডিকেল ইউনিটে অধিনায়ক, সামরিক চিকিৎসা মহাপরিদপ্তরের স্টাফ পদ, আমর্ড ফোসের্স মেডিকেল কলেজ ও এএমসি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে স্টাফ পদ উল্লেখ্যযোগ্য।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব ওকেপি-৫ কুয়েত ও ব্যানব্যাট-৬ সুদানে জাতিসংঘ মিশনে প্রায় সাড়ে ৪ বৎসর কমর্রত ছিলেন। তাছাড়াও তিনি বিজিবি ও ক্যাডেট কলেজের আরএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বর্তমান পদবীতে যোগদানের পূর্বে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, জালালাবাদ সেনানিবাস সিলেট, অ্যাসিটেন্ট ডাইরেক্টর মিডিকেল সার্ভিসেস (এডিএমএস) হিসেবে এক বৎসর ৬ মাস দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে তিনি ওসমানী হাসপাতালে থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন দিক দিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোগীদের এবং একই সাথে ডাক্তারদের জন্য একটি চমৎকার স্থান হয়ে উঠেছে। মানুষ হচ্ছে হাসপাতালমুখী, আর ডাক্তাররাও সেবা দিয়ে পাচ্ছেন তৃপ্তি।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে সকল পরিবর্তন দেখা যায়, তার মধ্যে রয়েছে- নতুন একটি ওয়ার্ড (২৬ নম্বর পুরুষ মেডিকেল) চালু হয়েছে এবং আরো ২টি ওয়ার্ড (পুরুষ মেডিসিন ও মহিলা সার্জারি) চালু করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ চলছে, কারাবন্দীদের জন্য পৃথক প্রিজন সেল উদ্বোধন করে কার্যক্রম চালু হয়েছে, ২টি পানির পাম্প স্থাপন করে কার্যক্রম চলছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত আইসিইউ ভবনের কার্যক্রম চালু হয়েছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে অবৈধ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড সরানো হয়েছে, স্ক্যানু ইউনিট চালু করার জন্য বিষটি প্রক্রিয়াধীন আছে, হাসপাতালের জন্য কোবাল্ট ৬০, এমআরআই, সিটিস্ক্যান ও লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিন প্রাপ্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্রয় কার্যক্রম চলছে, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন রক্ষনাবেক্ষন কাজ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম ই-টেন্ডারিং চলছে। এছাড়াও হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বার্ণ ইউনিট চালু এবং শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশু ওয়ার্ডে (২৩ নম্বর ওয়ার্ড) প্লে কর্ণারের কার্যক্রম চালু হয়েছে।
হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একে মাহবুবুল হক জানান, বর্তমান সরকারের শতভাগ সেবা দিতে হাসপাতালের দায়িত্ব বার গ্রহন করি। রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আমি হাসপাতালে যোগদানের পর দীর্ঘ ৪১ বছর পর হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃত স্থাপন করি। সিলেটবাসীর একান্ত প্রচেষ্টায় চিকিৎসা সেবাকে আর্ন্তজাতিক মানের সেবায় রুপান্তর করার লক্ষে কাজ করে যাব ইনশাল্লাহ।