অতিথি প্রতিবেদক: এক সময়ে ডেটিংয়ের জায়গা হিসেবে পরিচিত জায়গার নাম হিসেবে প্রথমেই আসতো পার্কের নাম। বাদাম, বুট, ঝাল মুড়ি খেয়েই সময় পার করত প্রেমিক জুটি। তবে ইদানীং অনেক প্রেমিক জুটির ফ্ল্যাটমুখী ডেটিংয়ে আগ্রহ বেড়েছে। বিনোদন স্পট বা ডেটিং স্পটগুলোতে বেড়েছে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়েছে।
নিরাপত্তাকর্মীদের হয়রানি ও লোকলজ্জা থেকে আড়াল থাকতে অনেক প্রেমিক জুটি এমনটাই করছে বলে দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে ইন্টারনেটের ভয়াবহতা ও মাদকের ভয়াল ছোবলের কারণেই তরুণ-তরুণীরা এমন পথ বেঁছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।
দৈনিক মানবজমিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অনুফা ও রিয়াদ (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকে তাদের মধ্যে পরিচয় ও সখ্য গড়ে ওঠে। দু’জনই অভিজাত ঘরের সন্তান। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঘুরে বেড়াতেন পার্কে, রিসোর্টে ও রেস্তরাঁয়। তাদের বন্ধুরাও অনেকেই বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডা দিত। তাদেরই এক বন্ধু তার বান্ধবীকে নিয়ে প্রায়ই উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করত। কাটতো বেশ অন্তরঙ্গ মুহূর্ত। সে তার অন্য বন্ধুদের খুব মজা করে এসব কথা শেয়ার করতো। তাই রিয়াদেরও ইচ্ছে হয় অনুফাকে নিয়ে ফ্ল্যাট ডেটিংয়ের। বন্ধুর সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে রিয়াদ তখন অনুফাকে রাজি করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। অনেকটা জোর করেই তাকে রাজি করায় রিয়াদ। বন্ধুর সেই চেনা ফ্ল্যাটে একদিন হয়ে যায় রিয়াদ আর অনুফার ডেটিং। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই যাওয়া হয় তাদের। শুধু অনুফা, রিয়াদ আর তার বান্ধবী নয় ফ্ল্যাটমুখী ডেটিংয়ে ঝুঁকছে আরো অনেকেই। আর এই প্রেমিক জুটিদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিয়ে অনেকেই কামাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে নিজেদের অনুসন্ধানের চিত্রও তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমটি। সেই অনুসন্ধানের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর অনেক এলাকাতেই এখন ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক ডেটিং হয়। ঘণ্টা অথবা দিন চুক্তিতে এসব ফ্ল্যাটের কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায়। রাজধানীর শাহজাহানপুর, বাসাবো, মালিবাগ, বনশ্রী, রামপুরা, মিরপুর, উত্তরা, শেওড়া, কাজিপাড়া, সেগুনবাগিচা, পান্থপথ, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, রাজাবাজার, তেজকুনিপাড়া, মগবাজার, কালশি, গুলশান-বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে এ ধরনের ডেটিং।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন এলাকার এসব ফ্ল্যাটে একজন নিয়ন্ত্রণকারী থাকেন। তার আবার শহরের বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা নেটওয়ার্ক থাকে। বিভিন্ন মার্কেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তারা একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে মোবাইল নম্বর প্রচার করে।
সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে মামুন হোসাইন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়। তিনি উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটের প্রচারণা ও গেস্ট সংগ্রহের কাজ করেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
মানবজমিনকে মামুন বলেন, আমরা মূলত দুই ধরনের ব্যবসা করে থাকি। প্রথমত, যারা বান্ধবী নিয়ে ডেটিং করার স্থান খোঁজে পায় না তাদেরকে আমরা টাকার বিনিময়ে সার্ভিস দিয়ে থাকি। এর বাইরে আমাদের কাছে কিছু নারী আছে। কেউ চাইলে সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিই।
মামুন আরও বলেন, শুধু ফ্ল্যাট ডেটিং করতে হলে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। পুরো দিন থাকলে ২ হাজার আর ঘণ্টা হিসাবে থাকলে ৫০০ টাকা করে লাগে। নিয়মিত যারা আসে তাদের বেলায় কিছুটা ছাড় দেয়া হয়।
ফ্ল্যাটমুখী ডেটিংয়ের খারাপ প্রভাবও সম্পর্কে জানাতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ফ্ল্যাট ডেটিংয়ে তরুণীদের ঝুঁকি বেশি। কারণ, অনেক সময় প্রেমিকের কথা রাখার জন্য ফ্ল্যাট ডেটিংয়ে রাজি হয় অনেক তরুণী। তার শেষটা অনেক সময় সুখকর হয় না। প্রেমিকের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক তরুণী সর্বস্ব খোয়াচ্ছে।
এসময় একজনের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমটি। শান্তনা (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী জানান, প্রেমের প্রথম কয়েক বছর বেশ ভালোই কেটেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এই চার বছরে দু’জন আলাদা থাকলেও পরিচিত অনেক ফ্ল্যাটে গিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছেন একাধিকবার। শান্তনার পরিবার থেকে বিয়ের কথা উঠলে সে চাপ দিতে থাকে সোহানকে। কিন্তু সোহান বিষয়টি আমলে না নিয়ে শান্তনার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে। একসময় শান্তনার সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। উপায়ান্তর না পেয়ে শান্তনা তার পরিবারকে জানায়। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে সোহানের সঙ্গে আলোচনা করলে সে শান্তনাকে বিয়ে করতে অপারগতা দেখায়।
এমন ঘটনা থেকে পরিত্রাণের জন্য সমাজবিজ্ঞানীরা নৈতিকতার চর্চার পাশাপাশি ইন্টারনেটের ভয়াবহতা ও মাদকের ছোবল থেকে তরুণ-তরুণীদের মুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: শিব্বির আহমদ ওসমানী [এমএ, এলএলবি (অনার্স), এলএলএম] যোগাযোগ: বনকলাপাড়া রোড, সুবিদবাজার, সিলেট- ৩১০০। ই-মেইল: damarbangla@gmail.com ফোন: ৭১৪২৭১, মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৪৪৫৭৭৯২ www.dailyamarbangla.comCopyright © 2024 Daily Amar Bangla. All rights reserved.