পৌর নির্বাচন: কার জয়, কার পরাজয়?

0
934
blank
blank

মীযানুল করীম: ২০১৪ সাল যেভাবে শুরু হয়েছিল প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে, এবার ২০১৫ সাল শেষ হলো একই মানের আরেকটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। উভয় নির্বাচনকালে একই দল ক্ষমতায় এবং অভিন্ন নির্বাচন কমিশন পরিচালনার দায়িত্বে। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, আগেরটা ছিল জাতীয় নির্বাচন, আর এবারেরটা স্থানীয় নির্বাচন। কিন্তু যে দেশে গণতন্ত্র দৃঢ়মূল হয়নি স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দী পরেও, সেই বাংলাদেশে স্থানীয় নির্বাচনও জনপ্রতিনিধিমূলক সুশাসন ও উন্নয়নের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিহাস দীর্ঘ। কারণ, ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৭ সালে আইনসভা বা প্রাদেশিক পার্লামেন্ট নির্বাচনের বেশ আগে ১৯১৯ সালে ইউনিয়ন বোর্ড নির্বাচনের সূচনা হয়েছিল। গ্রামপ্রধান এ দেশের মানুষের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আজো স্বল্পশিক্ষিত ও নি¤œবিত্ত। রাজনৈতিক ইস্যুনির্ভর পার্লামেন্ট নির্বাচনের চেয়ে উন্নয়ন ইস্যুভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনের সাথে তাদের নৈকট্য বেশি। এ নির্বাচনের প্রার্থী এবং প্রচারণার বক্তব্যের সাথে তারা বেশি পরিচিত। অপর দিকে, এ ধরনের ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে অনিয়ম, চাপ, হুমকি ইত্যাদি সেই ঔপনিবেশিক আমলেই শুরু। তবে ১৯৪৭ সালের প্রথম স্বাধীনতার পর নির্বাচনী অন্যায় ও দুর্নীতি বেড়ে যায় ক্রমেই। আর স্বাধীন বাংলাদেশ আমলে এর সাথে ক্রমান্বয়ে বেড়ে গেছে নির্বাচনকালীন সন্ত্রাস ও সহিংসতা। কোনো একটা ওয়ার্ডের উপনির্বাচন থেকে দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত সব স্তরে এটা সংক্রমিত হয়েছে। নির্বাচনটা কি ‘স্বৈরাচারী’ আমলে হলো, নাকি ‘গণতান্ত্রিক’ আমলে হয়েছে, এতে বেশি ফারাক দেখা যাচ্ছে না অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে। ২০১৫ সালে দেশের বড় দুই শহরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর বছর শেষে ছোট শহরগুলোর পৌরসভা নির্বাচন শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের একই অবাঞ্ছিত অভিজ্ঞতায় মর্মাহত করেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের দিন অনিয়ম, কারচুপি, ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, হামলা প্রভৃতি কারণে ২৫টি পৌরসভার মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। তাদের মধ্যে শুধু যে বিএনপির প্রার্থী আছেন তা নয়। সরকারের শরিক জাতীয় পার্টি, এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং (অবিশ্বাস্য হলেও সত্য) আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল প্রার্থী পর্যন্ত আছেন। নড়াইলের কালিয়া পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
ভোটের আগের রাতেই মাদারীপুর জেলার কালকিনির দু’টি কেন্দ্রে ১১০০ ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে যায়। ফলে ভোট নেয়া আর সম্ভব হয়নি। বৃহত্তর নোয়াখালীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনী (বেগমগঞ্জ উপজেলা সদর) পৌরসভার ২০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতেই ভোট গ্রহণ স্থগিত করতে হয়। কারণ হচ্ছে, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, জালভোট, ব্যালট বাক্স ও ব্যালট ছিনতাই। যশোর শহরে এমএম কলেজ কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভোট গণনা শুরু করায় সেখানে সব ব্যালট পেপার জব্দ করাসহ ভোট স্থগিত করা হয়েছে। সকালে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ব্যালটে সিল মারায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশে তিনটি কেন্দ্রে ভোট নেয়া স্থগিত হয়ে যায়। কুমিল্লার বরুড়ায় একটি কেন্দ্রে ভোরে গুলি চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ব্যালট ও বাক্স ছিনতাই করে। ফলে আর ভোট নেয়া সম্ভব হয়নি। সরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত করতে হয়েছে।
এবারকার পৌর নির্বাচনের প্রধান বৈশিষ্ট্যÑ দলীয়ভাবে হওয়া (যদিও শুধু মেয়ররাই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছেন)। আর নির্বাচনের দিন সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো রকমারি সন্ত্রাস সহিংসতা, আর অন্যায়-অনিয়ম। এর পাশাপাশি একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, প্রথমবারের মতো হিজড়াদের ভোট প্রদান। যেমনÑ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর নির্বাচনে ১৯ হিজড়া ভোট দিয়েছে। অবশ্য তাদের ভোট দিতে হলো ‘নারী’ হিসেবে।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিজ জেলা বগুড়া, বেগম জিয়ার পারিবারিক আবাসের জেলা দিনাজপুর এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পৌরসভা নির্বাচনে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জিতেছেন এ দলের প্রার্থীরাই। কয়েক স্থানে বিএনপি পরাজয়ের মাধ্যমে খেসারত দিয়েছে কোন্দলজনিত ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তার চেয়েও বড় কথা, ক্ষমতাসীন প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের দুর্গ হিসেবে অভিহিত এলাকাগুলো টার্গেট করেছিল। সে মোতাবেক সরব ও নীরব, সশস্ত্র ও নিরস্ত্রÑ যাবতীয় অপকৌশল প্রয়োগ করে নির্বাচনের ফসল নৌকায় তোলা হয়েছে বিভিন্ন পৌরসভায়।
অতীতে মানুষের লজ্জাশরম বেশি ছিল। তাই নির্বাচনে জালিয়াতি-দুর্নীতি হতো কম। আর এসব করা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অপরাধবোধ থাকত। তারা প্রকাশ্যে বা বেপরোয়াভাবে অনিয়ম, কারচুপি, ব্যালট চুরি বা কেন্দ্র দখল করতে দ্বিধা করত। এখন ওসবের বালাই নেই। ক্ষমতার দম্ভে কিংবা প্রার্থীবিশেষের মমতায় নগ্নভাবে জালিয়াতি, ভোটডাকাতি করতে দেখা যায়। ‘কারচুপি’র এক অর্থ, কাপড়ের ওপর কারুকাজ করা। আজকাল কিছু লোকের কাজকারবারে মনে হয়, তারা নির্বাচনে কারচুপি করার মতো অসৎ কাজকেও কারুকাজের মতো নির্দোষ ব্যাপার মনে করে। এর সাথে যোগ হয়েছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিভ্রান্তি। এবারো দেখা গেছে, কোনো কোনো স্থানে সাধারণ ভোটার এবং অপছন্দের প্রার্থীর সমর্থকদের বাধা দিয়ে ভেতরে নিজেদের লোক দিয়ে অবাধে সিল মারা হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। এর অর্থ, দৃশ্যত অবাধ ও শান্তিপূর্ণ মানেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নয়। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডক্টরিংয়ের কথা আগে শোনা যেত। পেশীজীবীদের ‘ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’-এর ধরন বদলে যাচ্ছে। যেমনÑ এবার অনেক জায়গায় ভোটকেন্দ্রের সামনে হঠাৎ সশস্ত্র ও মারমুখো মিছিল এসে হাজির। সাথে সাথে সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত ভোটারের দীর্ঘসারি হাওয়া হয়ে গেছে। বিশেষ প্রার্থীরা এটাই চেয়েছেন। এরপর সিল মারা অথবা কিল মারার কাজ সহজ হয়ে যায়।
