‘প্রসঙ্গ‘সাম্প্রতিক ভুমি আইন / ফাহাদ মোহাম্মদ/

0
634
blank

সাম্প্রতিক ভুমি আইন। কথায় আছে, ইউরোপ বাড়ি করার আগে রাস্তা করে, আর বাংলাদেশের আগে বাড়ি করে আর পরে চিপাগলি রাস্তায় কোনো রকম চলাচল করে। “আমার জায়গাজমিতে আমার টাকায় বাড়ি বানাবো তাতে সরকার বাধা দেওয়ার কে?” আপনি যদি এই ধরনের লোকের দলের হয়ে থাকেন তাহলে লেখাটা আপনার জন্য। আমাদের দেশে যেই হারে জনসংখ্যা বাড়তেছে সেই একই হারে বা তার থেকে বেশি হারে চাষ যোগ্য জমি কমতেছে। এই চাষযোগ্য জমি যাতে আর কমে না যায় তার জন্যই সরকার এই আইনটি চালু করেছে। আমার মতে এই আইনটি আরো ২০ বছর আগে করা উচিৎ ছিলো। তাহলে আমাদের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এতটা হ্রাস পেত না। করিম সাহেব আর রহিম সাহেব ইচ্ছে করলেই ১০ বিঘা আমন জমির উপর রাজকীয় বাড়ি বানাতে পারতেন না। কিংবা আপনার জমিতে আপনি বাড়ি বানালেন আর আমার পাশের জমিটা ধীরেধীরে অনাবাদী জমিতে রুপান্তরিত হল, সেটাও হত না। যে জমিটা আপনার সম্পদ সেটা হয়ত আপনি ইচ্ছা করলেই যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন না। যে জমিটা আপনার সেটা রাষ্টেরও। সুতারাং আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আমাদের দেশে একটা বাজে প্রবণতা হলো, ফসলি জমিতে রাজকীয় বাড়ি তৈরি করা। সিলেট অঞ্চলে দেখেছি ১০০ একরের বাড়িও আছে। এই বৃহদায়তন বাড়ির কি দরকার ছিল? শুধু মাত্র নিজের সখ মেটানোর জন্য রাষ্ট্রের আবাদযোগ্য জমি ধংশ করে আপনি আমোদ করতে পারেন না। এই, আইনের যারা বিরোধিতা করতেছেন তাদের একটা অংশ সরকারের বিরোধিতা করতে হবে তাই করতেছেন। আরেকটা অংশ বলতেছেন আমার জায়গায় আমি যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে সরকারের কি? অন্য অংশ বলিতেছেন সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষের আরেকটা রাস্তা তৈরির জন্যই এই আইন। প্রথম দুই দলের লোকের যুক্তিটা কেবল আহাম্মকি ছাড়া কিছু না। কারণ এই দলের লোকেরা কখনই ভালো কিছু মেনে নিতে পারে না। তাদের বেশিরভাগেরই ভিটেমাটি ছাড়া অন্য কোনো জমি নাই। যদি ভবিষ্যতে হয় তাহলে ভিন্ন কথা। এই ত্যানা পেছাইন্না মস্তিষ্কহীন জীবেরা কোন কাজ কাম করে না শুধু আকাইম্মা যুক্তি দাড় করাবে। তৃতীয় যে দল আছে তাদের যুক্তিটা যথার্থ। কারণ এই দেশের মেতর থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতির সাথে জড়িত। সেটা যে অস্বীকার করবে আমি তার সাথে একমত হতে পারবো না। যদিও অনেক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এখনো সৎভাবে জীবন যাপন করেন। সরকারের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারির কারণে সরকারের অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারের অনেক উন্নয়নকাজ দুর্নীতির জন্য আলোর মুখ দেখতে পারে না। যারা মনে করেন এই নতুন ভূমি আইনও সেই সকল দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারির জন্য জনগণ হয়রানির শিকার হবে তাদের আশঙ্কা হেসে ফেলে দেওয়ার মত না। কিছু লোক দালালি করবে। কিছু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে জমির ধরণ পাল্টে দিবে। তাই যাতে দেশের সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার না হয় তার নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে। সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ যুগোপযোগী আইন তৈরি করে দেশের আবাদযোগ্য জমি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।