পৌর নির্বাচন লোক দেখানো প্রহসন: খালেদা জিয়া

0
459
blank
blank

ঢাকা: আসন্ন পৌর নির্বাচনে সরকার জনপ্রিয়তা দেখাতে চাচ্ছে অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এ নির্বাচন লোক দেখানো প্রহসনের নির্বাচন, যা গত সিটি নির্বাচনেও আপনারা (দেশবাসী) দেখেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। নির্বাচন কমিশন অথর্ব, সরকারের পদলেহী। এই কমিশনের কাছ থেকে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া এসব অভিযোগ করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ অনুদান দেয়া হয়।

বিগত আন্দোলনে গুরুতর আহত ছাত্রদলের শিহাব উদ্দিন, নয়ন বাছার, মো: জামশেদ আলম ও লায়ন আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলকে সুচিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পে নিতে সব ধরনের ষড়যন্ত্র করছে সরকার, এমন তথ্যপ্রমাণ বিএনপির কাছে আছে। ষড়যন্ত্রের নির্বাচন না করে জনপ্রিয়তা প্রমাণে, মতা ছেড়ে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সরকার জবরদখল করে মতায় টিকে আছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, শাসকদলের অত্যাচারে সবাই এখন আতঙ্কে থাকে। গুম, খুন, অত্যাচার বন্ধ না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আপনারা (দেশবাসী) সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখেছেন কী করেছে? এখনো একই অবস্থা। আমাদের লোকজনকে মনোনয়নপত্র পর্যন্ত দাখিল করতে দেয় না। আমাদের লোকজনদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে; যাতে কেউ কাজ করতে না পারে। কারা এর সাথে জড়িত? ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর পুলিশ।
পুলিশ নিজের ভাইবোনদের মারছে : খালেদা জিয়া বলেন, তিন দিন আগে মেহেরপুরে দুইজনকে ক্রসফায়ারে গুলি করে হত্যা করেছে। কিসের ক্রসফায়ার? এগুলো করছে পুলিশ, করছে ছাত্রলীগ।

তিনি আরো বলেন, আমি পুলিশের সবাইকে দোষ দেবো না, খারাপ বলব না। পুলিশও চায় এসব কাজ না করতে। তাদেরকে বাধ্য করানো হয়। কারণ ওরা কাকে মারছে? নিজের দেশের নিজের ভাইবোনদের মারছে! এক দিকে নিজের দেশের মানুষের হাতে মরছে আমাদের ছেলেপেলেরা। আরেক দিকে সীমান্তেও আমাদের জনগণকে হত্যা করা হচ্ছে। কোনো প্রতিবাদ নেই। মেরে ফেললেও তার জন্য যে একটু দোয়া মাহফিল করা, তা পর্যন্ত করতে দেয়া হয় না। নিজের দেশের ছেলেমেয়েকে হত্যা করা বন্ধ করতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
বিদেশীরা বিনিয়োগে ভয় পায় : খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। দেশী-বিদেশী কেউ বিনিয়োগ করছে না। বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। আমাদের ব্যবসায় বাণিজ্য চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। আমাদের গার্মেন্ট শিল্প, শহীদ জিয়া যা শুরু করেছিলেন, আমরা অনেক দূর উঠিয়েছিলাম। সে গার্মেন্ট শিল্প আজ শেষ হতে বসেছে। অতীতে আওয়ামী লীগ মতায় থেকে একবার ধ্বংস করেছিল। এখন আবার পাট শিল্পকে ধ্বংস করছে। টেক্সটাইল ধ্বংস হচ্ছে। বাড়িঘর বিক্রি হচ্ছে না। মানুষের কাছে টাকাই নেই।

দেশবাসীকে জাগতে হবে : বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শিাপ্রতিষ্ঠানে চলছে ছাত্রলীগের দখল, সন্ত্রাসী আর মাস্তানি। দেশবাসীকে বলি জাগুন, আর কত নিজের সন্তান হারাবেন? আর কত নিজের ভাইবোন হারাবেন?
তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগকে বলব, আপনারা শপথ নিয়েছেন নিরপেভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো মানুষ বা অন্য কোনো দল বিচার পায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, কখন দেশবাসী জাগবেন? কখন আপনাদের বিবেক নাড়া দেবে? সাড়া দেবে? আপনারা এগিয়ে আসেন। অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি।

জঙ্গিতে বিশ্বাস করি না: খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ জঙ্গি জঙ্গি বলে বিদেশীদের ভয় দেখানোর জন্য। বলে আওয়ামী লীগ চলে গেলে নাকি এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। কোনো জঙ্গিবাদের উত্থান হবে না। আওয়ামী লীগ থাকলে এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হয় এবং হবে। আওয়ামী লীগ করে এ কাজগুলো। অতীতেও করেছে। একজন জঙ্গিকেও ধরেনি। ওই যে শায়খ আবদুর রহমান থেকে বাংলাভাই যতগুলো ছিল সব আমরা ধরেছি, আমরা বিচার করেছি, আমরা শাস্তি দিয়েছি। খালেদা জিয়া বলেন, কিছু মাদকাসক্ত লোককে ধরে নিয়ে র‌্যাব অনেক দিন রেখে দেয়, তারপর খেতে দেয় না ওদের, চেহারা সুরত এমন বানিয়ে ফেলে, তাদের চুল দাড়ি লম্বা হয়ে গেলে তখন তাদেরকে মানুষের সামনে আনে। কতগুলো হাবিজাবি অস্ত্র সামনে রাখে। সেগুলো সামনে এনে বলে, এই যে জঙ্গি ধরেছি। আসলে তারা নিরীহ।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মো: শাহজাহান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, আফরোজা আব্বাস প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।