পৌর নির্বাচনের পর দিনের জাতীয় সংবাদপত্রগুলোর শিরোনাম থেকেই স্পষ্ট, এই নির্বাচন স্থানীয় সরকারে সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনে সহায়ক ছিল, নাকি এ দেশের অবশিষ্ট গণতন্ত্রটুকুও নির্বাসনে পাঠানোর ক্ষেত্রে ‘অবদান’ রেখেছে। এসব সংবাদপত্রের প্রায় সবগুলোই বর্তমান সরকারের সমর্থক বা আস্থাভাজন। তাদের শিরোনামগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচন এই সরকার, ক্ষমতাসীন দল এবং এখনকার নির্বাচন কমিশনের শিরে মুকুট পরিয়েছে, না কলঙ্ক কালিমা লেপে দিয়েছে।
এখানে নমুনাস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, ৩১ ডিসেম্বরের দৈনিক যুগান্তর লাল রঙে ব্যানার হেডিং দিয়েছেÑ প্রশ্নবিদ্ধ ভোট : ইসির ভরাডুবি। প্রথম পৃষ্ঠার দু’টি শিরোনামÑ (সিঙ্গল কলামে) পৌর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে : সব দলকে মেনে নেয়ার আহ্বান আওয়ামী লীগের। একই পৃষ্ঠায় (ডাবল কলামে) আরেক খবর : কেন্দ্রে গিয়ে দেখি ভোট দেয়া হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় বড় হেডিং : পুলিশের সহযোগিতায় জালভোট। তৃতীয় পৃষ্ঠায় শিরোনামগুলোর কয়েকটিÑ যশোরের ১৯ কেন্দ্রে আগের রাতে নৌকায় সিল মেরে বাক্সভর্তি। বিএনপির এজেন্টদের বের করে ভোটডাকাতির অভিযোগ, ধামরাইয়ে আ’লীগের কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল। পত্রিকাটির শেষ পৃষ্ঠায় ওপরের অংশে প্রধান শিরোনাম : বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা। অন্যান্য শিরোনাম : সরেজমিন তারাব পৌরসভাÑ ভোটারশূন্য কেন্দ্রে বাক্সভর্তি ভোট! মুন্সীগঞ্জের দুই পৌরসভাÑ জালভোটের মহোৎসব, আ’লীগের দু’পক্ষের তাণ্ডবে আহত ১৭, নরসিংদীতে তিন পৌরসভায় ভোট ডাকাতি, সাভারে ব্যালট ছিনিয়ে সিল, পাহারায় আ’লীগ নেতারা; সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে বাধা; আশঙ্কা সত্য করে প্রহসনের নির্বাচনই হলো : ফখরুল।
জামায়াতে ইসলামী নিকট অতীতে জনসমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তির দিক দিয়ে দেশের তৃতীয় প্রধান দল হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে হামলা-মামলা, গুম-গ্রেফতার, নিধন-নির্যাতন মিলে বেনজির দমনপীড়নে দলটি বিপর্যস্ত। ঊর্ধ্বতন তিন নেতার ফাঁসি পর্যন্ত হয়ে গেছে। দুরবস্থা এমন চরমে যে, এবার দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে নির্বাচন করতে পারেনি আইনি বাধায়। জামায়াত সারা দেশ মিলিয়ে অল্প ক’টি পৌরসভায় নির্বাচনে নেমে দু’টিতে মেয়র আসন জিতে নিয়েছে। একটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর, অন্যটি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ। চাঁপাই যে এখনো জামায়াতপ্রভাবিত এলাকা, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো।
যা হোক, দেশের মিডিয়ার প্রায় সবাইসহ সুশীল ও রাজনীতিকদের বেশির ভাগই জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পরই স্থান ও মর্যাদা দিয়ে থাকেন। কিন্তু রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের সবচেয়ে কুশলী অভিনেতাদের একজন, হু.মু. এরশাদের এ দলের অবর্ণনীয় করুণ দশা এবারে পৌর নির্বাচনে নগ্নভাবে ধরা পড়েছে। ‘রংপুরের বাহে’ এরশাদের নিজ এলাকা এখন আর জাপার দুর্গ নয়। এবার রংপুর জেলায়ও এ দলের মেয়র প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন অল্প কয়েক শ’ ভোট পেয়ে। মজার ব্যাপার হলো, এরশাদের প্রতি দুর্বলতা আছেÑ এমন একটি পত্রিকা শুক্রবার প্রথম পৃষ্ঠায় নববর্ষের ওপর এরশাদের লেখা ছাপিয়েছে তার ছবিসহ। আর শেষ পৃষ্ঠায় একেবারে ওপরে তাদের খবরের হেডিংÑ ‘দাঁড়াতেও পারেনি জাপা, দুর্যোগেও জিতল জামায়াত।’ স্মর্তব্য, এরশাদ বেশ কিছুদিন ধরে সভা-সমাবেশে বলে আসছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভোটে জিতে এককভাবেই বাংলাদেশে সরকার গঠন করবে। অনেকে এ ঘোষণার মিল খুঁজে পান ২০২২ সালে বাংলাদেশ ফুটবল টিম বিশ্বকাপে খেলার ঘোষণার সাথে।
