বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ

0
862
blank
blank

বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট তার কক্ষপথে পৌঁছেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানোর কাজ করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স। তাদের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে বঙ্গবন্ধু-১ যাত্রা শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ উৎক্ষেপণ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধন ঘোষণার পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে কারিগরি ত্রুটির কারণে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। একাধিকবার সময় পরিবর্তনের পর সব প্রক্রিয়া শেষে শেষ মিনিটের ১৫ সেকেন্ড বাকি থাকার সময় স্পেসএক্সের ক্ষণগননার মেশিন থমকে যায়। অর্থাৎ, রকেটের যাত্রা (স্টার্টআপ মোড) শুরু হওয়ার সময়েই তা বন্ধ হয়ে যায়।

উৎক্ষেপণের পরে মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রকেট ফ্যালকন-৯ মহাকাশে পৌঁছে যায় এবং তা নির্ধারিত প্যাডে ফেরত আসে। ৩৩ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ দ্রাঘিমাংশে অবস্থান নিচ্ছে।

এ কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে।

বাংলাদেশের গাজীপুর থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে তৈরি করা হয়েছে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন। অন্যদিকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাঙামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন।

ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে। স্যাটেলাইট তৈরির কাজ শেষে গত ৩০ মার্চ এটি উৎক্ষেপণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাঠানো হয়। দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ ঋণ দিয়েছে এইচএসবিসি ব্যাংক।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তত্ত্বাবধানে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।  দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে ব্যবহার করা যাবে।

উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ৩০ সদস্যের বাংলাদেশের দলের নেতা তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও ইমরান আহমেদ, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. জিয়াউদ্দিন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসানসহ সহস্রাধিক বাংলাদেশি।