ফেব্রুয়ারীতেই সাজা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার !

0
557
blank

মাহমুদা ডলি, ঢাকা:
ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় হচ্ছে। এ মামলায় খালেদা জিয়ার ১২ থেকে ১৪ বছর সাজার আদেশ হতে পারে। কয়েকটি র্সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‌‌’অযোগ্য’ ঘোষনার জন্যই এ রায় হচ্ছে বলেও একাধিক সূত্র এ তথ্য জানায়। অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, এই মালিাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পিত।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির এ মামলা নিয়ে দেশ -বিদেশেও রয়েছে প্রতিক্রিয়া। মামলাটি শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও আইনজীবরীরা মতামত দিয়েছেন।
এক দিকে তড়িঘড়ি করে রায় দেয়া অরপরদিকে খালেদা জিয়াকে চরম হয়রানীর জন্য সপ্তাহে ৩/৪দিনও হাজিরা দিতে হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে গত মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী রবিবারও আদালতে হাজিরার দিন আছে। গত সপ্তাহেও তিন দিন আদালতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। বেশ কিছু দিন ধরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন তাকে এই আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্রের মামলা মিথ্যা ও কল্পিত : ‌‌যে নথি-পত্রের উপর ভিত্তি করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পিত’। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে এমন কথা বলেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ জাল নথি তৈরি করেছেন, আর এই জাল নথির সপক্ষে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন হারুন অর রশিদসহ ৫ সাক্ষী।
তিনি বলেন , ‌‌রুলস অব বিজনেস মেনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিটি ডকুমেন্ট নিয়ম অনুযায়ী স্বাক্ষর ও সংরক্ষিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিরাপত্তা কি এতোই দুর্বল যে সেখানকার ডকুমেন্ট অন্য দফতরে যাবে। অথচ সেই দফতরের কর্মকর্তারা কিছুই বলতে পারবে না। এখানে যে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হয়েছে তা ব্যতিক্রম। এখানে ঘষামাজা আছে। একটি চেকেও কোনো স্বাক্ষর নেই।

নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন আবারও একতরফা করতে যড়যন্ত্র ও অপচেষ্টার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার আরও ১৪ মামলা বকশীবাজারে স্থানান্তর করা হয়েছে। নতুন মামলাগুলো বকশীবাজারে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য হলো তাকে প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে রাখা এবং অবিরামভাবে হেনস্তা করা। এটা কারো বুঝতে বাকি নেই যে, বছরজুড়ে উনাকে আদালতে ব্যস্ত রেখে আন্দোলন ও নির্বাচনী জনসংযোগ থেকে বিরত রাখার চক্রান্ত করছে সরকার। চেয়ারপারসনকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে এসব করে শেষ পরিণতি সরকারের জন্য ভালো হবে না।
খালেদা জিয়ার মামলার অভিযোগ প্রমানিত হয়নি:
মামলার শুনানীতে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে তিনি দেখেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই দুর্নীতি দমন কমিশন প্রমাণ করতে পারেনি। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারলে এর সুবিধা পাবেন আসামি।

খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী তাঁ বক্তব্যে বারবারই আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কথা আদালতকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি এক এগারোকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ওই সময় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত করতে মামলা দেওয়া হয়েছে। এখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা আছে।

খালেদার রাজনৈতিক জীবন ধ্বংসের জন্য মিথ্যা মামলা করা হয়েছে দাবি করেন তিনি। গতকাল যুক্তিতর্কের শুনানির সময় বারবার তিনি সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের প্রসঙ্গ তোলেন। আদালতকে তিনি বলেন, মাইনাস টু থিওরির অংশ হিসেবে খালেদার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে দুদক। অনেক কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মইন উ আহমেদকে বিএনপির সরকারই সেনাপ্রধান করেছিলেন বলেও আদালতকে জানান প্রবীণ এই আইনজীবী।

মামলাটি যে এখন চলছে এটাই অস্বাভাবিক :

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন,‌‌‌‌” বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি প্রথম দিনেই খারিজ করে দেওয়া উচিত ছিল। মামলাটি যে এখন চলছে এটাই অস্বাভাবিক।‘এটা আইনানুগ হয়নি’ দাবি করে তিনি বলেন, শাসক দলের দ্বারা বিরোধী রাজনীতিকরা সব সময় নির্যাতিত হয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে শুরু করে আমরাও জেল খেটেছি। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠাতে পারবেন কিন্তু এতে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে যাবে না। বরং আমি বলতে পারি খালেদা জিয়ায় হচ্ছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।”

কে এই দুদক কর্মকর্তা হারুন : আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি নিজেকে ‘বৃহত্তর ফরিদপুরের লোক’ বলেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। আর এ কারণেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি’ সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা তিনি। অতি উৎসাহী হয়েই তিনি মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব নেন বলে জানা গেছে। এ হেন দুদক কর্মকর্তা সহকারি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলা দায়ের করেন। এতে তিনিসহ অন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। একই ধারাবাহিকতায় সরকার অনুগত হারুন অর রশিদ ২০১০ সালের ৮ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করেন আরেকটি মামলা। যা ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা’ হিসেবে পরিচিত। এতে বেগম খালেদা জিয়া ও অন্যদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ আনেন। মামলা দুটি পরে হারুন অর রশিদকেই তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। যদিও তাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের কোনো গেজেট জারি করেনি দুদক। মামলা দুটির ‘বিচার কার্যক্রম’ চলছে।

২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক এ মামলা করে। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলায় শুরু থেকে পলাতক আছেন।