এ নির্বাচনে দৃশ্যত আওয়ামী লীগ জিতেছে, বিএনপি হেরেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নেতারা বলছেন তাদের দল জিতেছে, অপরাজনীতি হেরেছে। নিজেরা নিজেদের বাহবা দিলেই হবে না, সবাই গভীরভাবে ভেবে দেখুন, এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিকভাবে যতটা জিতেছে বলে মনে করছে, নৈতিকভাবে কি জয়ী হয়েছে? গত দু-তিন দিনের পত্রিকাগুলো পড়লেই বোঝা যায়, এ নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রেই গণতন্ত্র নয়, বলতন্ত্র (গায়ের জোর) জিতেছে। যারা এটাকে স্বাভাবিক মনে করছেন এবং ‘এমন তো সব নির্বাচনে কমবেশি হয়ে থাকে’ বলে আত্মতৃপ্তি বোধ করছেন, তারা এখনো গণতন্ত্রের মর্ম উপলব্ধি করেননি।
নির্বাচন সত্যিকারভাবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হওয়ার জন্য Level Playing Field জরুরি। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দল এবারো পৌর নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই এ দাবি জানিয়ে এসেছে। বলা বাহুল্য, নির্বাচনী Playing field-কে Level করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু এ জন্য যেসব করণীয় রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে কমিশনের (কর্মসম্পাদন) চেয়ে ‘অমিশন’ বা নিষ্ক্রিয়তাকে ইসি প্রাধান্য দিয়েছে। ফলে যা আশঙ্কা ছিল, তা হয়েছে। পৌর নির্বাচনের মাঠে ক্ষমতাসীন দল ল্যাং মেরে হলেও খেলেছে। Level শব্দটার এক অর্থ সমান করা, আরেক অর্থ চ্যাপ্টা করে ফেলা। আওয়ামী লীগ ছলে-বলে-কৌশলে নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে চ্যাপ্টা করার চেষ্টায় সফল হয়েছে অনেকটা। অতএব, তারা যেমন মাঠ চেয়েছেন, বাস্তবে তেমনটাই করে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ তো বটেই, মিডিয়ার সুবাদে দেশ-বিদেশের সবাই দেখেছেনÑ জেনেছেন। এ দিকে রাজনীতির দু’পক্ষ এবং নির্বাচন কমিশন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কোনো কোনো পত্রিকায় পাশাপাশি এসেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর ইসির মন্তব্য। ক্ষমতাসীন দলের স্বভাবমাফিক এর মুখপাত্র মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, অতীতের চেয়ে বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল এবারের পৌর নির্বাচন। এর বিপরীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেছেন, সন্ত্রাস-সহিংসতা এ নির্বাচনকে ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে। এ দু’য়ের অনেকটা মাঝামাঝি মন্তব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের : পৌরসভা নির্বাচন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ভূখণ্ডে নির্বাচনী অন্যায়-অনিয়ম নতুন নয়। কিন্তু বিশেষ করে আওয়ামী লীগ আমলে এটা ব্যাপকতা ও অভিনবত্বের দিক থেকে নতুন মাত্রা পেয়েছে। এর পাশাপাশি মেরুদণ্ডহীন ইসির শীর্ষব্যক্তিদের কথাবার্তা শুনে কেউ কেউ বিদ্রƒপ করে বলছেনÑ মনে হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক সন্ত্রাসের ঘটনায় কোথাও কারো হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও বলা হবে, ‘এসব নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন এবং ২৮ এপ্রিলের সিটি নির্বাচনের পর ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচন দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত না নড়বড়ে করে দিয়েছে, তা সচেতন মানুষের কাছে স্পষ্ট। অনেকেই বলছেন, কার্যত একদলীয় সংসদের পর একদলীয় স্থানীয় সরকারের পথ সুগম করছে যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া, তাকে কার্যত একদলীয় চরিত্রই দেয়া হয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশের নামের সাথে ‘রিপাবলিক’ বা ‘প্রজাতন্ত্র’ আছে, তাদের বৈশিষ্ট্য সাধারণত গণতান্ত্রিক। বাংলাদেশ শুধু রিপাবলিক নয়, পিপলস রিপাবলিক বা গণপ্রজাতন্ত্র। অর্থাৎ এখানে জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। অথচ আজ জাতি যা কিছু দেখতে বাধ্য হচ্ছে নির্বাচন, সংসদ, স্থানীয় সরকার প্রভৃতি নামে; তা এর অনেকটাই বিপরীত।
বিরোধী দলকে নির্বাচনের পিচ্ছিল মাঠে নামিয়ে আছাড় খাওয়াতে কম চালাকি করা হয়নি। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, চালাকি দ্বারা কোনো মহৎ কাজ হয় না।’ অর্থাৎ চাতুর্যের মাধ্যমে যে কাজ করা হয়, তার উদ্দেশ্য ভালো নয়। এ সরকারের আমলে বিবেকানন্দকে ঘটা করে স্মরণের তোড়জোড় দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাবানেরা তার ওই কথাটি মানেন কি?
এই পৌর নির্বাচনের মান নিয়ে যখন সবাই উদ্বিগ্ন, তখন একটি পর্যবেক্ষণ গ্রুপের সন্তুষ্টিমূলক বক্তব্য থেকে মনে হয়, তারা পরিমাণটা বড় করে দেখেছেন, মান নয়। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংগঠন তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও সরকারের নেক নজরে না থাকায় অনুমতি পায়নি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের। সৌভাগ্যবান যারা এ সুযোগ পেলেন, সরকারের আস্থাভাজন তেমন একটি সংগঠন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ। তারা সাফ উপসংহার টেনেছেন, ‘এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ নয়।’ এ কথা বলে সত্যিই নানা প্রশ্নের উদ্রেক করা হয়েছে। যা হোক, তারা কতগুলো পরিসংখ্যান দিয়েছেন তাদের স্বস্তি ও সান্ত্বনা লাভের সপক্ষে। যেমন প্রথমেই বলা হয়েছে, ৭২ শতাংশ ভোট পড়ার কথা। অথচ অনেক ক্ষেত্রে যে ‘ভুতুড়ে’ ভোট পড়েছে, তা অনস্বীকার্য।
কোথাও কোথাও কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটে সিল মেরেছেন বিশেষ দল বা প্রার্থীর লোকজন। এটাসহ জালভোটের খবর এসেছে মিডিয়ায়। এসব মিলিয়েই ৭২ শতাংশÑ কথাটা মনে রাখা উচিত। এবারে পৌর নির্বাচনের ধরন নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। এসব গুরুতর প্রশ্নের জবাব নেই নির্বাচন কমিশনের কাছেও। ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’ তবুও কী করে বলতে পারে, এই পৌর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলা যাবে না।
ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা এবার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার খবর মিডিয়ায় এসেছে ভোটের কয়েক দিন আগেই। এ দলের নেতাদের স্ত্রীরাও কম যান না। দৈনিক সমকালের একটি খবর : সারিয়াকান্দি (বগুড়া) পৌরসভার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর শাহী সুমনের এজেন্ট হিসেবে হিন্দুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের স্ত্রী। একই কেন্দ্রে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুজ্জামান চুন্নুর এজেন্ট ছিলেন তার স্ত্রী। ভোট গ্রহণ শুরুর পর দু’জন ভোটার কক্ষে প্রবেশ করলে এমপিপতœী তাদের নৌকায় ভোট দিতে বলেন। প্রতিবাদ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রী ও বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এই দু’মহিলার হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
খুব আদর্শনিষ্ঠ কোনো কোনো সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে কোনো পদের নির্ধারিত প্রার্থী নিজেকে নিজে ভোট দিতে পারেন না। এবার পৌর নির্বাচনের একটা খবরে প্রথমে ভাবলাম, এমন আদর্শবাদী লোকও এ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন বুঝি। পত্রিকার শিরোনাম : নিজেকে ভোট দিলেন না কাউন্সিলর প্রার্থী।’ আসল ঘটনা হলোÑ পঞ্চগড় পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের একজন প্রার্থী ছিলেন গরু ব্যবসায়ী আব্দুস ছালাম। ফলাফলে দেখা যায়, তার ভোটপ্রাপ্তি শূন্য। অথচ তার বক্তব্য, ‘নিজেকে ভোট দিয়েও পেলাম না কেন, জানি না।’ তবে তিনি এতেই খুশি। বলেছেন, ‘শূন্য পেয়েছি, এটাই মজা!’ গরু বেপারির বউ আরেক কাঠি ওপরে। এই মহিলা খোলাখুলি বলেছেন, আগেই জানতাম আমরা নির্বাচিত হবো না। নিজের ভোট নষ্ট করিনি। তাই টেবিল ল্যাম্পের প্রতীকে ভোট দিতে গিয়ে দিয়ে এসেছি ডালিম মার্কায়।’
গত পয়লা ডিসেম্বর বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ডহীন বলেছিলেন এর অক্ষমতা ও নতজানু স্বভাবের কারণে। নির্বাচন কমিশনাররা আত্মসান্ত্বনা লাভ করতে পারেন এটা ভেবে যে, ‘আমাদের প্রত্যেকেরই অন্যদের মতো মেরুদণ্ড আছে এবং তা অর্ধেক বা আংশিক নয়, সম্পূর্ণ।’ নিকট অতীতে একজন নির্বাচন কমিশনার তো অফিসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা হয়ে বলেছিলেন, ‘দেখুন, আমার মেরুদণ্ড আছে।’ এসব যে নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে কতটা খেলো করে দেয়, সে ধারণা থাকা উচিত। সত্য কথা হলো, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমলে এ দেশে গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড আগের চেয়ে দুর্বল ও বাঁকা হয়ে গেছে।
গত ৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছিলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ভুল শোধরাতে বিএনপি পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।’ বিএনপির খবর সে দলের নেতারাই ভালো জানেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কী করল? ওই সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের পৌর নির্বাচন করে দলটি আরেকটি বড় ভুল করেছে। ভুলের খেসারত দিতে হয়। ভুল করা হলে বিএনপি শুধু নয়, আওয়ামী লীগকেও অবশ্যই মাশুল গুনতে হবে। যত বড় ভুল, তত বেশি মাশুল।
যাত্রাপালার ‘বিবেক’ চরিত্রের সাথে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের তুলনা করেন কেউ কেউ। তিনি পৌর নির্বাচনের প্রাক্কালে বলেছিলেন, ‘এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারলে আকাশ ভেঙে পড়বে না।’ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যেহেতু এ নির্বাচনে ভালো বা মন্দ ফল করার ওপর সরকার ক্ষমতায় থাকা-না থাকা নির্ভর করছে না, সুতরাং এতে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করবে না। অর্থাৎ, সবাই নিশ্চিত হতে পারেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।’ বাস্তবে কী দেখা গেল? ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’ পণ করে আওয়ামী লীগ ভোটের ফসল জোরজবরদস্তি করে হলেও নৌকায় তুলেছে। তাহলে কি এ নির্বাচনে হারলে তাদের মাথায় আসমান ভেঙে পড়ত?
এক সময় আওয়ামী মহল তদানীন্তন সিইসির নাম বিকৃত করে বলত, ‘আমরা সাদেক আলী মার্কা নির্বাচন চাই না।’ আর এবার নাম অবিকৃত রেখেই বলা যায়, একজন নির্বাচন কমিশনার জাভেদ আলী বলেছিলেন, ‘এই পৌর নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মতোই স্বচ্ছ।’ নির্বাচনের দিন যা ঘটেছে, এসব কর্মকাণ্ড স্বচ্ছভাবে দেখেছে দেশবাসী। তাই যারা নিজেকে নিজে প্রশংসার সনদ দেন, তাদের ভূমিকা সম্পর্কে মন্তব্য না করলেও চলে।
আমাদের নির্বাচন কমিশনের ‘বুদ্ধি’ আছে। তার প্রমাণ, নিরপেক্ষতা তত্ত্ব। বিএনপি সঙ্গত কারণে আগে থেকেই এই কমিশনের তীব্র সমালোচনা করছে। এবার নির্বাচনের প্রাক্কালে দলের অন্যতম নেতা রিজভী আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন অল্প দামে নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বেচে দিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগও শেষ পর্যন্ত তাদের একান্ত অনুগত ও আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল। যেমনÑ হানিফের অভিযোগ ছিল, ‘নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।’ তার এ কথাটি ওয়াকিবহাল মহল ‘উপভোগ’ করেছেন মুচকি হেসে। এ দিকে সিইসি কাজী রকীব বলে বসলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়েই আমাদের সমালোচনা করছে। অতএব আমরা নিরপেক্ষ।’
এই পৌর নির্বাচন কতটুকু সুফল বয়ে আনবে দেশ ও জাতির জন্য? সাবেক সচিব এবং স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ধীরাজ কুমার নাথ লিখেছেন, ‘এ নির্বাচনের সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং পরিসংখ্যানের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ছাড়াও একটি বিষয় অনেকে মনে করেন যে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উন্নীত হওয়ার একটি সুযোগ এবার সৃষ্টি হয়েছিল। দলীয়ভিত্তিক রাজনীতিতে একটি গণতান্ত্রিক মানসিকতায় ফেরত আসার মতো আস্থার স্থান লাভের সুযোগ ছিল। সেই সুযোগের দুয়ারে এবারের দলীয়ভিত্তিক পৌর নির্বাচন জল ঢেলে দিলো কি না তা শুধু ভবিষ্যৎ বলতে পারবে।’
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে না পারলে পৌর নির্বাচনের সুফল মিলবে না বলে মনে করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংগঠন ‘ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমীন খুরশিদ। তিনি বলেছেন, সব দল এবারের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন করায় আমরা আশান্বিত হই। কিন্তু বাস্তবে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। … নৈতিকতার প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রশ্নেও বলা যায়, আমাদের স্খলন ঘটেছে। যেখানে অনৈতিকতা ঘটেছে, তার প্রকাশ ছিল উগ্র, সংখ্যায় তা কম হতে পারে।’ তিনি মনে করেন ভোটের অধিকার খর্ব হলে রাষ্ট্রকে এর দায় বহন করতে হবে। পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের মেয়র আর নির্দলীয় প্রতীকের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় জটিলতার আশঙ্কা করেছেন তিনি।
নির্বাচন তো হয়ে গেল, যারা যেভাবেই হোক জয়ী হয়েছেন, তারা কেমন স্থানীয় সরকার উপহার দেবেন, কতটা সততা-যোগ্যতার পরিচয় দেবেন, তা অনিশ্চিত। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে তারা আন্তরিক হবেন কি না, আমরা জানি না। শুধু কামনা করব, জর্জ বার্নার্ড শ’র একটি কথা বাংলাদেশে সত্য না হোক। কথাটা হচ্ছে, ‘গণতন্ত্র দান করেছে অসংখ্য অযোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচনের ব্যবস্থা।’

পাদটীকা : নির্বাচনে ভালো-মন্দ অনেকেই প্রার্থী হয়ে থাকেন। এবারের নির্বাচনও নয় ব্যতিক্রম। প্রচারণা মিছিলে শোনা যায় ‘…. ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র।’ এসব ফুলের মধ্যে ধুতরা ফুলও থাকে। অনেক প্রার্থী প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভোটারদের ডুবিয়ে নির্বাচনে জিতে শুধু নিজে ভেসে থাকেন। এমন একজন প্রার্থীর কাল্পনিক সাক্ষাৎকার নিয়ে এই চুটকি হয়তো অনেকেই জানেন।
সাংবাদিক : আপনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন কেন? নেতা : আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না, চার দিকে কী ঘটছে? সরকারি লোকেরা আমোদ-প্রমোদে মত্ত; দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে সব। সাংবাদিক : আপনি কি এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন? নেতা : মাথা খারাপ! আমার কি আমোদ-প্রমোদ করতে শখ হয় না?
আল্লাহ তায়ালা যেন এমন প্রার্থীদের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখেন।